HEADLINE
কবিতা: উন্নয়নের শপিংমল বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন সাইপ্রাসের নতুন কমিটি ঘোষণা পাঁচ টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি, ভ্যান চালকের ঘুষিতে যাত্রীর মৃত্যু ভোমরা বন্দরে পেঁয়াজ মজুদ রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা সাতক্ষীরা কারাগারে আসামির মৃত্যু! ঝাউডাঙ্গায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানে ধাক্কা, বাসের ১০ যাত্রী আহত কলারোয়া ফুটবল মাঠে আনন্দ মেলার নামে চলছে অবৈধ লটারির রমরমা বাণিজ্য! কলারোয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত সাতক্ষীরার নলতা শরীফে ৫৯ তম বার্ষিক ওরছ শুরু ৯ ফেব্রুয়ারি জনগণের ক্ষতি করে কোনো কাজ করা যাবে না- ঝাউডাঙ্গায় বেত্রবতী নদী খনন কাজ পরিদর্শনে এমপি রবি
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০২:২৯ অপরাহ্ন

দেশে বর্তমানে ডেঙ্গুজ্বর প্রকট-ভয়াবহ, সচেতনতা অত্যাবশ্যক

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ১৮৩
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে কয়েকটা ভয়ংকর রোগ দেখা দিয়েছে তার মধ্যে একটা হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বর যেখানে জন মানুষের ভেতরে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। রাজধানী ঢাকাতে এর প্রকট অত্যন্ত ভয়াবহ তাছাড়া দেশের কয়েকটা জেলা শহর ছাড়া সর্বত্র ডেঙ্গুজ্বর এক মহামারী রুপ ধারন করেছে। অবশ্য গ্রামাঞ্চলে এর প্রভাব তেমন একটা নয় তবে অন্যন্য বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমান মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি নিয়ত গড় ৫ থেকে ১০ জন পর্যন্ত মানুষ মারা যাচ্ছে। কোন কোন দিন প্রায় হাজারের মত মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় ডেঙ্গুজ্বরের কারনে বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ও চট্টগ্রাম সহ অনেক শহরের স্কুল কলেজে শিক্ষাথীর উপস্থিতির সংখ্যা হচ্ছে কম, দু একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধের ও উপক্রম হচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে গোটা বিশে^ প্রায় দুই কোটি লোক ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছিল। সাধারনত ডেঙ্গু এডিস মশা বাহিত ভাইরাস জনিত এক ধরনের তীব্র জ¦র, গা হাত পা মাথা অত্যন্ত ব্যাথা হয়। লোমের গোড়া দিয়ে, এমন কি চোখ দিয়ে অনেক সময় রক্ত ও বের হয় পায়খানা অত্যান্ত শক্ত ও কালচে রং ধারন করে । সুুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই, নেই প্যাটেন্ট কৃত কোন ঔষধ। উপসর্গের উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা করতে হয়। প্রথমে আফ্রিকান দেশ গুলোতে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শোনা যায় কোন কোন জাহাজের মাধ্যামে উড়জাহাজ বা বিমানের মাধ্যমে আমাদের দেশসহ পৃথিবীর দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারনত এডিস বাহিত এই মশা সূর্য উদিত হওয়ার আগে এবং সুবহে সাদিকের পর পরই মানবদেহে আক্রমন করে এবং পরবর্তীতে কঠিন ও ভয়াবহ জ¦রে আক্রান্ত হতে হয়। ডেঙ্গু জ¦র সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে যেমন ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ¦র ও হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ¦র। এই ভাইরাসের আবার চার টি হেবোরোটাইপ আছে। এ গুলো হচ্ছে উঊঘ-১, উঊঘ২, উঊঘ-৩ ও উঊঘ-৪ এ চারটি সোরোটাইপ থেকেই ডেঙ্গুজ¦র হতে পারে তবে উঊঘ-২ এবং উঊঘ-৩ বেশী মারাতœক। সাধারনত ডেঙ্গুজ¦র দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা থেকে ছড়ায়। এর একটি হচ্ছে এডিস এজিপটাই ও অন্যটি এডিস এলকোপিটাস। সমুদ্র পৃষ্ঠের এক হাজার ফুট হতে আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় এ গুলোর বিচরন। এডিস এজিপটাস স্ত্রী মশা কোন ব্যাক্তিকে কামড় দিলে সে ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হতে পারে তারপর আক্রান্ত ব্যাক্তিকে জীবানুবিহীন কোন স্ত্রী এডিস মশা কামড় দিলে সে মশাটি ও ডেঙ্গুজ¦রের জীবানু বাহী মশায় পরিনত হয়। সাধারনত ড্রেন, পুকুর বা নদীর পচা পানিতে এ প্রজাতির মশা ডিম পাড়ে না। ডিম পাড়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পাত্রের পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিাতে। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পাত্রের পরিষ্কার গাছের কোটর, বাশের গুড়ির কোটর ও পত্রবৃন্ত ইত্যাদি। আর পরিষ্কার ও বদ্ধ পানির মধ্যে। যেমন- ফুলদানি, ফুলের টব, মাটির হাঁড়ির ভাঙা অংশ, গাড়ীর টায়ার, মুখ খোলা পানির ট্যাংকি, জল কান্দা ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হলে দেহের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠতে পারে। মাথা ও চোখের মাংসপেশীতে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে এবং বিশেষ করে হাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। এমনকি বমি বমি ভাব ও দেখা দেয়। জ¦র হওয়ার তিন চার দিন পর দেহে এক ধরনের ফুসকুড়ি ওঠে। মাংস পেশীর খিচুনিতে কখনো কখনো রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এছাড়া মনের ভেতরেও এক ধরনের মৃত্যু ভয় কাজ করে এবং দেহ মনে এক ধরনের বিষন্নতার ছাপ পড়ে। শিশু কিশোররা এ জ¦রে আক্রান্ত হয় বেশী। আট থেকে দশ দিনের মধ্যে উপসর্গ গুলো আস্তে আস্তে কেটে যেতে থাকে। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগে অনেক। শরীরের দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে বেশ কঠিন হয়ে যায়। ডেঙ্গুর রক্তক্ষরন বা হেমোরেজিক জ¦র কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। এ জ¦রে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তিন থেকে চার দিনের মধ্যে রক্তের সংবহনতন্ত্রে জটিলতা দেখা দেয়। সময় সময় বিকল হয়ে পড়ে। তখন রক্তনালীতে ও চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বেধে যায়। দাঁতের গোড়া ও দেহের অন্য কোন স্থান দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরন হয়। এর সাথে যোগ হয় রক্তবমি ও মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া। মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ হয় অনেকটা মাসিকের মতো। ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হয়। তবে দেখা গেছে অধিকাংশ ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী এক সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। ডেঙ্গু রোগীদের যদিও কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই তবুও ডাক্তারদের শরনাপন্ন হওয়াটাই উচিত এবং উত্তম। মারাতœক উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। বিশেষ করে জ¦রের প্রবণতা হ্রাসের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করা উত্তম। রোগীকে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলের ওপর চিকিৎসা করতে হবে। মারাতœক ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে পানি স্বল্পতা এবং রক্ষক্ষরণের চিকিৎসার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে আইভি স্যালাইন বা রক্ষ সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু ডেঙ্গুজ¦র মারাতœক ও ভয়াবহ তাই এর প্রতিকারের জন্য সর্বাতœক চেষ্টা করতে হবে এডিস মশা বংশ বিস্তারের আগে থেকেই। সাধারণত বর্ষাকালে এই রোগের আবির্ভাব হয়। আমাদের ভেতরে একটা প্রবণতা আছে যখন কোন কিছু দ্বারা আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই বা আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে পড়ি তখন তার আশু সমাধানের জন্য মরিয়া হয়ে পড়ি। আর যেই নিরাময় হয়ে উঠি তখন আর মনে থাকে না। এডিস মশার বংশ বিস্তারের আগেই যদি আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করি এবং আগেভাগেই যদি জনগণের ভেতরে জন সচেতনতাবোধ সৃষ্টি করতে পারি তাহলে এর হাত থেকে আমরা কিছুটা নিরাপদে থাকতে পারি। বাড়ীর আনাচে, কানাচে, গোয়ালঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, বাড়ীর চারপাশের পরিবেশ সব কিছু যদি ঠিক ঠাক রাখা যায়, আমার মনে হয় এডিস মশা তখন আর বংশ বিস্তারের সুযোগ পাবে না। সুতরাং এডিস মশার হাত থেকে আমরা কিছুটা রক্ষা পেতে পারি। সমস্যা তো গ্রামে গঞ্জে খুব একটা বেশী না। সমস্যা হচ্ছে শহরে, বিশেষ করে ঢাক শহরে, এ বছর ডেঙ্গু আসতে আসতে আমাদের নিকটবর্তী যশোর শহর পর্যন্ত এসেছে, যে কোন সময় আমাদের সাতক্ষীরাতেও হানা দিতে পারে তাই আমার প্রান প্রিয় জেলা সাতক্ষীরার জনগনের কাছে অনুরোধ ডেঙ্গু যাতে আমাদের সাতক্ষীরাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে এবং কোন ভাবে কেউ যেন আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল বা নজর রাখতে হবে। প্রত্যেকটা বড় বড় শহরের মেয়র বা কমিশনারদের প্রতি অনুরোধ থাকবে বর্ষা মৌসুম আসার আগেই যদি আপনারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং শহরের জনগনকে বিশেষ করে মিল কারখানা এলাকা এবং বস্তি এলাকায় সচেতন করতে পারেন, তবে তখনই সম্ভব হবে ডেঙ্গুজ¦রের হাত থেকে জনগনকে রক্ষা করা। এ মুহুর্তে বাড়ীঘর ও তার আশ পাশ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশারী ব্যবহার করে এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পৃথিবীতে ডেঙ্গুজ¦রের ইতিহাস অনেক পুরোনো। এর মহামারী প্রথম ঘটে ১৭৭৯ সালে মিশর ও জাভাতে। ১৮৯৭ সালে অষ্ট্রেলিয়া, ১৯২৮ সালে গ্রীস, ১৯৪৫ সালে লুসিয়ানা ও ১৯৮৬ সালে টেক্সাসে ডেঙ্গুজ¦র মহামারি রূপে দেখা দেয়। সুতরাং এর কোন বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা না থাকায় এডিস মশা থেকে সাবধান থাকাই বা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ, তাই আসুন সমাজে আমরা সবাই অর্থাৎ সর্বস্তরের জনগণ মিলে এডিস মশার প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করি। এডিসের হাত থেকে আমাদেরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি। আমরা সবাই ভালো থাকি।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ