HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন

বেতনা নদী খননে জেলা প্রশাসকের সজাগ দৃষ্টি প্রসঙ্গে

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ১৮৪
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪

যশোর জেলা ও সাতক্ষীরা জেলার সাথে সংযোগ বেতনা নদীটা এখন একবারে ভরাট হয়ে গেছে। যে নদীটার মাধ্যমে যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও নাভারনের জনগনের সাথে সাতক্ষীরার একবারে দক্ষিনে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত মুন্সীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার জনগনের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত এই বেতনা নদী। এমনকি খুলনা জেলার দক্ষিনে অবস্থিত পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার জনগনের সাতক্ষীরাতে বা নদী পথে যশোর আসার ক্ষেত্রে ও এই নদী পথ টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান সময়ে নদীটা একেবারে মৃত প্রায়। কিছু কিছু জায়গায় একেবারে শুকিয়ে গেছে। সত্তর বা আশির দশকে ঝিকরগাছা ও নাভারণ থেকে অধিকাংশ মানুষ ব্যবসার স্বার্থে উক্ত বেতনা নদী পথে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলায় ব্যবসা বানিজ্যের জন্য এবং সদর সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে বড় মার্কেট ঝাউডাঙ্গা বাজার, বিনের পোতা এবং আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের বিভিন্ন বাজারে যাতায়াত ও যোগাযোগ রাখতেন। একই ভাবে সুদুর সুন্দরবন থেকে শুরু করে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের ভিতর দিয়ে যশোর জেলার ঝিকরগাছা পর্যন্ত ব্যবসায়ীক স্বার্থে নদী পথে যাতায়াত করতেন। আপনাদের সকলেরই স্মরন আছে বা মনে আছে এলাকার অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ী ছিল মাটির তৈরী এবং সুন্দরবনের গর্ব গোলপাতা এবং ঐ গোলপাতা নদী পথে নৌকায় করে বিনের পোতা, ঝাউডাঙ্গা বাজার, কলারোয়া বাজারে এবং ঝিকরগাছা পর্যন্ত নিয়ে আসতো ঘর ছাউনীর কাজে ব্যবহারের জন্য। তখনকার মানুষের বেশীর ভাগ ঘর ছাওয়া থাকতো ঐ গোল পাতা এবং খড় দিয়ে এবং দেখতে ও সুন্দর লাগতো। গোল পাতার ছাউনী ঘরে কোন গরম লাগতো না। বসবাসের ক্ষেত্রেও ছিল বেশ আরামদায়ক। এছাড়া সুন্দরবন কালিগঞ্জ শ্যামনগর এলাকা থেকে লোনা জলের মাছ ঐ সমস্ত এলাকার ঘেরের মাছ এবং নদীর মাছ বিশেষ করে নদী পথে নৌকা যোগে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি গলদা, বাগদা, ছাটি, টেংরা, বোয়াল মাছ, বেলে মাছ, শোল মাছ, পাকাল মাছ, ভেটকি মাছ, কৈ মাছ, ভোলা মাছ, আড় মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ আমাদের এলাকায় আসতো। যেগুলো আজ বিলীন হয়ে যাবার পথে। আবার আমাদের এলাকা থেকে দক্ষিনে সরবরাহ করা হতো যশোরের অত্যন্ত জনপ্রিয় খেজুরের গুড়, পাটালি, কাঁঠাল এবং আমাদের নাভারণ, ঝাউডাঙ্গা, বিনের পোতা থেকে ঐ খেজুরের গুড়, কাঠাল, আম, জাম সহ বিভিন্ন ফল দক্ষিন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। সুতরাং আমরা এ কথা নিশ্চিত বলতে পারি যে, যশোর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বহু মানুষের আয় রোজগার হতো এবং তাদের সংসার ধর্ম চলতো এবং জীবন জীবিকার বড় মাধ্যম ছিলো এই অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সকলের কাছে বেতনা নদী। বাড়িতে মাছ নেই, আত্মীয় স্বজন এসেছে সাধারণ কৃষক ঐ মুহূর্তে কি করবে। নদীতে নেমেছে, জাল ফেলেছে, মুহূর্তের মধ্যে এক থেকে দেড় দু কেজি মাছ তখন বেতনা থেকে জালে পেয়েছে। জ্যান্ত মাছের ঝোল কতনা খেতে সুস্বাদু। কেউ তা ভুলতে পারে না। আজ সেই বেতনা নদীর নাম আমাদের তরুন তরুনীরা, বর্তমান প্রজন্মের যুবক যুবতীরা মোটেই জানে না। মনে হয় চিনতে ও পারবে না। বানিজ্যিক ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, ব্যবসার ক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই চিরচেনা বেতনা তার ঐতিহ্য একবারে হারিয়ে ফেলেছে। যে বেতনা নদীতে একটু আনন্দ করার স্বার্থে এবং আমাদের ধর্মীয় ভাব গম্ভীরতা ও কৃষ্টি কালচার ধরে রাখার জন্য এবং এমনকি বার্ষিক বনভোজন ও সত্তর ও আশির দশকের দিকে অনেক গুলো ডিঙি নৌকা নিয়ে ঢাকঢোল মাইক বাজিয়ে দুপক্ষের জনগনকে জানান দিয়ে অতি আড়ম্বরের সাথে উপভোগ করতাম। সেটা আজ একবারে শূন্যের কোঠায়। এত বড় ক্ষতির জন্য গ্রাম গঞ্জের মেহনতী ও দরিদ্র অসহায় মানুষের যেখানে ভাগ্য নির্ধারিত। আজ তারা জীবন জীবিকা থেকে বঞ্চিত এবং নদীর দুই ধারের জনগোষ্ঠী তাদের দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্রতর হওয়ার জন্য দায়ী অনেকটা আমাদের প্রশাসন। এগুলো দেখভাল করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের। আজ যদি তারা দায়িত্ববান ও কর্তব্য পরায়ন হতেন এবং দ্বায়িত্বে অবহেলা না করে নদী খনন, খাল বিল রক্ষা করার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিতেন আমার মনে হয় আজ এমন অবস্থায় আমাদের পড়তে হতো না। মনে রাখা উচিত মাছে ভাতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বর্তমান উন্নয়ন মুখী, উৎপাদন মুখী সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদের খাল নদী খনন কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন এবং অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন- নদী গুলোর পূর্ব অবস্থান ফিরিয়ে আনার। কিন্তু বিধি বাম। কে শোনে কার কথা। বিদেশ থেকে সাহায্য নিয়ে আই,এম,এফ এডিবি, জাতি সংঘ, বিশ^ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে ঝুকি নিয়ে দেশের কল্যানের জনগনের সুবিধার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জনবান্ধব, সমাজ বান্ধব, পরিবেশ বান্ধব বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর অক্লান্ত পরিশ্রম করে। আর আমাদের বিভিন্ন প্রশাসন বা সাংবাদিক এবং বিশেষ করে সরকারী দলের নেতা কর্মীরা আসলে কি ভূমিকা রাখছেন সেটা আমার কাছে অনেকটা অস্পষ্ট। দেশ গড়ার জন্য, দেশের কল্যানের জন্য, জনগনের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যে প্রধান মন্ত্রী একটানা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে আসলে আপনারা কেন এতটা নীরব বুঝতে পারছিনা। আজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগে ঝিকরগাছা থেকে একেবারে আশাশুনির শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নদী খননের বাজেট দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন অংশ ভাগ করে বিভিন্ন কনটাক্টর দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এবং দেখভাল করার দায়িত্বে ছিলেন আমাদের মাননীয় এমপি মহোদয় গন। মাননীয় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার গন এবং স্থানীয় প্রশাসক গন। অতি দুর্ভাগ্য আমাদের নাভারন অঞ্চলে কিছুটা খনন কার্য সম্পন্ন হয়েছে। কলারোয়া উপজেলায় কিছু কিছু জায়গায় খনন না করে গর্ত করে রাখা হয়েছে। ঝাউডাঙ্গা এলাকায় কয়েকদিন কাজ করতে দেখা গিয়েছিল পরে বন্ধ হয়ে যায়। বল্লী ইউনিয়ন ও লাবসা সহ বিনেরপোতা পর্যন্ত নদী খনন করা হয়। আবার আশাশুনিতে কিছু কিছু জায়গায় খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়। তাহলে মোর্দ্দা কথা হলো খনন করার চাইতে ক্ষতিটাই বেশী হয়েছে, কারন সম্পূর্ণ খনন করতে না পারায় অতিবৃষ্টি, বড় ধরনের বর্ষা এবং বন্যার কারনে যে সমস্ত জায়গায় খনন না করে নদীর মাঝখানে মাঝখানে বাধ দেওয়া হয়েছেসেখানে পানির প্রবাহ কমে যেয়ে বন্যার সৃষ্টি হবে এবং নদীর ধারের মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত সহায় বলে গত বছরের বর্ষা বন্যায় রূপ নেয় নাই। যদি বন্যা হতো তাহলে কলারোয়ার যুগেবাড়ী এলাকা ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া, ঝাউডাঙ্গা বাজার, ঝাউডাঙ্গা গ্রাম, রাজবাড়ী, হাচিমপুর, ভাটপাড়া, নারানপুর, আখড়াখোলা বাজার, আমতলা-বল্লী, মুকুন্দপুর, রাজনগর সহ বিনেরপোতা পর্যন্ত একেবারে ডুবে যেত এবং ব্যাপক ফসলের, মৎস্য ঘেরের এবং অত্যন্ত গরীব অসহায় যারা তাদের মাটির ঘর বাড়ী বন্যায় বিলীন হয়ে যেত, আরও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় নদীর দুই ধারে যে ভেড়ী বাধ ছিলো তা কিছু কুচক্রী মহল সাবেক কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগ সাজশে গ্রামের লোকের ভয় ভীতি দেখিয়ে টলিতে করে এবং ট্রাক্টরে করে রাতের আধারে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যেটা আগামী বর্ষায় আরো ভয়াল রূপ ধারন করতে পারে। যে শত শত কোটি টাকা নদী খননের জন্য বাজেট করা হলো সে টাকাগুলো গেলো কোথায়? তাই আসুন আর বিলম্ব না করে এক সংগে শান্তি প্রিয় মানুষ গুলো আর কাল বিলম্ব না করে প্রশাসনের সাহয্য নিয়ে আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রান প্রিয় এবং ক্ষুধার্ত এবং বেদনা বিভোর বেতনা নদীটা সংস্কার ও খনন করে স্বাভাবিক গতিতে যাতে চলতে পারে এবং তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে তার দু প্রান্তের মানুষের ভাগ্যের চাকা যাতে আবার সচল হতে পারে এবং তার পূর্ণ যৌবনে পদার্পন করতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রেখে যাতে অবশিষ্ট কাজ গুলো বর্ষা আসার আগেই সম্পন্ন করা যায় তার জন্য মাননীয় জেলা প্রশাসকের কাছে আকুল আবেদন করি। সবাই মিলে নজর দিলেই হয়তো আবার নদীটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ