HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০ অপরাহ্ন

আমাদের সাতক্ষীরা জেলা উন্নয়নে অনেকটা অবহেলিত

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ১২৮
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪

আশির দশকের পূর্বে বাংলাদেশে জেলা ছিল মোট ২২ টা। সাতক্ষীরা ছিল মহাকুমা। ১৯৮২ সালে সাবেক প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মোঃ এরশাদ ক্ষমতা হাতে নিলে তিনি একদিকে সেনা প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, ১৯৮৩ সালের দিকে প্রশাসন বিকেন্দ্রীয়করনের দিকে গুরুত্ব আরোপ করেন যার ফলশ্রæতিতে সমগ্র দেশে মোট ৬৪টা জেলা সৃষ্টি করেন। সুতরাং খুলনা জেলা থেকে সাতক্ষীরা মহাকুমা আলাদা একটি স্বাধীন জেলা হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে এবং সমগ্রদেশে প্রত্যেকটা থানা উপজেলায় রূপান্তরিত করেন। এভাবে ৪৭৬ টা উপজেলা গঠিত হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা জোনকে সাতটা উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। এবং বিএনপির শাসনামলে কলারোয়া উপজেলায় কলারোয়া পৌরসভা এবং তালা থেকে পাটকেলঘাটাকে আলাদা একটি থানায় রূপান্তরিত করা হয়। এই হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলার মূলত অবস্থান। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৬৪টা জেলা আছে। আমি যতদুর বুঝি বা ভাবি তার ভেতরে আমার কাছে মনে হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা সব চাইতে অনুন্নত এবং অবহেলিত। এর পেছনে বেশ কিছু কারন আছে। স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতা উত্তর যতগুলো সরকার ক্ষমতায় আসছে তার ভেতরে বেশী সময় জামায়াত পন্থী ও জাতীয় পার্টি পন্থী সাংসদরাই বেশী ছিলেন এবং মন্ত্রী তেমন চোখে ধরা পড়ে না। তবে ৮০র দশকে বিএনপি থেকে বস্ত্রমন্ত্রী আফতাবুজ্জামান যিনি সাতক্ষীরা টেক্সটাইল মিল নির্মানে মোটামুটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এর পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি থেকে সাতক্ষীরা-০১ থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সৈয়দ দিদার বখত দায়িত্ব পালন করেন তিনি কলারোয়া কলেজকে কলারোয়া সরকারী কলেজ এবং তালা কলেজকে তালা সরকারী কলেজ ও তালা হাইস্কুলকে তালা সরকারী হাইস্কুল হিসেবে উন্নীত করতে বেশ সহযোগিতা করেন। এরপর সেনা শাসিত তত্বাবধায়ক সরকার অবৈধভাবে দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী বড় রাজনৈতিক দল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয় এবং অদ্যবধি তারা ক্ষমতায় আছে। এর ভেতরে সাতক্ষীরাতে মাত্র একজন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি হচ্ছেন আ.ফ.ম রুহুল হক যিনি সাতক্ষীরার কিছুটা উন্নয়ন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ করার মত সাতক্ষীরা সরকারী মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল এবং পুরাতন হাসপাতালটা কিছুটা সংস্কার করেছেন। অন্যান্য এমপিগণ কিছু কিছু রাস্তা এবং বিভিন্ন উপজেলায় কিছু কিছু স্কুল কলেজে ও মাদ্রাসায় বিল্ডিং দিয়েছেন। এর বাইরে চোখে পড়ার মত আর কিছুই তেমন দেখিনা। অথছ বর্তমান সরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশে^ রোল মডেল। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ। উনি অনেকটা এগিয়ে গেছেন তাতে সন্দেহ নেই। খাদ্য ঘাটতি অনেকটা পূরন হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসতে শুরু করেছে। তথ্য প্রযুক্তিতে বিশে^র অনেক উন্নত দেশের চাইতে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেও বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটা পূরন হয়েছে। গার্মেন্টস শিল্প, মৎস শিল্প এবং কৃষিতে ও অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এক কথায় বলা যায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগিয়ে গেছে এবং এ মুহুর্তে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা যদি ঢাকা শহরে প্রবেশ করি বাংলাদেশ যে দরিদ্র না তা বুঝা যায়। এভাবে চট্টগ্রাম শহর, রাজশাহী শহর, খুলনা শহর, সিলেট শহর, ময়মনসিংহ শহর, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া শহর সহ অনেক পৌরসভা, উপজেলা এমনকি বাংলাদেশে অনেক ইউনিয়ন ও উন্নত হয়েছে শিক্ষা সহ সকল দিক থেকে। আমার মতে আমাদের সাতক্ষীরা জেলা- বাংলাদেশের অনেক পৌরসভা ও উপজেলা থেকে উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। যেমন শিক্ষার ক্ষেত্রে- সাতক্ষীরা জেলায় কোন সরকারী বা বেসরকারী বিশ^ বিদ্যালয় নেই। কোন প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় নেই। সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের বাইরে এখনও পর্যন্ত নামকরা বড় কলেজ সাতক্ষীরা শহরে বা জেলার কোন উপজেলায় নেই। রাস্তাঘাট তেমন একটা উন্নত না। দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের একমাত্র জেলা যা ভারতের পশ্চিম বাংলার সাথে সংযুক্ত এবং নামকরা স্থল বন্দর আছে যেখানে প্রতিদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাসপোর্ট ধারী জনগন এবং পরিবহনে বিভিন্ন মালামাল প্রতি নিয়ত পশ্চিম বাংলায় প্রবেশ করে ঠিক তেমনি ইন্ডিয়া থেকেও পর্যাপ্ত মালামাল কৃষিজ ও শিল্পে ব্যবহৃত প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সুতরাং চারলেন, ছয়লেন রাস্তা নির্মান জরুরী। যে হাইওয়ে রোড সাতক্ষীরা থেকে যশোর এবং সাতক্ষীরা থেকে খুলনায় যাতায়াতের জন্য বা পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় তা দুই লেন চলাচলে খুব একটা উপযোগী নয়। যেহেতু সাতক্ষীরা শহরটি বা জেলা বাংলাদেশের উত্তর পূর্বে ও দক্ষিণ অঞ্চলের সংগে সম্পৃক্ত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাতক্ষীরাতে আসে এবং সাতক্ষীরা থেকে ও হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বিদেশেও যাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও তরান্বিত করার জন্য এবং গতিশীল করার জন্য সাতক্ষীরাতে এ মুহুর্তে প্রয়োজন একটি ট্রেন লাইন এবং অত্যাধুনিক বিমান বন্দর। এর অন্যতম একটা কারনও আছে ভারতের সাথে সাতক্ষীরার এবং যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দর অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের খুলনাতে যাওয়ার বা যশোর যাওয়ার দুটি রাস্তায় অনুপযোগী। প্রায় সময় কদমতলা, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ঝাউডাঙ্গা বাজার, বাগআচাড়া বাজার, পাটকেলঘাটা বাজার, চুকনগর বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে যানজট লেগেই থাকে যেটা জনগনের কাছে খুবই বিরক্তিকর। সরকার সাতক্ষীরা থেকে অনেক রাজস্ব পায়, বিনিময়ে আমরা কিছুই পাই না। সাতক্ষীরাতে নেই কি! যদি আমরা খাদ্য শস্যের কথা বলি, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা, সাতক্ষীরা সদরে, তালার পাটকেলঘাটা থানায় এবং আশাশুনি ও দেবহাটা খাদ্য শস্য উৎপাদনে আমরা মনে করি শীর্ষে। যে পরিমান পাট, ধান, শাক, সবজি, আখ চাষ হয় সেটা চোখে না দেখলে বিশ^াস হবে না। বিভিন্ন ধরনের ফলমূল আমি মনে করি সাতক্ষীরাতে বেশী হয়। এ দেশে যত নামকরা আম, কাঁঠাল, জাম, লেবু, কলাই এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বিদেশে ও এই ফলমূল রপ্তানি করা হয়। মিষ্টির জগতে ও মধ্য প্রাচ্যে প্রচুর মিষ্টি রপ্তানি করা হয়। মৎস্য শিল্পের বলার প্রয়োজন না কারন মৎস্য শিল্পে সবচেয়ে শীর্ষে সাতক্ষীরা একথা জানে না এমন লোক এদেশে নেই। সাতক্ষীরা থেকে প্রতিদিন ট্রাক কি ট্রাক বিভিন্ন মাছ, কাঁকড়া সহ মৎস্য প্রতিদিন উত্তর অঞ্চলে, ঢাকাতে এবং ভারতে যাচ্ছে। বিশে^র একমাত্র গধহমৎড়াব ঋড়ৎবংঃ যেটা বাংলাদেশ অংশে খুলনার চাইতে সাতক্ষীরাতে বেশী। সুন্দরবনকে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় পর্যটন এলাকা হিসেবে নির্মান করা যায়, যেখানে বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসতে পারে এবং আমি মনে করি হিরন পয়েন্ট, দুবলার চর, নীল ডুবুরী এবং সুন্দরবনের দক্ষিণ প্রান্তঘেষা অঞ্চলটিও আকর্ষনীয় পর্যটন শিল্পে রূপ দেওয়া যেতে পারে। যাই হোক বর্তমান সময়ের পরিবেশ বান্ধব, সমাজ বান্ধব, শিক্ষা বান্ধব সরকারের কাছে সাতক্ষীরা বাসীর একমাত্র আবেদন, সাতক্ষীরাকে একটি মডেল জেলা হিসেবে ঘোষনা দেওয়া। এবং সাতক্ষীরা জেলা যেন আর অবহেলিত না থাকে। উন্নয়নের জোয়ার বর্তমান সরকারের শাসন কালে সাতক্ষীরা বাসী দেখতে চায়। এবারের জাতীয় সংসদে আমরা যাদের সাংসদ হিসেবে পেয়েছি তারা মাঠ পর্যায়ের কর্মী থেকে উঠে আসা রাজনীতির ভেতর দিয়ে কর্মব্যস্ত থেকে জেলা বা উপজেলায় নেতৃত্ব দেওয়া শীর্ষ রাজনীতি বিদ। পাঁচজন সাংসদ মিলে সাতক্ষীরা জেলা উন্নয়নের চরম শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার উনারা করবেন এতে কারোর সন্দেহ নেই। কারোর দ্বিমত নেই। উনারা সবাই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন আমরা জানি তাদের প্রতিশ্রæতি মোতাবেক তাদের দৃঢ়তা তাদের রাজনৈতিক সক্ষমতা, তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা সাতক্ষীরাকে পাল্টে ফেলবে এটা আমরা বিশ^াস করি। আগামী দিনের নতুন সাতক্ষীরা গড়ার তারাই হোক উদ্ধত উচ্চারণ, বলিষ্ট কন্ঠস্বর এবং সাহসী অগ্র সৈনিক ও কারিগর।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ