HEADLINE
কবিতা: উন্নয়নের শপিংমল বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন সাইপ্রাসের নতুন কমিটি ঘোষণা পাঁচ টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি, ভ্যান চালকের ঘুষিতে যাত্রীর মৃত্যু ভোমরা বন্দরে পেঁয়াজ মজুদ রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা সাতক্ষীরা কারাগারে আসামির মৃত্যু! ঝাউডাঙ্গায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানে ধাক্কা, বাসের ১০ যাত্রী আহত কলারোয়া ফুটবল মাঠে আনন্দ মেলার নামে চলছে অবৈধ লটারির রমরমা বাণিজ্য! কলারোয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত সাতক্ষীরার নলতা শরীফে ৫৯ তম বার্ষিক ওরছ শুরু ৯ ফেব্রুয়ারি জনগণের ক্ষতি করে কোনো কাজ করা যাবে না- ঝাউডাঙ্গায় বেত্রবতী নদী খনন কাজ পরিদর্শনে এমপি রবি
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

যথাপযুক্ত পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধ করতে হবে

অজয় কান্তি মন্ডল / ৭৫৪
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

দেশের মানুষের নিত্যপণ্য থেকে নির্মাণসামগ্রী সবকিছুর দাম বেড়েছে বা বাড়ছে বা আরও বাড়বে। প্রতিদিনকার নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে দেশের মানুষ এখন আর অবাক হয়না। কেননা, বিষয়গুলো মানুষ অকপটে মেনে নিয়েছে বা নিচ্ছে। ভাতের পরিবর্তে আলু খেয়ে, কম খেয়ে আথবা একবেলা না খেয়ে জীবনধারণের জন্য দেশের নীতি নির্ধারকদের যে উপদেশ সেগুলো গ্রামের খেটে খাওয়া প্রান্তিক আয়ের মানুষের কাছে না পৌঁছালেও তারা নিজ চেষ্টায় পূর্ব হতেই কম খেয়ে আবার কখনো একবেলা উপোস থেকে, তেল ছাড়া রান্না খেয়ে, আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য খুঁজতে চেষ্টা করে চলেছে। উন্নত দেশ বা উন্নত জীবনযাপনের সংজ্ঞা এসব প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে অজানা। তাই ওসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে ও কেউ চেষ্টা করেনা। এক কথায় বাড়ছে সবকিছুর দাম। বিপরীতপক্ষে তার সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে মানুষের জীবনের দাম। এক বেলা না খেয়ে বা কম খেয়ে জীবন ধারন করা যায়। কিন্তু যেখানে মানুষের জীবনের একেবারেই মূল্য নেই সেখানে উন্নত জীবন বা কাড়ি কাড়ি ডলারের মাথাপিছু আয় দিয়ে কি হবে সেটা ভাববার বিষয়।
বলছিলাম গত ২১ শে মার্চের দিন দুপুরের নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার অতলে তলিয়ে যাওয়া যাত্রীবাহী এমএল আশ্রাফ উদ্দিন নামের লঞ্চটির কথা। দেশের সকল পত্রিকার অনলাইন বিভাগে ৬ মিনিটের ও বেশি সময় ধরে মোবাইলে ধারন করা ভিডিওটি দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছিল। ভিডিওটি হঠাৎ করে দেখে বুঝে ওঠা দুস্কর ছিল ওটা বাস্তব নাকি সিনেমার কোনো দৃশ্য দেখছি। অল্প সময়ের ভিতরে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহ বিভিন্ন মিডিয়ায়। ভিডিওতে দেখা যায়, পাহাড় আকৃতির একটা বিশাল কার্গো জাহাজ (সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯) তার থেকে অন্তত ২০ গুণ ছোট একটা লঞ্চকে পেছন থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর উত্তাল নদীর মাঝপথে কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি যখন ডুবতে শুরু করল তখন মানুষ কোন উপায়ন্তু না দেখে ডুবন্ত লঞ্চটি থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাফ দিয়ে ছিটকে পানিতে পড়ছে। একসময় লঞ্চটি ডুবে গেল। ডুবন্ত লঞ্চ আর কিছু ভাসন্ত মানুষের ওপর দিয়ে কার্গো জাহাজটি এমনভাবে বীরদর্পে চলে গেল তাতে সহজেই আঁচ করা যায় জাহাজটির চালক ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি তার নীচে অতগুলো মানুষ চলে গেছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চ আর কার্গো জাহাজের চাপে নদীতে যে ঢেউ তৈরি হলো তাতে হাবুডুবু খেতে শুরু করল কয়েকটি মাথা। আশপাশে নোঙর করে রাখা লঞ্চ থেকে নদীতে বয়া ফেলা হলো। আশাপাশ থেকে নৌকা নিয়ে কিছু মানুষ ছুটলেন ভাসন্ত মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে। যারা সাঁতার জানে বা সাঁতরে ভেসে থাকতে পেরেছিল তাদের অনেককেই নৌকায় তোলা হলো। এসব মানুষের চোখেমুখে শোভা পাচ্ছিল সাক্ষাৎ মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফেরা আরেকবার জীবন পাওয়ার বিস্ময়! কথাগুলো খুব সহজে এখানে বলে ফেললাম। কিন্তু নিদারুণ বাস্তবতা যে কতটা কঠিন সেটা ভুক্তভোগীরাই সেদিন বুঝতে পেরেছিল।
এ পর্যন্ত (২২ শে মার্চ দুপুর) দেখলাম ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও অনেকে। আমার মনে বেশ কিছু বিস্ময় জাগে! আচ্ছা, যাঁরা শেষ মুহূর্তে লাফ দিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পরতে পারেননি, কিংবা নদীতে পড়েও যাঁরা কার্গোর নিচে চাপা পড়ে তলিয়ে গেছে শীতলক্ষ্যার অতলে, তাদের সবার সন্ধান কি শেষ পর্যন্ত মিলবে? নাকি নদীর তলদেশে বিলীন হয়ে যাবে? মৃত্যু পথযাত্রী এসব মানুষদের ডুবে যাওয়ার সময় তাদের সামনে কি ভেসে উঠেছিল পরিবারের প্রিয়জনদের আদর মাখা মুখগুলো? লঞ্চটিতে থাকা যাত্রীদের প্রিয়জনরা যে অধীর আগ্রহ নিয়ে বাসায় অপেক্ষা করেছিল বা এখনো করছে তারা কি তাদের প্রিয়জনদের আদৌ খোঁজ মিলবে? তারা কি প্রস্তুত ছিল প্রিয়জনদের মৃত্যু খবর শোনার জন্য? কখনো কি আশা করেছিল পরিবারের জলজ্যান্ত মানুষের তাজা লাশ হয়ে ফেরার?
জানি এসকল প্রশ্নের উত্তর অনেকটা জটিল। অনেকেই ফিরেছে মৃত্যুর দুয়ারের খুব কাছ থেকে। আবার অনেকেই ফিরেনি বা ফিরবেও না। এটাই দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বা প্রকৃত বাস্তবতা। কিন্তু একজন ভিখারির ও দুচোখ ভরে স্বপ্ন থাকে। বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সুন্দর সুখী প্রজন্ম গড়ার স্বপ্ন। দিনশেষে ভিক্ষার অর্থ দিয়ে আগামীর প্রজন্ম কে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। সে স্বপ্ন দেখে তার আয়ের টাকায় ভবিষ্যত বংশধরকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার। তাই নানান অবহেলায় এসব নিরীহ মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু শুধুমাত্র তাদেরই মৃত্যু নয়। মৃত্যু এক একটি স্বপ্নের, মৃত্যু এক একটি পরিবারের। আমরা খুব কম লোকই ভাবি এগুলো নিয়ে। যেকোন দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির পরেই আমরা ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করি। প্রশাসনে বিরাজ করে সেই সরগরম অবস্থা। মিডিয়া ও একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, একের পর এক নিউজ কভারেজ দেয়। টিভি চ্যানেল গুলোতে শুরু হয় ‘টকশো’ নামে বিভিন্ন নামীদামী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একে অন্যের দোষারোপ। আলোচনায় উঠে আসেঃ এখানে ঘাটতি ছিল, ওখানে ঘাটতি ছিল; এটা করা উচিৎ হইনি, ওটা করা উচিৎ হইনি; এখানে বিরোধী দলের হাত ছিল, ওখানে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সহ আরও কত কি।
এরপর গঠন করা হয় একের অধিক কথিত তদন্ত কমিটি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কমিটিকে বেঁধে দেওয়া হয় সময়। কিন্তু ফল কি হয়েছে? এসব করে কি দুর্ঘটনা বা মৃত্যু আদৌ কমানো সম্ভব হয়েছে? এই তদন্ত কমিটি কি পেরেছে কোন পরিবারের যে বা যারা মারা গেল তাদের জন্য কোন সুসার বয়ে আনতে? তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে যাতে একই ঘটনার পুনুরাবৃতি না ঘটে সে জন্য কি কোন উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? তদন্ত কমিটি গঠন করে যদি ভবিষ্যতের এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো না যায় তাহলে এসব আদিক্ষেতার আদৌ দরকার আছে কিনা সেটি আমার বুঝে আসে না। যে কোন দুর্ঘটনার পরে গঠিত এসব ‘পাঁচ সদস্যের’, ‘দশ সদস্যের’…. তদন্ত কমিটির প্রকৃত উদ্দেশ্য আমি বোঝা অনেকটা কঠিন। কেননা দুর্ঘটনা পরবর্তী বিভিন্ন অনিয়ম বা ত্রুটি বের করার চেয়ে দুর্ঘটনার পূর্বে সচেতনতা অবলম্বন করাটাই বেশি শ্রেয়।
আমরা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি জলপথ বা স্থলপথে চলাচলকৃত যেকোন যানবাহনে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে বিশাল তোড়জোড় শুরু হয়। নিয়মের তখন এতটাই আধিক্য দেখা যায় যে মনে হয় দেশ তখন একেবারে নিয়মের যাতাকলে ঢুকে গেছে। সময়ের সাথে সাথে এসব নিয়ম আবার হাওয়ায় মিলে যায়। প্রশাসন আবার হেলান দিয়ে ঘুমায়। ফলশ্রুতিতে দিন পোঁনের পেরোতে না পেরোতে পরিস্থিতি আবার যা তাই। পুনরায় ঘটে বড় বড় দুর্ঘটনা। ব্যাপক প্রাণহানি। ঠিক তেমনি, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটিগুলোকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়। অথচ পূর্ব হতেই বিশালাকৃতির এই জাহাজটি যখন নদীতে প্রবেশ করবে তার আগে সুস্পষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন ছিল। একই নদীতে যেখানে ছোট ছোট নৌযানের মধ্যে এই বিশালাকৃতির জাহাজ প্রবেশ করে তখন উচিৎ ছিল ক্যামেরা সংযোজনের। চালক যাতে তার স্থানে বসে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বা আশাপাশের নৌযানগুলোকে দেখতে পারে সেজন্য জাহাজটির সামনে বা পেছনে ক্যামেরা থাকাটা জরুরী ছিল। চালক যদি যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে দেখা মাত্র তার দিক পরিবর্তন করতে বা ইঞ্জিনের গতি কমিয়ে দিতে পারত তাহলে যাত্রীগুলো এভাবে পানিতে ডুবে মরতে হত না।
গেল বছরেরে শেষের দিকে রাতের গভীরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে ও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জন যাত্রী নিহত হয়েছিল (প্রথম আলো, ৩ জানুয়ারি)। তখনো পর্যন্ত নিখোঁজ ছিলেন অন্তত ৩০ জন যাত্রী। অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল শতাধিক যাত্রী। তখনো একের অধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। দুর্ঘটনা রোধে টিভি বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো প্রচার করেছিল অনেক বিশেষজ্ঞদের মতামত। প্রচারিত হয়েছিল ‘টকশো’। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল, লঞ্চের মালিক, শ্রমিক ও চালকদের ত্রুটি ছিল। সেই ক্ষত শুখাতে না শুখাতেই আবার লঞ্চ ডুবে প্রাণহানি। সামনে আবার দুর্ঘটনা ঘটবে। প্রাণহানি হবে। তদন্ত কমিটি গঠিত হবে। টিভিতে টকশো হবে। কিন্তু তাতে আমজনতার কি লাভ হচ্ছে? তারা তো ঠিকই দিনের পর দিন জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে।
এসব দুর্ঘটনাগুলো বরাবরই ইতিহাসের কালো সাক্ষী হয়ে রয়ে যায়। কিন্তু ভুক্তভোগীদের পরিবারের ক্ষত কখনো শুঁকায় না। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠে আত্মীয় পরিজনের মন। ফিরতি বছরের ওই একই দিনে নিহতদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ করা হয়। বিগত দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডি গুলো থেকে আমরা এমন শিক্ষা পাই। কিন্তু ঘটা করে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার চেয়ে প্রকৃত বাস্তবতা এমনটা হওয়া উচিত ছিল যাতে এগুলোর পুনুরাবৃতি ভবিষ্যতে না ঘটে সেদিকে নজর দেওয়া এবং যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া।
এসব দুর্ঘটনায় যেমন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে, তেমনি বর্হিবিশ্বেও দেশের ভাবমর্যাদা যথেষ্ট ক্ষুন্ন হয়। কেননা, বর্হিবিশ্বের কাছে যেকোন দেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পায় সেদেশের প্রশংসানীয় এবং ভালো কিছু করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশের ভাবমূর্তি বিদেশীদের কাছে দিনকে দিন খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। একের পর এক এত বেশি দুর্ঘটনা, প্রাণহানি এবং দুর্নীতি দেশে ঘটে থাকে তাতে করে ভালো সংবাদ গুলো চাপা পড়ে খারাপগুলোই ঢালাওভাবে বহির্বিশ্বে প্রকাশ হচ্ছে। বিদেশীরা বাংলাদেশকে ভাবে জনসংখ্যার ভারে নুইয়ে পড়া একটি দরিদ্র পীড়িত, ক্ষুধাগ্রস্ত এবং অতি দুর্নীতি প্রবন দেশ। যেখানে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। যেখানে প্রতিবছর আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে, সড়ক দুর্ঘটনায়, ভবন ধ্বসে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে, সন্ত্রাসী হামলায় হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। বার বার দুর্নীতির তালিকায় শীর্ষের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের এমনটায় ভাবতে বাধ্য করে।
দেশ উন্নত হচ্ছে আর সেই উন্নতির সাথে সাথে দেশের মানুষের জীবনের মূল্যও বাড়া উচিৎ ছিল। আজ দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য দিনকে দিন নিন্ম থেকে অতি নিন্ম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। যেগুলো আদৌ সমীচীন নয়। যদিও দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগণের জীবনের মূল্য সবসময় মূল্যহীন। তাদের সুযোগ সুবিধার নিয়েও সবার ভিতরে অনেক উদাসীনতা দেখা যায়। আর এসব উদাসীনতা থেকেই প্রতি বছর লঞ্চ-স্পিড বোট ডুবে, সড়ক দুর্ঘটনায়, ভবন ধ্বসে, আগুনে পুড়ে অগণিত মানুষের প্রাণহানি ঘটে। অথচ এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো খুব কঠিন কোন বিষয় নয়। দরকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ। যদি আজ থেকেও সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়ে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বন্ধে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা দপ্তর গুলোর প্রতি কঠোর নির্দেষ প্রদান করেন তাহলে অচিরেই সকল অনিয়ম বন্ধ হবে। তা না হলে এমন বহু ঘটনা আগামী দিনের জন্য জাতির সামনে অপেক্ষা করছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা।
যেকোন দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির পরে তদন্ত কমিটি গঠণের চেয়ে দুর্ঘটনা পূর্ববর্তী যথোপযুক্ত পদক্ষেপ ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনার পক্ষে সহায়ক। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের নিত্তদিনের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নদীপথে চলাচলকৃত ছোট বড় অনেক ধরণের লঞ্চ। এসকল লঞ্চের সার্বিক নিরাপত্তা দেখভালের জন্য কর্তৃপক্ষও রয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে প্রমান মেলে লঞ্চের ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল, চালকের ত্রুটি ছিল এবং এসকল বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকিতে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। আশাকরি দেশের নীতি নির্ধারকেরা বিষয়গুলো অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ঘটনার পুনরাবৃতি রোধকল্পে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। সেইসাথে নিয়ম লঙ্ঘনকারী সকলকে শাস্তির আওতায় নিয়ে এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ও মৃত্যু থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করবেন।

লেখকঃ অজয় কান্তি মন্ডল
গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি,
ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ