HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন

ঝাউডাঙ্গায় অবাদে চলছে কোচিং বাণিজ্য, বাড়তি চাপে শিক্ষার্থী-অভিভাবক

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২২১
প্রকাশের সময় : সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

স্কুল-কলেজ ৯৭ শতাংশই বেসরকারি। বাকি ৩ ভাগ সরকারি। এই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু ও বেপরোয়া শিক্ষকদের কাছে রীতিমতো জিম্মি শিক্ষার্থী-অভিভাবক। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শ্রেণীকক্ষের আদলে কোচিং সেন্টারগুলোতেই চলছে পাঠদান। শ্রেণীকক্ষ হয়ে পড়েছে গৌণ।

ঠিক তেমনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গা এলাকায় অনেক শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি সচেতন মহলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোচিং বাণিজ্যে নিয়োজিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগের কথা পত্রিকান্তে প্রকাশ পেলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায় না। সরকার কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে নিজেদের উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিবেদিত হবে, তা নিয়ে জনমনে সংশয় থাকলেও বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ কোচিং বাণিজ্যের ফলে মানুষ এখন নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলে চলেছে। শিক্ষা নিতে কোথাও আলোচনা উঠলেই তা কোচিং এর আলোচনায় রূপান্তরিত হয় অভিভাবক-শিক্ষার্থী সবাই সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন। স্কুল ও কলেজে শিক্ষার চেয়ে কোচিং শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না গেলেও কোচিং এ হাজিরা দিতে ভুল করে না। পরিবেশ এমন পর্যায়ে উপনীত, এখন অভিভাবকরা সুযোগ পেলেই বিদ্যালয়ে সময় কমানোর দাবি জানাচ্ছেন। সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা ট্র্যাকে আনার জন্য যখন বিদ্যালয়ে সময় বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তখন অভিভাবকরা বিপরীত দিকে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের কারনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও আইনকে উপেক্ষা করে ঝাউডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় কোচিং বাণিজ্যে মেতে উঠেছে স্কুল, কলেজের শিক্ষকেরা। যে যার মতো বাসাবাড়িতে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে দোকানের মতো খুলে বসেছে ব্যাঙ এর ছাতার মত। কোচিং সেন্টার গুলোতে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের পড়া-লেখার সুযোগ হলেও নিম্মবিত্ত পরিবারের পক্ষে ওই সেন্টারে পড়া-লেখা করার সুযোগ হয়না। খোঁদ কয়েকজন অসহায় অভিভাবকরা জানান, যারা কোচিং সেন্টারে পড়বে না তারা ঠিকমত স্কুল ও কলেজে নাম্বার থেকেও বঞ্চিত হয়। স্থানীয় একাধিক তথ্য সূত্রে জানা যায়, কলারোয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস মুখি না হয়ে কোচিং মুখি হচ্ছে বেশি। এতে অভিভাবকগন অনেকটা নির্বিকার। সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়া রীতিতে পরিণত হয়ে গেছে। মহামান্য হাইকোর্ট রিট পিটিশন নং ৭৩৬৬/২০০১ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোচিং ও প্রাইভেট কোচিং বন্ধ নীতিমালা আইন ২০১২ সালে পাশ হয়। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তা উপেক্ষা করে কোচিং ও প্রাইভেটকে বাণিজ্য হিসেবে নিচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানোর চেষ্টা না করে কোচিং পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদেরকে আগ্রহ করে তুলছে এ সমস্ত অসাধু শিক্ষকরা। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান মুখি না হয়ে প্রাইভেট মুখি হয়ে পড়ছে। সরকার বর্তমানে সরকারি চাকুরীজীবিদের ন্যায় বে-সরকারি শিক্ষকদেরকেও পে-স্কেলসহ প্রায় সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে। এ সকল কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকরা আইনকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দেদারছে। এভাবে অভিভাবকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই অবৈধ কোচিং এ ভর্তি হতে না পেরে অনেক গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে লেখাপড়া করতে হলে বাধ্যতা মূলক কোচিং বা প্রাইভেট না পড়লে পাশই করবে না শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের চেয়ে লেখা-পড়ার মানও কোচিং এ খুবই ভালো এমনটাই বুঝাচ্ছেন এই সমস্ত শিক্ষকরা। অভিভাবক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমার মেয়ে দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ায় তাকে বাংলা, ইংরেজী, গনিত, রসায়ন, পদার্থ, জীব বিজ্ঞানসহ মোট ৫ জন শিক্ষকের নিকট পড়াতে হয়। স্বল্প আয় করে মাসে কোচিং বাবদ ৫ হাজার টাকা আরও অন্যান্য খরচ করে লেখাপড়া শেখানো আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবৈধ প্রতিযোগিতা থেকে আমরা বের হতে না পারলে মানসম্মত শিক্ষা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন। এভাবে চলতে থাকলে গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝরে যেতে পারে। এমন সুযোগে কোচিং বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষকেরা চাকুরীর ফাঁক ফোঁকরে ১২ দিনে ১ মাসে শিক্ষার্থী প্রতি ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে জানা যায়।
কিছু কিছু কোচিং এ শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতি ব্যাজে এত পরিমাণ বেশি থাকে যে সেখানে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে পড়ানোর খবর ও পাওয়া গেছে। এই কোচিং বাণিজ্যের কারনে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্বল্প আয়ের অভিভাবকবৃন্দ। ঝাউডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, কোচিং সেন্টারগুলোর জন্য আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো আসতে চায় না। এই অবৈধ কোচিং সেন্টারগুলো আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি করছে। কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস মুখি হবে। এই ব্যপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, কোচিং প্রাইভেট ও মাধ্যমিকের জন্য নোট-গাইড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমরা প্রতিটি মাসিক সম্বন্বয় মিটিং এ শিক্ষকদের কোচিং এর ব্যাপারে সতর্ক করে থাকি। সরাসরি আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না থাকায় তাদেরকে আমরা শাস্তির আওতায় আনতে পারিনা। এ কারনে আমরা মাঝে মাঝে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সহযোগীতার অনুরোধ করে থাকি।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ