HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫০ অপরাহ্ন

মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস জে.এন-১ ধরন দ্রুত ছড়াচ্ছে

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ৩৬০
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৪

মহামারী করোনা কোভিড-১৯ নভেম্বর এর ভয়ংকর থাবা সারা বিশ^কে প্রকম্পিত করে তুলেছিল। ভয়ে মানুষ দিশে হারা হয়ে পড়েছিল। করোনায় আক্রান্ত এমন দুঃসংবাদ শোনার আগেই মানুষ সেই গ্রামে বা বাড়ীতে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিয়েছিলো। গ্রাম, বাড়ী লক ডাউন ছিল। এমন কি কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার মৃত স্ত্রী, ছেলে বা মেয়েকে, ভাই বা বোনকে এমনকি পাড়া প্রতিবেশীর লাশ দেখতেও যেমন যেতে পারেনি তেমনি স্পর্শ ও করতে পারেনি। সরকারী কিছু লোক জন এবং প্রশাসনের কিছু লোকজন লাশটাকে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেছেন। সারা পৃথিবীতে স্কুল, কলেজ, বিশ^ বিদ্যালয়, প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকান্ড হাটবাজার গাড়ী ঘোড়া চালানো অনেকটা বন্ধ হয়ে যায় এবং এর হাত থেকে বাচার জন্য গবেষকরা বিভিন্ন গবেষনা চালিয়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে লাগলেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ও অনেক টা বন্ধ হয়ে গেল এবং অটো পাসের ব্যবস্থা করা হলো। এভাবে তিন চার বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই আবার সেই গণচীন যেখান থেকে করোনার আবির্ভাব, সেই গনচীনে আবার অত্যন্ত ভয়াবহ ধরণ জে এন-১ নিয়ে হাজির হলো। গনচীন থেকে বর্তমানে এখন ভারত এর বিভিন্ন প্রদেশে এই ভাইরাসটি হানা দিতেছে। সুতরাং এখন থেকে বিগত দিনের অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে কিভাবে চললে বা কাজ করলে আমরা সকলেই এর নিষ্ঠুর থাবা কে নিজেদের রক্ষা করতে পারি এবং অপরকে বাচাতে পারি তার ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখা উচিত চীন থেকে শুরু করে এ মুহুর্তে করোনার অমিক্রণ ধরনের একটি উপধরন এশিয়া মহাদেশসহ সারা বিশ^জুড়ে দ্রæত ছড়াচ্ছে। এর নামকরণ করা হয়েছে জে এন-১। দ্রæত ছড়ানোর কারনে বিশ^জুড়ে এটিকে “ভ্যরিয়েন্ট অব ইন্টারেক্ট” হিসেবে অভিহিত করেছে ডড়ৎষফ ঐবধষঃয ঙৎমধহরুধঃরড়হ। শুধু চীনে বা ভারতে নয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মান, ফ্রান্সসহ অনেক দেশে করোনার জে এন-১ ধরন পাওয়া গেছে। এ মুহুর্তে চীনে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ জে এন ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রায় শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। অপর দিকে ভারতে ও প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার মানুষ এই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যেও একই রকম সংবাদ আসছে। বাংলাদেশে এই রকম ধরন এখন ও পর্যন্ত দেখা যায়নি তবে করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল হয়নি। প্রতিদিন আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় অর্ধশতাধিক থেকে শতাধিক মানুষ এবং মৃত্যুর সংবাদ তেমন একটা নেই। মাঝে মাঝে দুই একটা মৃত্যু সংবাদ হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশে শিশু থেকে বৃদ্ধ লোক পর্যন্ত সকল শ্রেণীর মানুষের করোনা প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ঠধপপরহব দুই বা ততোধিক বার প্রয়োগ করা হয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশে এর ভয়াবহতা অনেক কম এবং সে তুলনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ও কম। এমুহূর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ঘোষনা করেছেন যারা তিনটা ডোজ সম্পন্ন করেছেন তাদের আরো একটা ডোজ নেওয়ার জন্য। আমাদের দেশে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পৃথিবীর অন্য অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী। তাছাড়া আমাদের দেশের মানুষ এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত অনেক সতর্ক। ডড়ৎষফ ঐবধষঃয ঙৎমধহরুধঃরড়হ বলেছেন, বর্তমানে এ ধরনের সংক্রমণজনিত স্বাস্থ্য ঝুকি অনেক কম এবং বিদ্যমান টিকাগুলোই এ ধরন থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে। তবে সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, শীতের মৌসুমে- এ ধরনের ভাইরাস বা কোভিড এবং অন্যান্য সংক্রমনের প্রকোপ ও গতি বাড়তে পারে। উত্তর গোলার্ধে ইতিমধ্যে জ.ঝ.ঠ এর মতো শ^াসযন্ত্রের বিভিন্ন ভাইরাস ও শিশুদের নিউমোনিয়ার হার বাড়তে দেখা গেছে। কোভিডের জন্য দায়ী ভাইরাসটি শুরু থেকেই ধারাবাহিক ভাবে রূপ পাল্টাচ্ছে। এর কয়েকটি ধরণ ও তৈরী হয়েছে ইতিমধ্যে। মাঝখানে কিছুদিন বিশ^জুড়ে অমিক্রন ধরনটির আধিপত্য দেখা গিয়েছিল। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বর্তমানে অমিক্রন সংশ্লিষ্ট জে এন-১ উপধরন সহ ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেক্ট গুলোর সংক্রমনের হার সনাক্তের চেষ্ট করছে। যদিও এর কোনটার দুশ্চিন্তার বা উদ্বেগের কারন নয়। কোন ভয় ও এ মুহুর্তে নেই। শীতের প্রকোপ ও তেমন একটা নেই। এ বছর হয়তো বা শীত তেমন একটা পড়তে না ও পারে। সুতরাং সর্দি কাশি বা শ^াসকষ্ট জনিত রোগের প্রকোপ ও তেমন একটা দেখা নাও যেতে পারে। এর পরও সতর্কতা ও সাবধানতার শেষ নেই। প্রত্যেকটা কাজের পেছনে যদি পরিকল্পনা থাকে এবং সেই মোতাবেক যদি চলা যায় তবে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রকোপ থেকে নিজেকে সুরক্ষা করা যায়। তবে এখনও পর্যন্ত যে সংবাদ শোনা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় বিশে^র অনেক প্রান্তে জে এন-১ দ্রæত গতিতে ছড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমানে এ ধরনের অমিক্রন নামক উপধরনটি বেশী ছড়াচ্ছে। মোট করোনা সংক্রমনের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশই এ উপধরনের কারনে হচ্ছে। ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বর্তমানে একটি পরীক্ষাগারে যতগুলো করোনা পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক বা পজিটিভ আসছে তার প্রায় সাত শতাংশ জে এন-১ ধরন থেকে এসেছে এবং এজন্য এ উপধরনটি দায়ী। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুকি সংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিশেষ করে যে সব দেশে শীত মৌসুম শুরু হয়েছে, সেখানে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত অন্যান্য সংক্রমনের পাশাপশি এ ধরনের কারনে সার্স কভ- ২ (করোনা ভাইরাস) এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টীকার কারনে যে ইমিউনিটি তৈরী হয় তা দিয়ে জে এন-১ থেকে কতটুকু সুরক্ষা মিলছে, সে ব্যাপারে খুব বেশী প্রমান এখনো পাওয়া যায়নি। সংস্থাটি মনে করছে স্বাস্থ্যের ওপর এ ধরনের প্রভাব নির্নয়ে আরও গবেষনা হওয়া প্রয়োজন।
বিশে^র সকল দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের মনে রাখা দরকার এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে এক কোটি অর্থাৎ ৭৫,০০,০০০ (পঁচাত্তর লাখ) মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। যুক্তরাষ্ট্রে, ভারতে, যুক্তরাজ্যে, জার্মানীতে এবং রাশিয়া ও ইতালিতে সব চেয়ে বেশী। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। তারপর ও প্রায় ৬৫০০০ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাই এখন থেকে সতর্ক হওয়া উচিত আমাদের। এবং করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এখনও পর্যন্ত খুব একটা সুস্থ্য বোধ করেননা। এ মুহুর্তে আমাদের দেশের বিভিন্ন শহরে বন্দরে এবং হাইওয়ে রাস্তার দুই পাশে যে সমস্ত বড় বড় রেসিডেনশিয়াল হোটেল বা রেস্টুরেন্ট আছে। মাঝে মাঝে দেখা যায় সেগুলো বেশ অপরিষ্কার। চারদিকে আবর্জনা ময়লা এবং নোংরা। হোটেলের ব্যাসিন গুলোতে অনেকেই কাশি সর্দি ও থুথু ফেলায়। এগুলো কোন ভাবেই ফেলানো উচিত না। যাদের সর্দি কাশি বা হাঁফানী আছে তাদের কোন হোটেলে বা রেস্তোরায় খাওয়া দাওয়া উচিত নয়। আর বিভিন্ন হোটেল বা রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ থাকবে কাষ্টোমাররা যাতে বেসিনে থুথু বা সর্দি কাশি না ফেলায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কাষ্টোমারদের সতর্ক করে দেওয়া। আমাদের দেশে বিভিন্ন হাটবাজারে গ্রাম, গঞ্জে, মোড়ে বা অলিতেগলিতে ইদানিং কালে চায়ের দোকান তৈরী হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই গ্রামের মানুষ চায়ের দোকান গুলোতে সকাল বেলা একটা বিস্কুট বা টোস্ট বা একটা পাউরুটির সাথে এক কাপ চা পান করার জন্য ভীড় জমায়। কিন্তু দেখা গেছে স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতন ব্যক্তিরা চায়ের দোকানে এক কাপ চা পান করার আগেই তারা দোকানের আশে পাশে সর্দি বা কাশি ফেলায়। যেটা অত্যাধিক অরুচির পরিচয়ক এবং পরিবেশ দুষনের অন্য একটি কারন। তাই চা বিক্রেতাদের উচিত তাদের দোকানসহ চার পাশের পরিবেশ সুন্দর রাখা এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রত্যেক ক্রেতাকে মনে করিয়ে দেওয়া পূর্বের মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের কথা। এবং কোন ভাবেই যেন চায়ের দোকানে বা আশে পাশে কফ বা থুথু না ফেলা। মনে রাখা উচিত এই কফ, থুথু, সর্দি বা কাশি উক্ত ভাইরাসের একটা অংশ এবং খুব দ্রæত ভাইরাসটি চার দিকে ছড়াতে থাকে। তাই আসুন আবারও আমরা সবাই মিলে আমাদের পরিবেশকে দুষণের হাত থেকে বাচাই। বিপর্যয় থেকে রক্ষা করি। নিজেদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলি। অপরকে উপদেশ দেই। করোনা ভাইরাস এর ছোবল থেকে নিজেদের বাঁচাই, দেশকে বাঁচাই, অন্যদেরকে বাঁচাই এবং দুষণ মুক্ত সুন্দর পরিবেশ তৈরী করি। সবাইকে সাবধান ও সচেতন করি। আবারও সরকারকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জোর অনুরোধ করছি।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ