HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

রাজনীতিতে এ মুহুর্তে সহিঞ্চুতা খুব দরকার

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ৩৮৮
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১০ মে, ২০২৩

জহিরুল ইসলাম শাহীন: বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনাময়ী একটি দেশ। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রুপান্তরিত করার ক্ষেত্রে তেমন কোন কঠিন সমস্যা সামনে আছে বলে আমার মনে হয় না। শুধু দরকার দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ভেতরে বৈষম্য দূর করা, সহিঞ্চুতা, সহমর্মিতা, বন্ধুত্বের বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ব বোধ। দলগুলোর মধ্যে মতাদর্শ থাকতে পারে, চিন্তা ভাবনার ভিন্নতা থাকতে পারে, দলের সংবিধান ভিন্ন হতে পারে, এক এক জনের চলাচল, কথাবার্তা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, চেতনার ধরন ভিন্ন হতে পারে কিন্তু সবার উদ্দেশ্যতো এক, দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিভাবে উন্নয়ন করতে হবে। সমাজে সকলের অধিকার কিভাবে সমান ভাবে বন্টন করতে হবে। মানুষে মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কিভাবে উন্নত পদ্ধতিতে বা বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রক্রিয়ায় ফসল ফলিয়ে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করতে হবে। কিভাবে বিশে^ খাদ্যে দেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করা যায়। কিভাবে মানব সম্পদকে শক্তিতে পরিণত করা যায়। শিক্ষার বিকাশ কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়। এই রকম চিন্তা ভাবনা যদি সকল জনগন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় তখনই সম্ভব দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা। পাশাপাশি আরেক বিষয় আমাদের জানা দরকার যদি কোন দেশে দূর্নীতি বা ঘুষ গ্রহন ও প্রদান অবাধে চলে একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে উর্দ্ধতন পর্যন্ত তখন কোন ভাবেই উন্নত দেশে কোন দেশকে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ গড়তে ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর ১৫ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত যেমন এদেশের সকল জনগন, রাজনৈতিকদল, সাংস্কৃতিক জোট, পেশাজীবি, স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা, শিক্ষক, কর্মচারী, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, অধ্যাপক, উকিল, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ বাহিনী, বিমান বাহিনী ঐক্যবদ্ধ ভাবে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা, সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও দালালদের হটিয়ে দিয়েছিল এবং বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আত্মহুতি দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল এবং ইস্পাত কঠিন দৃঢ় প্রত্যয় এবং শপথ নিয়ে তারা মৃত্যুর ভয় না করে সম্মুখে অগ্রভাগ এগিয়ে গিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল। তাহলে আজকের দিনে অতটা বাধা তো আর নেই। শুধু দরকার ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ করা। দেশপ্রেমিক হওয়া, দেশের প্রতি প্রেমত্ব বোধ, দেশত্ববোধ, মমত্ববোধ এবং শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে, সকল দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিঃস্বার্থ ভাবে বিভিন্ন মতাদর্শ ভুলে যেয়ে একটাই লক্ষ্য স্বাধীনতার যুদ্ধের মত বিশে^র মানচিত্রে ঘুষ মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, রাজনৈতিক অস্থিতীশীলতা মুক্ত, উন্নত সোনার দেশ তৈরী করা। এটা অবশ্যই সম্ভব। একাত্তরের মত আবার সবাইকে শত্রæর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হবে। আপনারা হয়তো বা জানেন ১৯৭১ সালে আমাদের দেশ যখন স্বাধীন হয়, কোরিয়াতে শিক্ষার হার ছিল অনেক কম। এশিয়া মহাদেশের মধ্যপ্রাচ্যের এবং আফ্রিকার অনেক দেশ আমাদের চাইতে অনেক পিছিয়ে ছিল শিক্ষা দিক্ষায় অর্থনীতিতে এবং উন্নয়নে। আজকের সেই দেশ গুলোর মধ্যে অনেক দেশ উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। পেছনে একটাই কারন, সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, অস্থিতিশীলতা নেই, হিংসা নেই, দ্বেষ বা বিদ্বেষ নেই, দ্বন্দ নেই, মারামারি নেই এমনকি ঘুষ বা দুর্নীতি নেই সুতরাং তারাতো উন্নত দেশে বসবাস করবে এবং গর্ববোধ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবস্থা দেখুন, দেখলে সাধারণ জনগণ ভয় পায়, কারন কখন কোন বিপদে ফেলে দেয়, ডেকে আনলাম সেবা বা সহযোগতি দেবার জন্য কিন্তু ফেলে দিল বিপদে। নেতাদের কাজ বা লক্ষ বা উদ্দেশ্য একটাই দেশের সেবা করা, দেশের উন্নতি করা, দুঃখী, দরিদ্র, অসহায় মানুষের পেছনে দাড়ানো। কিন্তু এদেশটা স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে উল্টো দিকে মোড় নিয়েছে। বিশে^র মানচিত্রে কখনও বা তৃতীয় বা চতুর্থ আবার কখনও পঞ্চম। বিগত বছরগুলোতে অনেকেই মনে করেছেন দূর্নীতি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। হয়তোবা কিছু কিছু সেক্টরে হ্রাস পেতে পারে, আবার আমার দৃষ্টিতে কিছু কিছু হওয়ার মত। অনেকটা আন্তরিকতার অভাব। কিজন্য, কেন, কোন কারনে, কোন উদ্দেশ্যে আজকের বাংলাদেশের অকুতোভয় সাহসী সৈনিকেরা জীবন দিয়েছিলো। কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষন করা হয়েছে, বাবা মায়ের সামনে থেকে আমাদের যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে গেছে। আপনাদের মনে পড়ে না। আমরা কেন এতটা অমানুষ, আমরা কেন এত অর্থের মালিক হতে চাই, আমরা কেন এত সম্পদ করতে চাই। কাদের কাছ থেকে এতটাকা ঘুষ দুর্নীতি করছেন? এরাতো এদেশেরই সন্তান, এরাতো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ, তাহলে এদের সংগে কেন প্রতারনা করবো। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে মেনুফেস্ট তৈরি করে, সংবিধান তৈরি করে, জনগণের স্বার্থের কথা ভাবে, উন্নয়নের কথা ভাবে যেই ক্ষমতায় যায় তখন তারা সাধারণ জনগণের কথা ভুলে যায়। বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে অনুরোধ করবো গ্রামে, গঞ্জে, উপশহরে একবার আসুন। বিভিন্ন অফিস আদালতে ঘুরে ঘুরে দেখুন ঘুষ, দুর্নীতির কাছে মানুষ অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। বিএনপি বলে দেশে আওয়ামী লীগ থাকবে না। আওয়ামীল বলে বিএনপি থাকবে না। জাতীয় পার্টি বলে শুধু আমরাই থাকবো আবার অনেক বড় বড় দল বলে ছোট ছোট দল থাকবে না। ওরা আবার এদেশে কি করবে? এই যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, একটা দেশের কল্যানের জন্য মোটেই সমীচীন নয়। গণতন্ত্র অর্থ হচ্ছে সবার অধিকার সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। কারোর বাক স্বাধীনতা, কারোর মতামতের স্বাধীনতা, কারোর আদর্শ কেড়ে নেওয়া ঠিক নয়। যার কাজ তাকে করতে দাও। এটাই গণতন্ত্র। জন স্টুয়ার্ট মিল- বিশ^ বিখ্যাত একজন প্রবন্ধকার তিনি বলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন হবে। সরকার দেশের কল্যানের জন্য কাজ করবে। পাশাপাশি সংখ্যা লঘিষ্ঠ দলগুলো গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য যে সমস্ত^ মতামত প্রকাশ করবেন সেগুলোকে উপেক্ষা করা যাবে না। দেশ ও জাতির স্বার্থে কোন না কোন সময়ে সংখ্যা লঘিষ্ঠ দলের মতামতও গ্রহণ যোগ্য হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৬তম প্রেসিডেন্ট যিনি গণতন্ত্রের জনক, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গে- এক ভাষণে বলেছিলেন, সরকার জনগণের, জনগণের দ্বারা এবং জনগনের জন্য। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। সবগুলো দলের কাছে সাধারণ জনগণ, খেটে খাওয়া মানুষের আবেদন আসুন আর সংঘাত নয়, সহিংসতা নয়, শত্রæতা নয়, মারামারি-কাটাকাটি নয়, প্রতিহিংসা নয় সবকিছু ভুলে গিয়ে হাতে হাত রেখে, কাধে কাধ রেখে বিশ^ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশকে উন্নত বিশে^ উন্নত দেশগুলোর মত আমরাও উন্নত দেশ গড়তে পারি কিনা। শুধু আন্তরিকতার দরকার। একে অপরকে সাহায্য ও সহযোগিতার ব্যাপার। আমার কাছে মহে হয় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে। কারণ বাংলাদেশের মত এত সুন্দর দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। কারণ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবন বাংলাদেশের মধ্যে, বাংলাদেশের মধ্যে আছে অসংখ্য বনাঞ্চল, পাহাড়, পর্বত, বিশাল নদী, খাল বিল, প্রাকৃতিক সম্পদ, গ্যাস, কয়লা, লৌহ, তামা এবং ফলে ফুলে ঘেরা। আর ফসল উৎপাদনের জন্য এমন সুন্দর ভূমি/মাঠ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। একই জমিতে তিনবার ফসল হয় এমনকি চারবার ও হয়। সুতরাং এ দেশের মাটিতে সোনা ফলে। তাই আসুন সবাই মিলে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধৈর্য, স্থিতিশীলতা, সহমর্মিতা ও সহিঞ্চুতা ফিরিয়ে আনি এবং সহিংসতা না বাড়িয়ে সুষ্ঠ নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের কে সংগে নিয়ে সবাই মিলে দেশের জন্য আরেকবার আমরা ভূমিকা নিয়ে উন্নত দেশে রুপান্তরিত করি। সবাই দেশ প্রেমিক হই এবং দেশকে ভালবাসি। সুস্থ ও সুন্দর থাকি এ কামনায় রইল সবার কাছে।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ