HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন

আবারো করোনা ভাইরাসের নতুন ঢেউ

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ৬৬৯
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমনের নতুন একটি ঢেউয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত বেশ কয়েক গুন এই সংক্রমন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং- ১৭-২০% পর্যন্ত মানুষ আক্রন্ত হচ্ছে। আজকে প্রায় ২০০০ জনের মত আক্রান্ত হয়েছে। দিন দিন ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে জার্মানীতে, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, ব্রাজিলে, ভারতে এবং অন্যান্য দেশেও আবার সংক্রমন মোটামুটি ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু কিছু জায়গায় রেকর্ড ও ভঙ্গ করেছে। যে গনচীনে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি এবং যেখান থেকে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়াসহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই চীনে করোনা ভাইরাসের তেমন একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বর্তমান সময়ে চীনের রাজধানী শহর সাংহাইতে এর ব্যপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশেষ করে উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এক ধরনের জ্বরের লক্ষন পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু এর কারন এখনও পর্যন্ত খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। উন্নত দেশ গুলোতে বিভিন্ন ধরনের টীকা আবিষ্কার হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল হয়তো বা ভাইরাসটি কিছুটা প্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। কিন্তু সেটা না হয়ে নতুন রূপে আবির্ভাব হয়েছে এবং সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুনরায়। তবে আশার বানী এই টুকুই যে মৃত্যুর হার অনেকটা কম। আমাদের দেশটা ছোট হলেও ঘন বসতি। এখানেও হঠাৎ করে এর সংক্রমনের মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশেষজ্ঞরা করোনা ভাইরাসের নতুন ঢেউ প্রবেশ করছে বিধায় সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন সংক্রমনের হার দীর্ঘ সময় ধরে এক শতাংশের নীচে থাকার পর হঠাৎ করে তা কয়েক গুন বেড়ে যাওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার প্রতি নিয়ত বাড়ছে এবং প্রত্যেক দিন দুই/এক জন নতুন করে মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর হার দীর্ঘ দিন ধরে অনুপস্থিত ছিল। যেহেতু আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত তিন মাসে এর প্রবনতা ছিল না বললেও চলে। কিন্তু হঠাৎ করে গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৭ জুন ২০২২ দশ হাজারের উর্দ্ধে লোক সংক্রমনে আক্রান্ত এবং মৃত্যু ছিল বিধায় ৬৯ জন। বর্তমানে এর ব্যপকতা অনেক বেশী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন চীনের সাংহাই, উত্তর কোরিয়া এবং ভারতে যে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে সেই অমিক্রনের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট এস ৪/৫ বাংলাদেশে ও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেটাই সত্য হলো গত বুধবার অর্থাৎ ২২/৬/২২ দুই জনের শরীরে উক্ত ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। সরকারী সংস্থা আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা ডাঃ মুশতাক হোসেন এটাকে দেখছেন একটি নতুন ঢেউ হিসেবে এবং তিনি আশংকা করছেন যে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সংক্রমন আরো অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। আমরা কেউ বলতে পারিনা যে এটা নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট কিনা তবে মনে হচ্ছে এটা অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটা উপ ভ্যারিয়েন্ট বিএ ৪/৫ দ্বারা হচ্ছে। তবে নতুন করে আক্রান্ত হলেও ভয়ের কোন কারন নেই। সংক্রমন যতই শক্তিশারী হোক মোকাবেলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে এবং ভাইরাসটির বৃদ্ধি কমানোর অভিজ্ঞতাও আমাদের রয়েছে ফলে অতিরিক্ত আশংকা বা ভয়ের কোন কারন নেই। যে উপভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে- সেটি অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমন গতির তুলনায় বেশী গতি সম্পন্ন। কারন অতি দ্রæত এটা অনেক মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। বিগত দিনে আমাদের স্বাস্থের উপর যে গুরুতর প্রভাব বিস্তার করেছিল ভাইরাসটি। কিন্তু বর্তমানে হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ভাইরাসটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর কতখানি ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেক্ষেত্রে এখনও খুব একটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি বলে মনে হচ্ছে। সুতরাং ভয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বিগত দিনে যে ভাবে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এবং বর্তমান সরকারের পরামর্শ, আদেশ, উপদেশ এবং সরকারের জাতীয় কারিগরী কমিটির সুপরামর্শে আমরা সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারছি ঠিক তেমনি আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমরা আবারো অমিক্রন নামক ভাইরাসটি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো। যে পরামর্শ গুলো মেনে চললে আমরা ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পাবো। সে সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা এ মুহুর্তে অনেক বেশী। সুতরাং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভিতর সচেতনতা বোধ জাগ্রত করে পরিবারের সকলকে নিয়ে নিরাপত্তার সাথে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারি এবং প্রতিবেশীদেরকে যেন আমরা উদ্বুদ্ধ করতে পারি। সরকার ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে নিজেকে এবং অপরকে রক্ষার জন্য বেশ কিছু টিপস বা পরামর্শ দিয়েছেন এবং আমাদের সে গুলো মেনে চলা উচিত। অবশ্যই বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলতে হবে এবং জনসমাগম বর্জন করতে হবে। মনে রাখতে হবে সংক্রমণ বহুগুনে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের। নতুনভাবে সাবধানতা অবলম্বনের এখন উপযুক্ত সময়। তিনটি জিনিস যদি আমরা অবলম্বন করি তাহলে হয়তো বা ইতি বাচক ফলাফল পাবো। আর যদি আমরা তিনটি জিনিস অবলম্বন না করি তাহলে অন্য রকম ফলাফল পাবো তাতে কোন সন্দেহ নেই। একটি হচ্ছে, আবারো স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা যারা কারোনা টিকা নিয়েছে তাদের বুস্টার নেওয়া, আর যারা বুস্টার নিয়েছে তাদের সতর্ক থাকা। মানুষ যদি এ মুহুর্তে আক্রান্ত হয় তবে বুঝতে হবে স্বাভাবিক ভাবে আগের মত আক্রান্ত হচ্ছে না। এর পিছনের কোন রহস্য আছে কারন ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য বা তার শক্তি নির্মূল করার জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কম প্রচেষ্টা চালায় নি। তবে কেন কিভাবে এই ভাইরাসটি আবারো নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে তা সহজ ভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। এখন থেকে প্রতিরোধের সকল ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। মানুষ নতুন নতুন কোন সাব ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এবং আরেকটি হচ্ছে মানুষের টমিউনিটি ফল(অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে) করেছে বলে আমরা যে ধারনা করছি সেটা কতটুকু বাস্তব সম্মত। এই কাজগুলো সুচারুবাবে সম্পন্ন করা গেলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সব খোলা রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করি। বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ পর্যন্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার থেকে দ্ইু হাজার পর্যন্ত। মাঝে মাঝে আড়াই হাজার পর্যন্ত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে মৃত্যু একেবারে নেই বললেও চলে। দুই একজন করে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। গত দেড়মাসে মাত্র (আমার লেখার আগে) ১৫ জন লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এটা আমাদের জন্য উব্দেগের নয় কিছুটা স্বস্তির। কোন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসলো কিনা, সেটার সংক্রমন ও বা কেমন হবে সেটা বোঝার ব্যাপার আছে। এটা এখনই বলার সময় আসেনি, কোন দিকে মোড় নেবে সেটাও বোঝা মুশকিল। আমাদের জন্য সুখবর যেটা, অনেক বড় বড় দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ভ্যাকসিনেশন কাভারেজ(টিকা দান কর্মসূচী) অনেকটা ভাল অবস্থানে রয়েছে। তাই আমরা কিছুটা আশান্বিত হতে পারি। তবে এটাও ঠিক যদি সংক্রমনের সংখ্যা অনেক বেশী বাড়তে থাকে, অনেক ভাবে মানুষ যদি আক্রান্ত হতে থাকে, কো মরবিডিটি আছে এমন মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে, তখন সেটার প্রভাব কি হতে পারে সেটা সম্পর্কে আমরা এখনোও নিশ্চিত না। তাই এই মুহুর্তে একটাই কাজ আমাদের সেটা হলো কঠোর ভাবে সাবধানতা অবলম্বন করা বা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাটাই করনীয়। অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস মহামারী শুরুর পর কয়েক দফা লকডাউন পালন করা হয়। সরকারী ভাবে যাকে বলা হয়েছিল কঠোর বিধিনিষেধ। তবে পরিস্থিতি উন্নতির সাথে সাথে বেশীর ভাগ বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করা হয়। লকডাউনের কারনে অর্থনৈতিক ভাবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তরুন ছেলে মেয়েরা অনেক ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। শিক্ষা জীবন থেকে অনেকে দূরে সরে গেছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। তাই আর নতুন করে কোন লক ডাউনের বা বিধি নিষেধের প্রয়োজন নেই। দরকার সচেতনতা বোধের। তাই আসুন আমরা সকলেই মিলে আগের সংক্রমন থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ করে বর্তমান সংক্রমণ কে মোকাবেলা করে আমাদের পরিবেশকে বাচাই। আমাদের সন্তানদের রক্ষা করি। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই এবং আমরা আমাদের সন্তানদের আগামী ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার জন্য তাদের শিক্ষা জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। প্রত্যেকটা মা ই যদি সচেতন হয় তবে সেটা সম্ভব হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সর্বোপরি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ি এই হোক আমাদের আজকের প্রত্যয়।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ