শুধু বাঘের সঙ্গে নয়, সুন্দরবন এলাকার মানুষগুলোকে রোজ লড়তে হয় জলের সঙ্গে। ঘুর্নিঝড় এখানে যতটা ক্ষতি করে তার থেকে বড় ক্ষতি হয় জলচ্ছাসে। দিনের পর দিন সংস্কারহীন বেড়ীবাঁধ নিচু হচ্ছে আর সাগরপৃষ্টের নোনাজল হচ্ছে উচ্চ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকটা সামাল দিতে লড়াই করছে মোকাবেলার উপকরণহীন মানুষেরা।
কিন্তু লড়াই কেন? জল তো জীবন? কিন্তু হ্যাঁ, সমুদ্রের নোনা জল বাঁধ ডিঙিয়ে জমিতে ঢুকে এলে বন্ধ্যা হয়ে যায় মাটি। ফসল ফলে না। তখন বদলে ফেলতে হয় জীবিকা। চাষি হয়ে পড়েন মজুর কিংবা নির্মাণশ্রমিক। বাঁধ ভাঙলে জল বাস্তু খেয়ে নেয়। কিন্তু, নোনা জল খাওয়া যায় না। সমুদ্র ফুঁসে উঠলেই ঘুর্নিঝড়ের খবরে তাই বুক কেঁপে ওঠে।
সুন্দরবনের জঙ্গলঘেরা, নদী-সমুদ্রতীরের পাশে ছড়িয়ে থাকা গ্রামগুলির লক্ষ লক্ষ মানুষের বেঁচে থাকা আবর্তিত হয় তাই রক্ষাকবজ বাঁধকে ঘিরেই।
ভাটির দেশ সুন্দরবন। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যের দেশ সুন্দরবন। পর্যটকদের নৌকাবিলাস আর বাঘ,হরিণ দেখার রোমাঞ্চের সুন্দরবন।জ্বালানী, মৎস, মধুসহ সম্পদের আধার সুন্দরবন। সুন্দরবন আমাদের সভ্যতা। নদীমাতৃক দেশে নদী পথে আভ্যান্তরিণ ও বহিবিশ্বে যোগাযোগ করাও সম্ভব। তবে কেন বানভাসী এবং উদ্বাস্ত জীবন হবে এখানে? দেশকে এগিয়ে নিতে ও জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় সংরক্ষিত বেড়িবাঁধ, নদীপথে সংযোগ, বানিজ্য, কলকারখানা, সবই সম্ভব এখানে। তাই দরকার একটি সুষ্ট জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, যার অংশজন স্থানীয় দায়িত্বশীল কর্তাগণ। আমারা সাধারণ মানুষগুলি শুভাকাংখী হয়ে থাকবো।##