HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

গ্রাম উন্নয়নে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নাই

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ১০৪৩
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শিক্ষা মানুষকে সকল প্রকার বাধা বিপত্তির হাত থেকে মুক্ত করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। কিভাবে অর্জন করতে হবেম কি ভাবে ব্যয় করতে হবে, কিভাবে পরিবার বা সমাজকে পরিচালনা করতে হবে, কিভাবে সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে, কিভাবে ভাগ্যের উন্নতি ঘটাতে হবে, সব ব্যবস্থায় করতে পারে শুধুমাত্র শিক্ষা। কোনটি সঠিক, কোনটি বেঠিক, যাচাই বাচাই করার একমাত্র উপায় শিক্ষা, কিন্তু শিক্ষা হতে হবে প্রকৃত শিক্ষা, সঠিক শিক্ষা। যে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতর কোন ভেজাল নেই। সুতরাং শিক্ষার মহা উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে সুপ্ত মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে তাকে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আবার উপযুক্ত শিক্ষাই হচ্ছে কোন জাতি বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং তার ক্রম উন্নতির অপরিহার্য সহায়ক হয়ে ওঠা। কোন ব্যক্তির নিজস্ব প্রবনতা, তার নিজস্ব গুনাবলির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যদি তাকে উপযুক্ত শিক্ষা না দেওয়া হয় তবে সে সমাজ বা পরিবার এবং বিশেষ করে রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক না হয়ে কোন একটা সময়ে পরিবারের বা রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে পড়ে। প্রত্যেকের জন্য একই ধরণের শিক্ষা তাই কখনও ঐ শিক্ষা উপযুক্ত হতে পারে না। এই শিক্ষার ফলে শিক্ষিত লোক নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা হয় না, সে শিক্ষা পদ্ধতি বেশীদিন চলতে থাকলে জাতীয় কাঠামো যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে, ভেঙ্গে পড়াই স্বাভাবিক। ফলে দেশ জুড়ে সৃষ্টি হবে শিক্ষিত বেকার অপদার্থের দল। তাই সাধারণ শিক্ষার ধারা বদলে শিক্ষার সাহায্যে দেশের প্রতিটি মানুষকে দিতে হবে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার সামর্থ্য। এদিক দিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে নিরাশ করেছে অত্যন্ত শোচনীয় ভাবে। তাই সমাজের চাহিদা এবং ব্যক্তির ক্ষমতা মিলে শিক্ষাকে বহুমুখী করে তুলতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে যে শিক্ষার প্রয়োজন আপনার জন্য, সাধারণের জন্য, সেটা হল কর্মমুখী শিক্ষা যার আরেক নাম কারিগরি শিক্ষা। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃতি অনুসারে আমরা অনুভব করতে পারি যে শিক্ষা যদি আত্মপ্রতিষ্ঠার সহায়ক না হয়, তবে সেই শিক্ষা নিরর্থক। তাই বর্তমান সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের জীবন সংগ্রামের পথ দেখাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে খুব ভাল ফলাফল করার পরেও । এজন্য তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশ বাংলদেশ এবং অধিক জন সংখ্যার দেশ ও আমাদের বাংলাদেশ। তাই গ্রাম বাংলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষা বা কর্মমুুখী শিক্ষার বিকল্প আর কিছু ভাবার আছে বলে আমি মনে করি না। অবশ্য বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কারিগরি বা কর্মমুখী শিক্ষার উপর বারবার গুরুত্ব দেবার কথা বলেছেন। শিক্ষাকে কেবল আত্মিক উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক প্রয়োজনের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। এরমূল কারণ হচ্ছে একটা দেশ উন্নয়নের চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে তখনই যখনই কৃষি, বনায়ন, মৃৎশিল্প, ধাতুশিল্প প্রভৃতি অপরিহার্য সামাজিক প্রয়োজন গুলি মেটানোর ভার অর্পিত হয় বংশনুক্রমে ঐ কাজ গুলির জন্য নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর উপর। প্রাচীন গ্রামীন সমাজে এ ভাবে কর্মমূখী শিক্ষার প্রচলন ছিল। বর্তমানে কিছুটা বিলুপ্তির পথে। প্রধানত ক্র্যাখট ওয়ার্ক বা মৃৎশিল্প অর্থ্যা মাটি, ধাতু, তামা, চর্ম, শংখ বা সুতা ইত্যাদির ব্যবহার করে লোর্কজ শিল্পীরা সমগ্র সমাজের প্রয়োজন মেটাতো। বর্তমানে সারা বিশ্বে বিভিন্ন কর্মের যে মহাযগ্য চলছে, তাতে আমাদেরকে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। কৃষি কাজ, কামারের কাজ, কুমারের কাজ, বাঁশ ও বেতের কাজ, চামড়ার কাজ, প্লাষ্টিকের কাজ, ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতির কাজ, তাঁতের কাজ, রেডিও, টেলিভিশণ, মোবাইল বা ফোন মেরামতের কাজ, ছাড়া ও আমাদের দেশে আরও অনেক গ্রামীন কর্মমুখী কাজ আছে এই সব কাজ শারীরিক যোগ্যতা দক্ষতা থাকা স্বত্বেও যদি আমরা করতে কুণ্ঠিত হই তাহলে আমাদের শিক্ষাই যে কেবল নিরর্থক হবে, যথার্থ হবে না। শুধু তাই নয় আমাদের দরিদ্রতা কোন ভাবেই ঘুচবে না। তাই কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থার সংগে সংগে ছাত্র ছাত্রীরা যাতে এই শিক্ষায় এগিয়ে আসে সে ব্যবস্থা তড়িৎ গতিতে গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাহলে সারা দেশে যে বেকার সমস্যা বিরাজমান তা ও অনেকাংশে কমে আসবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে দেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলির শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের পরিকল্পিত এবং কর্মমুখী শিক্ষার বাস্তব কর্মকান্ড। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইত্যালি, ইংল্যান্ড, জার্মানী, চীন, জাপান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, কানাড়া, দক্ষিন আফ্রিকা ইত্যাদি অত্যন্ত শিল্প উন্নত দেশ গুলিতে উচ্চ শিক্ষিত লোকজনই তাদের গৃহের সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন। যে ব্যক্তি মাঠের কৃষি কাজ করে, শিল্প কল কারখানায় বিভিন্ন যন্ত্র তৈরী করে এবং বিভিন্ন ধরণের মৃৎশিল্প আবিষ্কার করে সেও উচ্চ শিক্ষিত, এমন কি একজন প্রকৌশলী ও বটে।তবে আমরা কেন পারবো না? উন্নত বিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থায় কেরানী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আছে বিজ্ঞানী হওয়ার এবং কর্মের অন্ত্রে দিক্ষা নেওয়ার সুয়োগ, উন্নত দেশ গুলি যেমন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, অস্টোলিয়া উৎপাদন মুখী বা কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে সুপসন্ন করেছে। বিজ্ঞান ভিত্তিক কর্মমুখী বা কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে। তারা আজ পৃথিবীতে অত্যন্ত উন্নত ও স্বয়ং সম্পূর্ণ দেশে রুপান্তরিত হয়েছে। কর্মমুখী শিক্ষা অর্জন করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যার এবং তার মাধ্যমে সহজে জীবিকা নির্বাহের পথ খুজে বের করা যায়। কর্মমুখী শিক্ষা লাভ করলে পর মুখাপেক্ষী হতে হয় না। বেকার থাকতে হয় না বরং এ ধরনের শিক্ষা কর্মপ্রেরণা যোগায় এবং নিজের অবস্থায় উন্নতির সাথে সাথে দেশ ও জনগণের অনেক সেবা করা যায়। অনেক আনান্দের বিষয় বর্তমানে আমদের দেশের অনেক উচ্চ শিক্ষিত মেয়েরা বেকার বসে না থেকে তারা টেইলারিং কাজ শিখছে, এমন কি নকশি কাঁথা ও তৈরী করছে। সুতরাং বাড়ীতে বসে তারা বেশ অর্থ উপার্জন করছে এবং অনেকটা সে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করছে এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সেবা দিতে পারছে। এই ভাবে যাদি উচ্চ শিক্ষিত ছেলেরাও বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করে তবে তারা তাদের বেকারত্ব কিছুটা মেটাতে পারে। আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষা লাভ সুযোগ বা সম্ভাবনা অনেক বেশী। কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণে কৃষি কাজ কল কারখানায় কাজ পেতে বেগ পেতে হয় না এবং এ সমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করে অনেক দক্ষতা বা যোগ্যতা বৃদ্ধি করা যায়। সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি প্রত্যেকটা বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে যদি কর্মমুখী শিক্ষা চালু করা যায় তবে তা দেশের জন্য সুদুর প্রসায়ী ফল বয়ে নিয়ে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কাজেই আমদের দেশের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার সম্ভাবনা সমূহ যাচাই করে যদি সুন্দর সুষ্ঠ পরিকল্পনা ভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেয় তবে ব্যাপক সাড়া যাগাতে পারবে বলে আশা করা যায়। আমাদের দেশ বিভিন্ন দিক দিয়ে অনগ্রসর এবং কুসংষ্কারাচ্ছন্ন। কর্মমূখী শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষাকে কোন ভাবেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুচ্ছ বলে গণ্য করা হয়। সাধারণত উচ্চ শ্রেণীর বা অভিজাত শ্রেণীর অনেকে এমনকি মধ্যবৃত্ত ঘরের অনেকেই এ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ দেখার না বরং ঘৃণা বা উপহাস করে। এ ধরণের মানসিকা একেবারে দুর করে, কর্মমূখী শিক্ষায় সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার চাইতে কর্ম মুখী শিক্ষা যে, দেশের কল্যান কর উন্নতির জন্য যে বেশী অপরিহার্য এই চেতনা বা জাগ্রত বোধ সৃষ্টি করতে না পারলে আমাদের ব্যক্তি জীবনে বা জাতীর জীবনে উন্নতি বা অগ্রগতি কোন ভাবেই সম্ভব না। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের বেকারত্ব ঘুচাতে পারি। অভাব দূর করতে পারি অর্থকষ্ট অনেকটা লাঘব করতে পারি, সমাজে কাজ পেতে সুবিধা হয়, উপার্জনশীল হওয়া যায় ব্যক্তি স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়, স্বাবলম্বী বা আত্মনির্ভর হতে পারি। জীবনের হতাশা বা শূণ্যতা দূর করতে পারি। নতুন প্রাণ ফিরে পেতে পারি নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা দ্বারা নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারি। সুতরাং মনে রাখা উচিৎ বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ, আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার সময়। তাই এ মুহুর্তে সকল মহল ও সরকারের কাজে দাবি, যত দ্রæত সম্ভব আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক কর্মমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের সাথে সাথে জাতীয় কল্যাণও উন্নয়ণ হতে পারে এবং বেকার সমস্যার হ্রাস পেতে পারে দৃঢ় প্রত্যয় বা সংকল্প স্থির করে যত দ্রæত কর্মমূখী শিক্ষা বাস্তবায়ন করা যায়।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ