HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন

অবশেষে চা শ্রমিকদের দাবি কিছুটা প্রতিষ্ঠিত হলো

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ৪৩১
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২

জহিরুল ইসলাম শাহিনঃ কৃষকের দেশ বাংলাদেশ। শ্রমিকের দেশ বাংলাদেশ। দুস্থ, আতুর, দরিদ্র, ছিন্নমুকুল, অসহায় এবং ভূমিহীনদের দেশ বাংলাদেশ। মুক্তি যোদ্ধাদের দেশ বাংলাদেশ। দেশ প্রেম আছে যার ভেতর তার দেশ বাংলাদেশ। সুতরাং স্বপ্নের বাংলাদেশে আজকের অধিকার ও দাবি সবার সমান। একজন শ্রমিক যে সারাদিন পরিশ্রম করে তার ন্যায্য দাবি প্রতিষ্টিত করতে পারছেনা, তার অধিকার দেওয়া হচ্ছে না স্বাভাবিক ভাবে বেচে থাকার। পারিশ্রমিক যে টুকু পায় তাও যথা সময়ে পরিশোধ করা হয় না। কৃষক শ্রমিক সর্বহারার দেশে যদি আজ আন্দোলন করতে হয়, সমাবেশ করতে হয় তাহলে আর কোন পথ থাকে না। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে বেশ সমৃদ্ধশালী। বিভিন্ন দেশে গার্মেন্টস শিল্প রপ্তানীর ক্ষেতে বাংলাদেশ ও শীর্য তালিকায় আছে। অপর দিকে বাংলাদেশ আরেক টি শিল্পে বেশ উন্নত সেটা হচ্ছে চা শিল্প। এই শিল্প খাত থেকে ও বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। বাংলাদেশের এই দুটো শিল্পের-ই বিশে^ বেশ নাম আছে। আর এই দুই শিল্পে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে, গায়ের ঘামে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে এবং শ্রমিদের শ্রমের মাধ্যমেই মালিকেরা আজ বিপুল অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে, তাহলে কেন তাদের ন্যায্য-হিস্যা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। কেন দিনের পর দিন, মৌলভী বাজারের, হবি গজ্ঞের বা সিলেটের রাজ পথে দাঁড়িয়ে মানব বন্ধন, পথ সভা বা মালিকেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। মালিকদের তো বাঁচিয়ে রেখেছে শ্রমিকেরা। গার্মেন্স শিল্পের ক্ষেত্রে ও ঐ একই চিত্র, ঢাকার রাজপথ, কুমিল্লার রাজপথ চট্রগ্রামের রাজপথ ও মাসে মাসে শ্রমিকেরা দখলে নেয় মালিকদের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার জন্য। প্রত্যেক টা শ্রমের মূল্য দিতে হবে। শ্রমের গুরুত্ব বা মর্যাদা অপরিসীমা। যে ব্যক্তি রিক্সাচালায় বিভিন্ন শহরে, সে ব্যক্তি শহরের জনগণের সেবা দিচ্ছে, যে ব্যক্তি ভ্যানে করে মাল পরিবহন করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পৌছে দিচ্ছে, সে তো শহরের জনগণের সেবা প্রদান করছে। যে কৃষক বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করছে এবং আমাদের দুয়ারে দুয়ারে পৌছে দিচ্ছে, শুধু তাই নয় ভালো ভালো, টাটকা বিশুদ্ধ, দেখতে ও সুন্দর তারা না খেয়ে বড় বড় শহরে কর্মকর্তা, ধনীক শ্রেণীর মানুষের জন্য পৌছে দিচ্ছে, তাদের কে আমরা সমাজে খাটো করবো না মর্যাদার আসনে বসাবো? আজ তারা সবই এদেশের জনগনের জন্য করছে। তাহলে আমাদের অবশ্যই উচিত তাদের কে উৎসাহিত করা, অনুপ্রাণিত করা, একটু ভালো বাসা, একটু সম্মান করা এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। ভাবতেও অবাক লাগে তারা দিনে না কি মাত্র ১২০ টাকা করে পারিশ্রমিক পায় চা বাগানে বা গার্মেন্টসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাদের মিছিলে, শ্লোগানে একথা শুনে সত্যিই অবাক হলাম, অবাক হবার বিষয়। শহরে মাত্র অল্প টাকায় যে টাকায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২ কেজি চাউল কেনা যায় না, সেই কটা টাকা দিয়ে কিভাবে তারা দিনের পর দিন সংসার জীবন অতিবাহিত করবে। এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এত বড় নিষ্ঠুর, নির্দয়, অমানবিক হওয়া মালিকদের পক্ষে সাজে না। টেলিভিশনের পর্দায় বেশ কয়েকদিন ধরে আমরা তাদের সমাবেশ, শ্লোগান, দাবি-দাবার কথা এবং মিছিল করতে দেখছি, তাদের মুখের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তাদের পরিধানের পোশাকের দিকে তাকালে অনুভব করা যায় আসলে তারা কত বড় গরীব বা অসহায়, আমার মনে হয় মাসে একদিনও তারা সামান্য মাংস বা একটু ভালো দামী মাছ খেতে ইচ্ছে জাগলে ও কিনতে পারেনা, খেতে পারে না কারণ সব কিছুই তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তাই গার্মেন্টন্স শিল্পের, চা শিল্পের মালিকের কাছে আমরা অনুরোধ করি ওদের ন্যায্য দাবি ফিরিয়ে দিন, ওদের সন্তানদের মুখে হাসি ফুটানোর নৈতিক দায়িত্ব আপনাদের। দিনে অন্তত একটা শ্রমিক পক্ষে ৩০০ (তিনশত) টাকা পারিশ্রমিক পেলে হয়তোবা কিছুটা স্বাচ্ছন্দে দিন অতিবাহিত করতে পারবে। আরেকটি কথা শ্রমিকরা খুবই প্রভুভক্ত হয়। মালিকদের তারা প্রভুর মতোই মনে রাখে। আমি অনেক বাস শ্রমিক, ট্রাক শ্রমিক এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের মুখে বলতে শুনেছি। মূলত মালিকেরা তো আমাদের অনেক ভালবাসে। সুতরাং দেখেন, একজন শ্রমিক আপনাকে যতটুকু আশা করে তার চাইতে সম্মান শ্রদ্ধা বেশী করে, আপনাদের স্ত্রী দের সন্তানদের কে ও খুবই শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে। মাসে মাসে দাওয়াত করে সর্বোচ্চ ভাল খাবার টা আপনাদের খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা করে। আর সেই শ্রমিকদের পেটে লাথি মারা কি ঠিক হবে? তাদের দাবি, অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কি ঠিক হবে? সামান্য রুটি রুজির উপর ওঠা কি ঠিক? স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে আজ তারা আপনাদের মিল-কারখানায় নির্বিঘেœ, নির্দ্বিধায় স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটাই তো আমাদের সকলের আশা, শ্রমিকদের সঠিক মূল্যায়ন করুন। মর্যাদা ও সম্মানের আসনে বসান। আজ দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য তারাই মূলত অংশীদার, দাবীদার। নারী পুরুষ উভয় মিলে যদি অমানষিক পরিশ্রম না করতো, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে কি আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম তাদের কল্যাণে, তাদের পরিশ্রমে তাদের সুন্দর ও দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে কাজের মূল্যায়নে আপনাদের কলকারখানায় শিল্প আজ বিদেশে এতটা চাহিদা। তাই আজকে একটু ভেবে দেখেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শ্রমিক নিচ্ছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিশ্ব বাজারে আজ খুব মূল্য কারণ তারা নিঃস¦ার্থভাবে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে বিদেশে তাদের মালিকদের বাঁচিয়ে রেখেছে। পরিসংখ্যান এ কথায় বলে, আজ মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, আবুধাবী, গণচীন, ইংল্যান্ড, ইটালী, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে অধিক পরিমাণ শ্রমিক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং নিচ্ছে। মহামারী করোনার কালেও বিদেশ থেকে প্রতি বছর রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে যার ফলে আমাদের দেশের ব্যাংক গুলো যথেষ্ট লাভবান হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জননেত্রী, গণতন্ত্রের দিক নির্দেশক শেখ হাসিনাকে প্রাণ ঢালা অভিনন্দন জানাই, আজ তার কল্যাণে তার অবদানে, তার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে শ্রমিকেরা ঘরে ফিরে গেছে এবং ঐ ১২০ টাকায় পারিশ্রমিকে কাজ করছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন শ্রমিকদের মুজুরী বাড়ানো হবে। বেচে থাকা তাদের অধিকার। নায্য দাবি আদায় করা এটাও তাদের অধিকার। চা শিল্পের মালিকদের সংগে বৈঠক করেই শ্রমিকদের প্রতি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গতকাল তিনি নিয়েছেন এবং গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জনগণের কান্ডারী মালিকদের সাথে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত ১৭০ টাকা তাদের পারিশ্রমিক ভাতা নির্ধারন করেছেন। যদিও এটা একটু বাড়াতে পারলে শ্রমিক পরিবারের জন্য আরও ভালো হতো। এটা সত্যিই শ্রমিকদের জন্য আনন্দের সংবাদ। আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং সাহসিকতায় বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থাৎ বিশেষ করে পুজিবাদী দেশ গুলোতে আমাদের দেশের শ্রমিকদের জন্য শ্রম বাজার সৃষ্টি করতে পেরেছেন, এজন্য তাকে আমরা আরও একবার ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে যে ভূমিকা তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে রেখেছেন সেটা বিগত কোন সরকারের শাসনামলে সম্ভব হয় নাই। বরং দেখা গেছে বিদেশ থেকে আমাদের শ্রমিকদের ফেরত আসতে হয়েছে। জাতিসংঘে আই,এম,এফ এ, ইউনিসেফ এ, ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের ভাব মূর্তি বর্তমানে এতটাই উজ্জল যে বর্তমান বিশ্বের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের ভাব মূর্তি অনেকটা উজ্জল। সাম্প্রতিককালে জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা গেছে খাদ্যে বাংলাদেশ অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে এবং কক্সবাজারে একটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাপান সরকারের সাথে আলোচনা চলছে। তাই এই মুহুর্তে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেকটা উজ্জল। এই বিরাট সাফল্যের পেছনে শ্রমিকদের অবদানকে খাটো করে দেখা যাবে না। আমরা শ্রদ্ধার সাথে দেখার চেষ্টা করি। তাই যারা সত্যিকার অর্থেই জীবনে সম্মান পেয়েছেন তারা এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, শ্রমিকরা কঠোর কষ্টের ভেতর দিয়ে দেশকে মুক্তির সন্ধান দেয়। তাই আসুন সকলে মিলে শ্রমিকদের পাশে দাড়াই, উন্নয়নের ক্ষেত্রে, উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারাই বড় অস্ত্র। সুতারং বাংলাদেশের শ্রমিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। পৃথিবীতে শ্রমিকরা সাধ্যমত পরিশ্রম করে আমরাও পরিশ্রম করি। যে যে কর্ম করে তাতে শ্রম দিতে হয়। সভ্যতার এ চরম বিকাশের মূলে আছে যুগযুগান্তরের লক্ষ কোটি মানুষের অফুরন্ত শ্রম। বহু মানুষ তাদের বহুদিনের শ্রম তিলে তিলে দান করে গড়ে তুলেছে সভ্যতার এই অনবদ্য তিলোত্তমা মূর্তি। তাদের নাম ইতিহাসে লেখা নেই। সকলের পরিশ্রম বা শ্রমের যৌথ প্রয়াসে সম্ভব হয়েছে সভ্যতার এ অনবদ্য বিকাশ। সভ্যতা মানুষের শ্রমেরই সম্মিলিত যোগফল, মনে রাখা উচিত সকলের বিশ্ব পিতার মহা কারবার, এই দিন দুনিয়াটা মানুষই তার মহা মূল্যবান, কর্ম তার খাটা।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ