HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৯ অপরাহ্ন

‘মাওলানা ভাসানী, তুমি বাংলার ইতিহাসে অমর’

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ৭৭৩
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২

মওলানা ভাসানী যার পূরা নাম আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। যিনি ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগজ্ঞের ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী সারাফত আলি এবং তার ভাইবোনের মধ্যে মাওলানা ভাসানী সকলের ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। আব্দুল হামিদ খান যখন খুবই ছোট ছিলেন তখন তার বাবা মারা যান। কিছু দিন পর এক মহামারীতে তার মা বেগম সারাফত ও তার বড় দুই ভাই মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশুটি আব্দুল হামিদ খান। অতি শিশুকালে বাবা মা ও দুই ভাই কে হারিয়ে ফেলেন। নেমে আসে তার জীবনে করুন ট্রাজেডী ও বেদনা। এরপর পিতা মাতা হীন এতিম শিশু কিছুদিন তার চাচা ইব্রাহীমের আশ্রয়ে থেকে লালিত পালিত হতে লাগলেন। ঐ সময়ে ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বাগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। ছোট্ট হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ^যুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ১৮৯৩ সালে তিনি জয়পুর হাট জেলার পাঁচবিধি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দীন আহমেদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদার রেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে মেয়ে কে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসিরুদ্দীনের সাথে আসাম গমন করেন। ১৯০০ সালে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে জনগনের কাছে আপোষহীন নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। ইসলামী শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ১৯০৭ এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসাম ফিরে আসেন। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরজ্ঞন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। এরপর ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে দশ মাস কারাদন্ড ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরজ্ঞন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুর হাটের পাঁচবিধি উপজেলার জমিদার শামছুদ্দীন মোহাম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে আসাম গমন করেন এবং আসামে প্রথম কৃষক প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯২৯ এ আসামে ধুবড়ী জেলার ব্রক্ষপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নামের সাথে বা শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়। ১৯৩১ এ সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২ এ সিরাজগঞ্জের কাওরা খোলায় ও ১৯৩৩ এ গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৩৭ সালে মাওলানা ভাসানী কংগ্রেসের রাজনীতি ত্যাগ করে মুসলীমলীগে যোগদান করেন। সেই সময়ে আসামে মাইন প্রথা চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। ঐ একই সময়ে তিনি আসাম চাষী মজুর সমিতি গঠন করেন এবং ধুবড়ী গোয়ালপাড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৪০ সালে শেরে-ই বাংলা এ,কে ফজলুল হকের সাথে মুসলীম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে মওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলীম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড়ে বাঙালীদের বিরুদ্ধে ‘বাঙাল খেদাও’ আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়। এ সময় বাঙালীদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা, গোহাটী সহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান এবং যে সমস্ত এলাকায় বাঙ্গালদের সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৮ এ মুক্তি পান। পরপরই তিনি টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে তিনি বঙ্গীয় মুসলীম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় পূর্ব বঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ব্যবস্থাপক সভার কার্যাবলী বাংলার পরিচালনা করার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান এবং এই দাবি নিয়ে পীড়াপিড়ি করেন। ১৯ মার্চ বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে বলেন, যে সব কর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ প্রদেশ থেকে সংগ্রহ করে তার শতকরা ৭৫% প্রদেশকে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্রিটিশ আমলে বঙ্গ প্রদেশ জুটেকস ও সেলস ট্যাকস রাজস্ব হিসেবে আদায় করত এবং ঐ করের ভাগ কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতে হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব বঙ্গ সরকারের হাত থেকে এই কর ছিনিয়ে নিয়ে নিজেরাই আদায় করতে থাকে যার ফলে পূর্ববঙ্গ সরকার আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো এই সময় পূর্ব বাংলা সরকারের বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৩৬ কোটি টাকা যাই হোক, মুসলিমলীগ দলের সদস্য হয়েও সরকারের সমালোচনা করায় মুসলীম লীগের ক্ষমতাসীন সদস্যরা মওলানা ভাসানীর উপর অখুশী হয় এবং তার নির্বাচন ত্রæটি ছিলো এই ওজুহাত দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে এবং ভাসানীকে নানাভাবে হয়রানী করতে থাকে। পরিশেষে মওলানা ভাসানী ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতদ সত্তে¡ও পূর্ব বঙ্গেও তৎকালীন গভর্নর এক নির্বাহী আদেশ বলে মওলানা ভাসানীর নির্বাচন বাতিল করেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলীম লীগের জন্য বিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেনে মুসলীম লীগ কর্মী সম্মেলন আহবান করেন। ২৩ জুন ঐ কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান। মওলানা ভাসানী ছিলেন প্রধান অতিথি। ২৩ জুন পূর্ব বঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সর্ব সম্মতিক্রমে এই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদ। ২৪ জুন আরমনি টোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলীম লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্যে পূর্ব বঙ্গ মন্ত্রী সভার পদত্যাগ দাবী করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৪৯ এর ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হন এবং তখন তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরন করা হয়। ১৯৫০ সালে সরকার কর্ত্তৃক রাজশাহী কারাগারে খাপড়া ওয়ার্ড এর বন্দীদের উপর গুলি বর্ষনের প্রতিবাদে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারী ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরী হলে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রীয় ভাষা কর্ম পরিষদ গঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সহযোগী তার কারনে গ্রেফতার হয়ে ১৬ মাস ধরে কারাগারে নির্যাতনের শিকার হন। অবশ্য জনমতের চাপে ১৯৫৩ সালের ২১ এপ্রিল মাওলানা ভাসানীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। পূর্ব বঙ্গের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ৩ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টির সভাপতি শের- এ বাংলা এ,কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামক নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেন এবং এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করেন এবং পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ২৩৭ টির মধ্যে ২২৮ টি আসন অর্জনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ২৫ মে ১৯৫৪ মওলানা ভাসানী বিশ^ শান্তি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে যান এবং সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন। ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী সভা ভেঙে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন জারি করে এবং মওলানা ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। দীর্ঘ ১১ মাস লন্ডন, বার্লিন, দিল্লী ও কলকাতায় অবস্থান করার পর তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ১৯৫৫ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পূর্ব বাংলায় খাদ্য জনিত দুর্ভিক্ষ রোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের দাবিতে ১৯৫৬ ও ৭ মে ঢাকায় অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। সরকার দাবি মেনে নিলে ২৪ মে অনশন ভঙ্গ করেন। একই বছর ১২ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন সরকার গঠিত হলে মওলানা ভাসানী সরকারের পররাষ্ট্র নীতির বিরোধীতা করে নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। ১৯৫৬ তে পাকিস্তান গণপরিষদে যে খসড়া শাসনতন্ত্র বিল পেশ করা হয় তাতে পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিক বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তখন মওলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় তার বিরোধীতা করে সুপাট বক্তব্য দিয়েছিলেন কাগমারী সম্মেলনে ১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রæয়ারী থেকে ১০ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ৮ ফেব্রুয়ারী ডঃ কাজী মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এই সভায় মওলানা ভাসানী ও বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিনি বলেন, পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গ বাসী তাদেও সালামু-ও আলায়কুম জানাতে বাধ্য হবে। এছাড়া কাগমারী সম্মেলনে ভাসানী পাক মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবী জানান। প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করলে ১৮ মার্চ আওয়ামীলীগ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ঐ একই বছর ২৫ জুলাই তার নেতৃত্বে ঢাকার রুপমহল সিনেমা হলে ন্যাশনাল আওয়ামীলীগ পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হয়। ন্যাপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভাসানী প্রকাশ্যে বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এবং এরপর থেকে সব সময় বাম ধারার রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক শাসন জারি হলে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১২ অক্টোবর মওলানা ভাসানীকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় চার বছর দশ মাস কারারুদ্ধ থাকেন। বন্দী অবস্থ্ায় ১৯৬২ র ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বন্যায় দুর্গতদেও সাহায্যে ও পাটের নায্য মূল্যের বিভিন্ন দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। অবশেষে নভেম্বরের ৩ তারিখে মুক্তিলাভ করেন এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হন। ১৯৬৩ ও মাঝ পথে স্বেরশাসক আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাত করেন। একই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর চীনের বিপ্লব দিবস এর উৎসবে যোগদানের জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন এবং চীনে সাত সপ্তাহ অবস্থান করেন। ১৯৬৪ র ২৯ ফেব্রæয়ারী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পূনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একই বছর ২১ জুলাই সম্মিলিত বিরোধীদল গঠনে ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৫ র ১৭ জুলাই আইয়ুব খানের পররাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৯৬৬ তে বঙ্গবন্ধুর উপস্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচির বিরোধীতা করেন। ১৯৬৭ ও ২২ জুন কেন্দ্রীয় সরকার রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করলে এর প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে মওলানা ভাসানী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের মুক্তি দাবী করেন এবং ঐ একই বছরের ৮ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে সাক্ষাত করেন এবং সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র কায়মের লক্ষ্যে একমত হন। আইয়ুব সরকারের পতনের পর নির্বাচনের পূর্বে ভোটের আগে ভাত চাই, বাঁচতে চাই, অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই এবং ইসলামিক সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চাই ইত্যাদি দাবি উথাপন করেন। একজন আমেরিকান সাংবাদিক ড্যান কোগগিন, টাইমে পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথানকে উসকে দেয়ার জন্য ভাসানীর প্রশংসা করেছিলেন যে, ‘‘যতটা একজন মানুষ মতো।’’ যা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটাতে সাহায্য করেছিলো। ১৯৭০ সালের ৬-৮ আগস্ট বন্যা সমস্যা সমাধানের দাবীতে অনশন পালন করেন। অতঃপর সাধারণ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সিদ্ধান্তে গ্রহণ করেন। ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় হলে দূর্গত এলাকায় এমন ত্রাণ ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার জন্য ন্যাপ প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবং ১৯৭০ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ঢাকায় পল্টন ময়দানে এক জনসভায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবি উথাপন করেন এবং ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ভারতে যান এবং মুজিব নগর সরকারে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর মওলানা ভাসানী ভারত থেকে একটা বিবৃতি দেন এবং ভারতে বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত হয়। পূর্ব বাংলার পাক হানাদার বাহিনী ব্যাপক গণহত্যা চালাচ্ছে এবং নিরীহ জনগনের উপর ব্যাপক নিপীড়ন, নির্যাতন চালাচ্ছে এই মর্মে মওলানা ভাসানী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই সময়ের প্রেক্ষিতেই নিক্সন কে অবহিত করেন এবং পাকিস্তান সরকার কে যেন কোন অস্ত্র বা অন্য কিছু দিয়ে সাহায্য না করেন সে ব্যাপারে অনুরোধ করেন। একই সমস্যা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের কাছে ও পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন। ৩১শে মে ১৯৭১ মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার বাহিনীর সাথে জীবন মরণ সংগ্রামে লিপ্ত। তারা মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বদ্ধ পরিকর। তারা এই সংগ্রামে জয় লাভ করবেই। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ দুবার কোহিনুর প্যালেসে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং তার পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। মওলানা ভাসানী ১৯৭২ সালে ২২ জানুয়ারী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী চুক্তি বিরোধীতা করলেও মুজিব সরকারের জাতীকরণ নীতি এবং ১৯৭২ এর সংবিধানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন এবং মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘‘আসাম আমার পশ্চিম বঙ্গ আমার ত্রিপুরাও আমার।’’ এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না। পরিশেষে ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই দেশ বরেণ্য নেতা মৃত্যুবরন করেন তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহ জামান দিঘীর পাশে সমাধিস্থ করা হয়। তার সেই জীর্ণ সাদা মাটা ঘর দুটা এখনও রয়েছে। নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের জন্য, দেশের জনগনের জন্য কাজ করে আজ ও তুমি অমর। তুমি আছো আজও আমাদের হৃদয়ের গভীরে।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ