HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ন

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে মে মাসের ভূমিকা

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ৫৩৭
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৭ মে, ২০২২

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং ঐ বছর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম বা যুদ্ধ ছিল বহুবিধ ঘটনা, বিরুপ পরিস্থিতি, অসম আর্থিক বন্টন ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বঞ্চনাসহ গুরুতর বিষয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্য সম্পর্কের ক্রমাবনতির চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকেই পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে যে সব ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতি ঘটে, তার মধ্যে ছিল ভূমি সংস্কার, রাষ্ট্রভাষা, অর্থনীতিতে ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে দুই প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য, মনোমালিন্য, মতাদর্শের দুরত্ব, প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন, সার্বভৌমত্ব এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি রক্ষা ব্যবস্থার লাজুক অবস্থা এবং এছাড়া অন্যান্য বিষয়, ফলে উভয় দেশের সকল মানুষের অধিকার সমানভাবে বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের অবকাঠামো, এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রামের এবং মুক্তিযুদ্ধের ডাক। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ২৬শে মার্চ ১৯৭১ শুরু হয়ে গেল বাংলার স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। গত লেখার ভিতরে ২৬শে মার্চ থেকে এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাজনৈতিক ভাবে বা সামাজিক ভাবে যে ভূমিকা রেখেছিল তার মাধ্যমে কিছু আলোচনায় আনার চেষ্টা করছি। ১৯৭১ সালের মে মাস ও স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বাংলার ছেলেরা দুঃসাহসের সাথে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সারা মে মাস জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা এবং জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মীরা ক্যান্টনমেন্টের বাইরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, শহর গুলোর বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের অভিযান এড়াতে রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। ঐ সময়ের দিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাস্তায় যাকেই দেখতে পায় তাকেই আক্রমণ করে। সামনে পড়া সবকিছু ধ্বংসের হুমকি দেয়। বাছ-বিচার না করে শহরের মানুষ ও সরকারি বা বেসরকারি সব বাড়ি বিধস্ত করে চষে বেড়ায় সৈন্যদের ট্যাঙ্ক, কামান ও বন্দুকের গোলায় ধ্বংস করে দেয় বহু আবাসিক এলাকা, মুক্তিবাহিনী শুরুতে প্রতিরোধ মূলক অনেক গুলো যুদ্ধে শত্রুর বিরুদ্ধে সফল ভাবে লড়াই করে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সামরিক পশ্চাদপসরন করতে হয়। মে মাসের শুরুতে মুক্তি বাহিনী অবশ্য কিছুটা পরে হলেও সুসংগঠিত হয়ে উন্নততর অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে নব উদ্দীপনায় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণচীন সহ অনেক পশ্চিমা দেশ এ যুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে কৌশলগত ভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়। অপর দিকে বিশ্বের পরাশক্তির অন্যতম শক্তিশালী দেশ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত ও তাদের কিছু মিত্র দেশ এবং জাপান ও পশ্চিমা দেশের অনেক জনগন বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দেয়। ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধকে আর ও তরান্বিত করার জন্য এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। মে এর মাঝামাঝি সময়ে সকল বড় বড় শহরের পতন ঘটানোর মধ্যে দিয়ে অপারেশন সার্চ লাইটের প্রধান অংশ শেষ হয়। এই সামরিক আক্রমণ ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে তরান্বিত করে। এই গণহত্যা বাঙালীদের ক্রুদ্ধ করে তোলে, যে কারনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালী অফিসার ও সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং বহু মানুষকে শরণার্থী রুপে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়। এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং সাহসী বাঙালীরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। প্রথম দিকে বাঙালীদের প্রতিরোধ ছিল স্বতঃস্ফুর্ত কিন্তু অসংগঠিত। এই প্রতিরোধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। তবে পাকিস্তানী বাহিনী সাধারন নাগরিকদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে পরিস্থিতি দ্রæত পাল্টে যায় এবং প্রতিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে। ক্রমশঃ মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা বাড়তে থাকে। পাকিস্তানি সেনা বাহিনী তাদের দমনে সর্বাতœক চেষ্টা করে। কিন্তু অধিকাংশ বাঙালী সৈনিক পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে গুপ্ত সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। মে মাসের শেষ নাগাদ অধিকাংশ মুক্তাঞ্চলের দখল নেয়। এই সময়ে রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি আধা সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়। মূলত মুসলিম লিগ ও অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের সদস্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী বাঙালী এবং দেশ ভাগের সময় আসা বিহারী মুসলিমদের নিয়ে এই দল গুলো গঠিত হয়। মার্চের শেষ দিক থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থক ও সংখ্যা লঘুরা বিশেষভাবে তাদের রোষের শিকার হয়। আক্রমণ থেকে বাঁচতে দলে দলে মানুষ ভারতের সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া শরণার্থীদের এই ¯্রােত নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এই সময়ে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে আশ্রয় নেয়, পাকিস্তানি সেনাদের ওপর মুক্তি বাহিনীর গেরিলা আক্রমণ অব্যাহত থাকে। কিন্তু অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের অভাবে যুদ্ধ পরিকল্পিত রূপ লাভ করতে করতে জুন মাস ও পার হয়ে যায়। এই ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এবং পরিকল্পিত ভাবে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য মে মাস টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে অভিহিত করে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং সকল পর্যায়ের রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী এবং সাধারণ জনগন ঐক্যবদ্ধ ভাবে সম্মুখ ভাগে অগ্রসর হতে লাগলো পাক দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সুতরাং স্বাধীনতা যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করার জন্য ও কৃষক শ্রমিক এবং ছাত্রদের আরও ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য উপরের মহল থেকে এই মে মাসেই নির্দেশনা আসে । তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে মে মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে আমরা কোন ভাবে অগ্রাহ্য করতে পারি না। সুতরাং মে মাসও বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অতীব তাৎপর্যপূর্ন।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারি অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ