HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৮ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের জন্ম ও বাঙ্গালি জাতির পরিচয়

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ২৫৪
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর । নির্যাতন নিপীড়ন হত্যা ষড়যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের উপর এতটাই তীব্র হয়েছিল  যে আর সইতে না পেরে পরিশেষে বঙ্গবন্ধু জাতির জনক ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু স্বাধীনতা আসলে কি? এর মর্মকথা বা কি? আমরা -২৬ মার্চ স¦াধীনতা দিবস পালন করি। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যা দিবস পালন করি। ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে কোন দিবস হিসেবে পালন করি। পরিশেষে বাঙালি জাতির মুক্তির দিন বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর। বিজয় দিবস বা জাতীয় দিবস পালন করি। এই দিনটি এমন একটা দিন সব বাঙালি মনে করে আমরা সকল ধরনের অনাচার অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছি। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এবং বাঙালিরা কাংখিত গন্তবো পৌছে গেছে তারা মুক্তি পেয়েছে অর্থনীতিতে, মুক্তি পেয়েছে পরাধীনতার হাত থেকে স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে, মানববিক ভাবে বসবাস করতে, বাক স্বাধীনতার এবং পছন্দ মত চলতে এবং প্রতিনিধী নির্বাচন করতে আনন্দে উল্লাসে আমরা মেতে উঠি  ঐ দিন ঢাক ঢোল পিটিয়ে সুন্দর কাপড় চোপড় পরিয়ে শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং বিভিন্ন কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান সমাপ্ত করে যার সেই বাড়ী ফিরে  যাই। খুব ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখা যায় স্কুল কলেজের ছাত্র- ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কচি কচা ছোট ছোট শিশুরা এবং শিক্ষক বৃন্দরা। আসলে ঐ দিন লক্ষ লক্ষ জনতা কে ঘর থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনারে আসা উচিত, যারা রক্ত দিয়েছে, আতœহুতি দিয়েছে, জীবন বাজী রেখে, দেশের মুক্তির জন্য, অর্থনীতির মুক্তির জন্য, নিশ্চিন্তে ভয় ভীতি হীন ভাবে জীবন যাপন করার জন্য। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই ও সংগ্রাম করেছে, রক্তে রঞ্জিত করেছে রাজপথ। তাদের মাজারে যেয়ে বা শহীদ মিনারে যেয়ে তাদের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনার জন্য কিন্তু আমরা সেটা করতে পারছিনা। আসলে স্বাধীনতা কি? মুক্তির সংগ্রাম কি? স্বাধীন বাংলাদেশ কি? এটাইতো আমরা জানি না। হয়তো এমন ও দিন সামনে আসছে আমরা একেবারে তাদেরকে ভুলে যাবো। তাই আসুন বাংলাদেশকে নতুন ভাবে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এবং প্রকৃত স্বাধীনতায় বাংলার জনগনকে উজ্জীবিত করার জন্য “স্বাধীনতা ও মুক্তির” উপর জোর দেই। স্বাধীনতা বলতে আমরা বুঝি একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাস রত ব্যপক জনগোষ্টির ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সমাজনীতি, মুক্তি, রাজনীতি, জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে নিজস্ব রীতিনীতি স্বক্রীয়তা অটুট রেখে জাতির ম্যান্ডেট নিয়ে জন প্রতিনিধির শাসনে পরিচালিত হতে পারার আশ^াস বা গ্যারান্টি। এমন গ্যারান্টি যুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের বাংলাদেশ, এ জাতিকে বেচে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন, জীবন বাজী রেখে জনগনের মুক্তির জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন, সে আর কেউ নয়, জাতির স্থাপতি, রূপকার এবং প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  এবং  তাকে সাহায্য করেছিলেন, অনুপ্রানিত করেছিলেন তার প্রাণ প্রিয় সহধর্মিনী এবং বিভিন্ন কর্মে উৎসাহিত করেছেন তার কাছে থাকা নিবেদিত কিছু কর্মী। ধারাবাহিক পরিকল্পনা, দুরান্ত সাহস, অদমনীয় ইচ্ছা, আর জীবন বাজী রেখে নিরলস সংগ্রামের মাধ্যমে তিনিই পৃথিবীর মানুষের কাছে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালিদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীতে যে কোন দেশের স্বাধীনতা এমনিতে আসে নাই। স্বাধীনতা বা মুক্তি এমন একটি অমূল্য সম্পদ যা স্বর্ণ দিয়ে কেনা যায় না। অর্থ দিয়ে কেনা যায় না। এমনি এমনি  জীবনে আসে না। কুড়িয়ে পাওয়া যায় না কিংবা ইচ্ছা করলে বা “স্বাধীন হয়ে যাও মুক্ত হও” বললেই হয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। কোন এক সেমিনারে মমতাজ উদ্দীন আহমেদ (অধ্যাপক) বলে ছিলেন, “স্বাধীনতা মামার বাড়ীর আবদার নয়” মুক্তযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ কোন অর্বাচিন যুবকের হটকারিতা নয়। সাধারন ভাবে রাষ্ট্র একটি স্থায়ী ধারনা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক ও প্রতিজ্ঞার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্র ছাড়া স্বাধীনতার প্রিয় জনগন ও আত্মতৃপ্তি নিয়ে বেচে থাকতে পারে না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার রাষ্ট্রের সব ধারনের জন গোষ্টির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে তাদের আশা আকাঙ্খা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবে এটাই প্রতাশিত ও স্বীকৃত নিয়ম। একটি রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নির্ভর করে সরকারের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগনের জাতীয়তা বাদীর চেতনা, তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন, তাদের  জীবন মান উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় কতটুকু ন্যায়ানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে তার ওপর। রাষ্ট্রের সকল সম্প্রদায়, সকল জন গোষ্টির, কিংবা সব অংশের জনগনের প্রতি সমান আচরণ, সম বন্টন, সম মর্যাদার ন্যায় ভিত্তিক সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে জনমনে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়। জনগন যেহেতু রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল এবং রাষ্ট্রই সকল সমস্যার সমাধান করবে জনগনের ন্যায় সংগতি অধিকার প্রতিষ্ঠার। তাতে ব্যাতয় ঘটলে বা সরকার জনগনের এই ক্ষোভ বা হতাশার কারন অনুসন্ধান করতে পারলে বা কোন ভাবে ব্যর্থ হলে জনগন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে সরকার পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক নানা কৌশল, পরিকল্পনা মাফিক আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। সরকারের অতিমাত্রায় শাসনে বা ক্ষমতায় বা আচরনে ও ব্যবহারে বিশেষ করে জাতি ও সম্প্রদায়গত বৈষম্যের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠলে এবং নিয়মতান্ত্রিক পথে এর সমাধান দু: সাধ্য হয়ে উঠলে সকল জনগোষ্ঠির অনিয়মতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হয়। জনগন  যদি একবার এ পথ ধরে অগ্রসর হয় সে ক্ষেত্রে যে সমাধান জনগনের সামনে এসে দাড়ায় সেটা হচ্ছে তাদের মুক্তির বা স্বাধীনতা যা কোন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠির সম্প্রতি নষ্ট করে, রাজনীতির ভেতরে বিভাজন দ্ব›দ্ব বা সংঘাত তৈরী করে। জাতিকে পৃথক করতে পারে এবং মুল ভূখন্ডকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ফেলে, এর উৎকৃষ্ট উদাহরন: পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। এখন পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামে পরিচিত। আরও একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যায় বাংলাদেশের জনগনও দুই ভাগে বিভক্ত একটি অংশ আওয়ামী লীগ নির্ভরতার উপর এবং অন্য টি বি.এন.পি. নির্ভরতার উপর। এক্ষেত্রে উভয় ক্ষেত্রের আলোচনার ভিত্তিতে অনেক সময় ভালো সমাধান ও আসতে পারে তা না হলে কোন এক পক্ষের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এর একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আছে। যেমন ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তির জন্য বহু বছর ধরে নানা আন্দোলনের এক পর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে ১৯৪৭ সালে। ভারতের শেষ ভাইস রয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের সংগে সমঝোতার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ভারত বিভাগের ঘোষনা করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর ওহফরধহ রহফবঢ়বহফবহপব ধপঃ অর্থাৎ ইন্ডিয়ান স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই রাজকীয় স্বীকৃতি ভাল করে। ঐ একই বছরে ১৪ ও ১৬ আগষ্ট যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। এর পর ২য় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি হলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক ঔপনৈবেশিক কলোনি সমোঝতার মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। এর পর ১৯৮০-১৯৯০ দশকের দিকে পরাশক্তির সোভিয়েত, রাশিয়া থেকে সমঝোতার ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে লাটভিয়া, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান সহ ৭টি সোভিয়েত অঙ্গরাজ্য। অন্যদিকে আহমদ সুকর্ন ও হাত্তা ১৯২৯ সাল থেকে কলোনি ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তা বাদী দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন এবং দীর্ঘকাল ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সংগে যুক্ত ছিলেন তারা ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষনা স্বাক্ষর করেন এবং তা ১৯৪৫ সালের ১৭ অগাষ্ট ঘোষিত হয়। হলান্ড দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে এই স্বাধীনতা ঘোষনা কে স্বীকার করে নেয়। তবে ইতিহাসে দেখাগেছে, অনেক ক্ষেত্রে শত শত বৈপরীত্য সত্তে¡ও শোষক গোষ্ঠী স্বাধীনতা কামী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে নানা কলা কৌশলে অস্বীকার কিংবা অস্ত্রের মাধ্যমে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট জনগোষ্টীকে একই মন্ত্রে উজ্জীবীত হয়ে একই কাতারে সামিল হয়ে, একই লক্ষ্য  নিয়ে , বিনা প্রশ্নে নি:স্বার্থভাবে জানমাল সমর্পণ করার প্রস্ততি ও নেওয়া লাগতে পারে। আর এ ধরনের প্রস্তুতি ও নেওয়া লগতে পারে। আর এ ধরনের প্র¯ুÍতি জন্য জনগনকে মানসিক ও শারিরীক এবং সংগঠনিক ভাবে উপযুক্ত করতে তৈরী করতে প্রয়োজন হয় কৌশলী ও দুরদৃষ্টি সম্পন্ন দক্ষ, যোগ্য, বিচক্ষন এবং নি:স্বার্থ নেতার। কারন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রক্রিয়া যেমন দীর্ঘ যুদ্ধের ফলাফল ও তেমন অনিশ্চিত। এর প্রকৃত উদাহরন আমাদের চোখের সামনে। আবার ভূখন্ডে ফিলিস্তিনি জাতি প্রায় ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাবার পরও স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। বর্তমান প্রেক্ষাপট তো ট্রাজেডীতে ভরা। তাদের বর্তমান পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষন করলে চোখের পানি থামিয়ে রাখতে পারবেন না। কি নিষ্ঠুর নির্যাতন সেখানে নারী ও শিশুদের উপর চালানো হচ্ছে। এমন কি হাসপাতাল গুলোতে এখন হাজার হাজার শিশু ও নারী আহত অবস্থায় ভর্তি। সেখানেও নির্বিকারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। মানবতা এখন কোথায়? সারা বিশ্ব এখন নিরব। ইসরায়েল এ মুহুর্তে কাউকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমন কি জাতি সংঘকেও না কি হবে। ভবিষৎ ফিলিস্তিনিদের একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। এর পর আরও অনেক ইতিহাস আছে, ইয়ান স্মিথ রোডেশিয়ার শেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৬৫ সালের ১১ নভেম্বর রোডেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। এই সংখ্যা লঘু সরকার কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যা গরিষ্ট্যদের শাসনের বিরোধী থাকার কারনে ব্রিটিশ সরকার কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘ এই স্বাধীনতা ঘোষনা কে অবৈধ ঘোষনা করে। পরবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্টের সরকার প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮০ সালে রোডেশিয়া  জিম্বাবুয়ে নামে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত কোন রাষ্ট্রের একাংশের অধিবাসীদের স্বাধীনতা ঘোষনা আন্তর্জাতিক আইন সমর্থন করে না। তবুও শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ট জন গোষ্টির আকাংখার জন্ম হয়। আজকের স্বাধীন সর্বভৌম, উন্নয়নশীল সমৃদ্ধশালী এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেদিন টা আমাদের কাছে বিজয় দিবস এবং জাতীয় জীবনে স্বরনীয় এ কথা আমরা সকলেই জানি। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস আজও আমাদের কাছে এবং অনেকের জীবনে অধরা। জাতি হিসেবে আমরা বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশী এটাই পৃথিবীর সব জায়গায় আমরা পরিচিত। কিন্তু এখান থেকে ৫২ বছর আগে আমাদের এই পরিচয় ছিল না। ১৯৭১ সালের পূর্বে এবং ১৯৪৭ এর পর থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত আমরা ছিলাম পাকিস্তান নামক একটি দেশের পূর্ব পাকিস্তান নামক একটি প্রদেশের বাসিন্দা। সেখানে আমাদের অবস্থান ছিল মোটা মোটি শাসন, শোষন, বৈষম্য ও অধিকার হীনতার। এছাড়া তারও প্রায় ২৫০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসন সহ যুগে যুগে নানান জাতি গোষ্ঠীর শাসন শোষনের যাতাকলে আমরা বাঙালিরা পিষ্ঠ হয়েছি। শেষ মেষ সাড়ে নয় মাস পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বসস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়। আর এ সংগ্রামে, এ আন্দোলনে, এ যুদ্ধে, এ লড়াইয়ে সমগ্র বাঙালি জাতিকে অর্থাৎ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টান সকলকে এক কাতারে সামিল করে এগিয়ে নেওয়ার কঠিক কাজটি নিখুত ভাবে সুপরিকল্পিত হয়ে ইস্পাত কঠিন দৃয় শপথ নিয়ে অত্যন্ত সুচারু ভাবে সম্পন্ন করেছেন বলিষ্ঠ নেতৃত ¡দানকারী বাঙলার দুর্দান্ত সাহসী হিমালয়ান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির সর্ব শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তান বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব বাংলার বৃটিশ শাসন আমলে মাষ্টার দ্য সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সহ অনেকেই ব্রিটিশ সা¤্রাজ্য বাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করলে ও তা ছিল অসময়োচিত, অপরিকল্পিত ও অদুর দর্শি পদক্ষেপ। তার প্রধান কারন এ সকল সংগ্রাম, আন্দোলন সকল শ্রেনীর পেশার মানুষকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন ছিল তা উনারা করতে পারেননি। ফলে তারা সফল হতে পারেননি। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টির পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সম্মেলন কোলকাতায় আয়োজন করা হয়। তাতে কমরেড কুমার মৈত্র পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার প্রস্তাব তুলেছিলেন। ঐ সম্মেলনে ৩০/৩২ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। কিন্তু তার দাবি শেষ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। বাংলাদেশে ১৯৬২ সাল থেকে “অপূর্ব সংসদ” নামে একটি সংগঠন ছাত্রদের বিভিন্ন দাবি দবা নিয়ে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা কর্মকান্ডের আড়ালে ছাত্র জনতাকে স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত করার প্রয়াস পেয়েছিল। এবং এই সংগঠন প্রধান সমন্নয়কারী ছিলেন আব্দুল আজিজ বাগমার। তিনি ছিলেন ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংস্থার সেক্রেটারী। পরবর্তীতে এই সংগঠনের সংগে যুক্ত হয়েছিলেন দোরাম ইডেন কলেজ শাখার তৎকালিন সেক্রেটারী নাজমা রহমান, ড. আহমেদ শরীফ, অধ্যপক মোফাইল হায়দার চৌধুরী, বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যপক আব্দুল হাই, শওকত ওসমান প্রমুখ। তবে তারা ব্যর্থ হন। তাদের কার্যক্রম ব্যাপক জনগনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারেনি। পূর্ব বাংলার মজলুম জননেতা হিসেবে পরিচিত মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানি শাসক গোষ্টির বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে “আস-সালামু আলাইকুম” বলেছিলেন। কেউ কেউ তার উক্তিকে পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলাকে পৃথক করার হুসিয়ারী হিসেবেও দেখেন। বামপন্থী সংগঠন কমিউনিষ্ট পার্টি পূর্ব বাংলার জনগনের শোষন মুক্ত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার লক্ষে নানা কর্মসূচী হাতে নিলেও স্বাধীনতার কথাটি তখনও কেউ স্পষ্ট করেনি যেমনটি ষাটের দশকের শুরুতে কমিউনিষ্ট পার্টির গোপন সভায় করেছিলেন শেখ মুজিব, ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মতো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন গনতান্ত্রিক নেতা ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খন ভাসানির মতো মাঠচষা নেতাদের মত ভাবশিষ্য। বলা যায় তাদের হাত ধরেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। কিন্তু তারুন্য যৌবনের জয়যাত্রা তার চিন্তা চেতনা ছিল ঐ দুই নেতার তুলনায় অনেক স্পষ্ট, যুক্তি সঙ্গত, যথার্থ, আধুনিক ও অগ্রসর, বিশেষ করে বাংলার স্বাধীনতা  প্রশ্নে জানা যায় ৬১ সালে লন্ডনের এক হোটেলে শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দীকে “পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন হতে হবে” বললে সোহরাওয়ার্দী রেগে গিয়েছিলেন। শেখ মুজিব প্রবীন নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে তাদের রাজনীতির অভিজ্ঞতার ও মেধার যাচাই করতে পারলেন এবং এটুকুই বুঝতে পারলেন যে, তাদের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা একেবারে অসম্ভব। কারন তাদের জনগনের নামে গ্রহন যোগ্যতা অনেক কম। তিনি ১৯৫৫ সালের ২১,২২,ও ২৩ অক্টোবর দলের সম্মেলনে সাধারন সম্পাদকের প্রতিবেদনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দ তুলে দিয়ে জাতির কাছে এক অসম্প্রদায়িক গন প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার মাধ্যমে দলটি দলমত নির্বিশেষে গন প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার উদ্দোগ নেয়। শেখ মুজিব কমিউনিষ্ট পার্টির সাথে এক গোপন বৈঠকে (১৯৬১ সালের শুরুতে) বলেছিলেন, একটা কথা আমি সরাসরি বলতে চাই, আমাদের বিশ্বাস গনতন্ত্র, স্বায়ত্ব শাসন এসব কোন দাবিই পাকিস্তানিরা মানবে না। কাজেই স্বাধীনতা ছাড়া কোন পথ নেই বাঙালিদের মুক্তির জন্য। ১৯৬৬ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে বঙ্গ বন্ধু ছয় দফা ঘোষনা করলে পাকিস্তান সরকার একে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে বিছিন্ন করার চক্রান্ত হিসেবে প্রয়াস চালায়। দেশ ব্যাপী বঙ্গ বন্ধু ছয় দফা প্রচারে সাড়া পড়েগেল এবং গোটা বাঙালি তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে শত শত লোক গ্রেফতার হলে লাগল, এর পর ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তান সরকার প্রায় দিশে হারা হতে লাগলো এবং পরিশেষে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যপক হত্যাযজ্ঞ চালালো এবং শত শত মানুষ নিহত হলো তখন বঙ্গবন্ধু ঐ দিন বুঝতে পেরেছিলেন তিনি গ্রেফতার হতে পারেন এবং তাৎক্ষনিক ভাবে তিনি স্বাধীনতা ঘোষনা দিলেন। এবং ঐক্যবদ্ধ সমগ্র বাঙালিকে এবং সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ বাহিনী সবাই মিলে তাদের মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত যতোই ঝরুক বাংলাদেশকে মুক্ত করতেই হবে। এসময় তোমরা অকুতোভয় সাহসী সৈনিকের মত যুদ্ধ করবে। রক্ত দিতে হয় আরো দেব । দেশকে স্বাধীন করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। তার স্বপ্নই স্বার্থক হলো। সারাদিন লিখলেও বাংলাদেশের ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস শেষ করা যাবেনা। পরিশেষে এটুকুই বলবো, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখাযায়, স্বাধীনতার প্রয়োজনের কথা অনেকেই আকার ইঙ্গিতে ঘরোয়া আলোচলায় বিভিন্ন সময় বললেও কেউ একটা লক্ষ্যে জনগনকে একত্রিত বা সংগঠিত করে সুনির্দিষ্ট কোন কার্যক্রম হাতে নিতে পারেন নি। জেল জুলুম সহ্য করে মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে সময়োপযোগী ও দুরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এক একটি বাধা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অধিকার আন্দোলন কে স্বাধীনতা সংগ্রামে রুপ দিয়েছেন তা আর কারোর সাহসে সম্ভব হয়নি। সুতরাং বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ পরিচিতি পায় আলাদা জতি হিসেবে, এই জন্যই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও বিশ্ব দরবারে বাঙালিদের আতœ পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে।


লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ