HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

কয়রায় স্বেচ্ছাশ্রমে বেঁড়িবাঁধ মেরামত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দক্ষিণ বেদকাশির মানুষ

কয়রা প্রতিনিধি / ৩৯৪
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২

দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা কয়রার দক্ষিন বেদকাশি ইউনিয়নের মানুষের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছে ইউনিয়টি। আবারও চোরামুখার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় ৫ গ্রামের অসহায় মানুষ। তবে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধটি বাধা সম্ভব সম্বব হওয়ায় স্বত্তির নিঃশ^াস ফেলল হাজার হাজার মানুষ। সোমবার ভোর থেকেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন ভাঙা ওই বাঁধের স্থানে। ততক্ষণে ভাটার টান পড়েছে কপোতাক্ষ নদে। ভোর ৬ টায় দূর-দূরান্ত থেকে কেউ হেঁটে, কেউবা নৌকা-ট্রলারে করে নিজ নিজ দায়িত্বে ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে বাঁধ বাঁধতে চলে এসেছেন। মাইক হাতে একজন আহŸান জানালেন সবাইকে কাজে নেমে পড়ার জন্য। এরপরই শুরু হলো স্বেচ্ছাশ্রমে দক্ষিণ বেদকাশি এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ। কেউ বস্তায় মাটি ভরছেন আবার কেউ মাটির ওই বস্তা নিয়ে ফেলছেন ভাঙা বাঁধের স্থানে। কেউবা ব্যস্ত বাঁধ ও খুঁটি পোঁতার কাজে। বসে ছিলেন না নারীরাও। ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত মানুষকে পানি খাইয়ে, এটা ওটা এনে দিয়ে কাজ করছিলেন তাঁরাও। এভাবে প্রায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘন্ট টানা কাজ চলার পর জোয়ারের পানি আসার আগেই বাঁধ মেরামত করে ফেলতে সক্ষম হন এলাকাবাসী। এ কাজে যুক্ত হয়েছিলেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। দক্ষিণ বেদকাশির চরামুখা এলাকার ওই বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল গত রোববার ভোররাতে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি, জমিজমা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের প্রাায় ১০ হাজার মানুষ। বাড়ি-ঘর হারিয়ে ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। ভেসে গেছে প্রায় তিন হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের। ডুবে গেছে আমনের বীজতলা। গত রোববার ওই বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেও পারেননি এলাকাবাসী। এ কারণে সোমবার অধিক সংখ্যক মানুষকে নিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা।
এলাকাবাসী বলেন, ভেঙে যাওয়ার পর যত দ্রæত সম্ভব বাঁধ মেরামত করতে হয়। আর তা নাহলে একদিকে যেমন পানির তোড়ে ভাঙন এলাকা গভীর হতে থাকে, অন্যদিকে প্রতিদিনই জোয়ারের পানি প্লাবিত করে নতুন নতুন এলাকা। ভাঙন এলাকা একবার গভীর হয়ে গেলে সেখানে বাঁধ দেওয়া কঠিন। বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না উল্লেখ করে দক্ষিণ বেদকাশি এলাকার স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংঘের সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বলেন, একবার বাঁধ ভাঙলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড তলিয়ে যায়। অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়ে। বাঁধ ভাঙলে সংস্কার করা হয়, ভাঙার আগে বার বার বলা সত্তে¡ও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের অন্তত ৩টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ভাঙনের কারণে আমার ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। কোথায় থাকব জানি না। রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই। বাঁধ না হলে ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করব ভেবে পাচ্ছি না। সে কারণে সবকিছু ফেলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজে নেমেছি। ক্ষোভ ও হতাশা ভরা কন্ঠে তিনি বলেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মান না করা হলে আমাদের দুর্ভোগ কমবেনা। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম খান বলেন, পানিতে তলিয়ে গেছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের পাঁচ গ্রাম। ভেসে গেছে তিন হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১০ হাজার মানুষ। বাঁধ মেরামতে বস্তা ও বাঁশ-খুঁটি দিয়ে সহায়তা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদিন বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমে মানুষ প্রাথমিকভাবে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পেরেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ও বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। পানি আটকানোর পর মূল ক্লোজারে কাজ শুরু করা হবে। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙন যেন কয়রার মানুষের পিছু ছাড়ছে না। যখনই কয়রার মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ঠিক তখন আবার কোন না কোন জায়গায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বাঁধ বাধার কাজের ও পানিবন্ধি মানুষের জন্য সহযোগিতা করা হয়েছে। উপকূলীয় জনপদ কয়রা উপজেলার মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মানের কাজ যাতে দ্রæত শুরু হয় এ জন্য উদ্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ