HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন

সাতক্ষীরায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিবাহ

খলিলুর রহমান, সাতক্ষীরা / ২৭৫
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে হচ্ছে বাল্যবিবাহ। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’দিনেই জেলায় চারটি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় একটি, কালিগঞ্জে একটি এবং তালা উপজেলায় দু’টি বাল্যবিবাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার এ দু’দিন বেশি বাল্যবিবাহের আয়োজন করা হলেও অন্যান্য বারেও বাল্যবিবাহের আয়োজন করা হয় বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পল্লীতে একদিনে দুই কিশোরীর বাল্যবিবাহের আয়োজন করা হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন সেখানে অভিযান চালিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক কিশোরীর মাকে ৫ হাজার টাকা এবং বাল্যবিবাহের আয়োজনে সহযোগিতার জন্যে শেখ মোঃ কামাল উদ্দীন নামের আরেক ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমিন পৃথকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এই রায় ঘোষণা করেন। তালা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার জানান, বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) তালা সদর ইউনিয়নের মুড়াকালিয়া গ্রামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন চলছিল। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমিন। পরবর্তীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে রান্না করা পাঁচ হাড়ি খাবার পার্শ্ববর্তী এতিমখানায় পাঠানো হয়। একইদিনে উপজেলার কুমিরা গ্রামে এক কিশোরীর বাল্যবিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ সময় ওই কিশোরীর পিতা বয়স না হলে মেয়ের বিয়ে দিবেন না মর্মে মুচলেকা দেন। বুধবার (৫ জুলাই) রাতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের কাশিবাটি গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৬ বছরের এক কিশোরীর বিয়ে বন্ধ করেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজাহার আলী।
একই দিন (৫ জুলাই) তালায় দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিবাহ করার দায়ে বর সুমন মোড়ল রাসেলকে ১৫ দিনের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর ইউনিয়নের বেড়বাড়ী এলাকায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ফাতেমা-তুজ-জোহরা। গত ৯ জুন (শুক্রবার) সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় দুটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে উপজেলা প্রশাসন। ২ জুন (শুক্রবার) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী নিজের বুদ্ধিতে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পায়। ওইদিন রাতে ওই ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এর আগে রাতে সে উপজেলা প্রশাসনের কাছে খবর পাঠায়। এরপর সকালে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের আবৃত্তিশিক্ষক ওই বাড়িতে যান। একপর্যায়ে ওই শিক্ষকের সঙ্গে ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। গত ১৫ মে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রী ও এইচএসসির এক ছাত্র বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পায়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে দুপুরে তাদের বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। তালা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার জানান, এই এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। কোন বাল্য বিবাহের খবর পেলে সাথে সাথে সেখানে লোক পাঠিয়ে বিবাহ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকাও নেয়া হয়ে থাকে। একই সাথে বাল্য বিবাহের কুফল জানিয়ে লোকজনকে সর্তক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজহার আলী বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাল্যবিবাহের খবর পেয়ে প্রথমে বাল্যবিবাহের শিকার ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করি। কিশোরীর পিতা-মাতাকে জরিমানা করা হয়।
বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘লিডার্স’ নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায়, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীব্যাপী বাল্য বিবাহ একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর সারাবিশ্বে ১৮ মিলিয়ন মানুষ বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের হার ৫২ শতাংশ। খুলনা বিভাগে বাল্য বিয়ের হার ৭১ শতাংশ ও সাতক্ষীরায় এই হার ৭২ শতাংশ। বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের গড় বয়স ১৫ বছর। যাদের প্রথম বাচ্চা জন্মদানের গড় বয়স ১৭ বছর। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, বিভিন্ন কারণে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এর মধ্যে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব, দারিদ্র্য, নিরাপত্তা, আস্থাহীনতা, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার ইত্যাদি দায়ী বলে মন্তব্য করেন তারা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ