HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১০ পূর্বাহ্ন

উপকূলীয় অঞ্চলে নদী খনন, টেঁকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে

অজয় কান্তি মন্ডল / ৩৯০
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

দেশের দক্ষিনাঞ্চলের অবহেলিত জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট। সুন্দরবনের গাঁ ঘেঁষে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এই জেলাসমূহের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস চিংড়ী, কাঁকড়া, কুঁচিয়া ও বিভিন্ন প্রজাতির লোনা পানির মৎস্য চাষ। এ জেলাসমূহের অধিকাংশ এলাকায় বছরের বেশীরভাগ সময়ে লোনা পানির তীব্রতা এত বেশী থাকে যে সেখানে ফসল ফলাতে জনগণের হিমশিম খেতে হয়। সেকারণে বাধ্য হয়ে লোনা পানির সহনশীল উদ্ভিদ চাষাবাদের চেষ্টা করলেও সেভাবে সুফল আসেনা। ওদিকে চিংড়ী চাষেও বছরের পর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের ঘের মালিকেরা। চিংড়ী চাষে সবসময় লোনা পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব চিংড়ী ঘেরে যেসব নদী থেকে পানি সরবরাহ করা হয় সেসব নদীসমূহে দীর্ঘদিন সংস্করণ না করায় অধিক পলি জমা হয়ে নদীপথ একেবারে বিলীন হতে বসেছে। এছাড়াও নদীগুলোর উভয় তীরবর্তীর অংশ দখলদারদের নিজেদের জমির বাউন্ডারির ভিতরে ঢুকাতে প্রতিনিয়ন নতুন বাঁধ নির্মাণে নদীপথ সংকীর্ণ করে তুলছে। ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ সময়ে নদীতে জোয়ার ভাঁটায় পানি প্রবাহিত না হয়ে শুকনা থাকে। ভরা অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতেও এসব নদীতে জোয়ারের পানি পৌছায়না। অথচ বাগদা চিংড়ী সহ লোনা পানির মৎস্য চাষের প্রধান দরকারি নিয়ামক নিয়মিত ঘেরে জোয়ার ভাটা প্রবেশ করানো। যেগুলো দ্রুত মাছ বৃদ্ধি ও নিরোগ মাছ চাষে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে রীতিমত চিংড়ী ঘেরে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের অধিকাংশ চিংড়ী ঘেরের বাস্তব চিত্র বর্তমানে এমনই। এর ফলে ঘের মালিকেরা পুরোপুরি নিরুপায়। পানি না থাকায় ঘেরের চিংড়ী বিক্রি উপযোগী হওয়ার আগেই নানা ধরণের ভাইরাস জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়ে সমূলে নির্মূল হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ঘের মালিকদের এনজিও সহ বিভিন্ন সংস্থার থেকে উচ্চ সুদে নেওয়া ঋণের বোঝা দিন দিন ভারী থেকে ভারীতর হচ্ছে। এমতবস্থা নদী সংস্করণ, নদী খনন এবং অবৈধ দখলদারদের থেকে নদী অবমুক্ত করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। তাহলেই কেবলমাত্র এসকল এলাকার মানুষের জীবিকার যথাযথ পথ খুঁজে পাবে।

বর্ষা মৌসুমে এসব নদীতে সামান্য পানি সরবরাহ বাড়লেও সেসময়ে চিংড়ী চাষের সিজন প্রায় শেষ হয়ে আসে। কেননা, চিংড়ী চাষে প্রয়োজন লোনা পানি; আর বর্ষা বাড়ার সাথে সাথে পানিতে লবনাক্ততার পরিমান কমতে থাকে যেটা চিংড়ী চাষের জন্য অনুকূল নয়। এছাড়াও বর্ষা মৌসুম সহ যেকোন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বঙ্গপসাগরের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। যেটা দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারীদের জন্য চরম অভিশাপ। লোকালয়ে প্রবেশ করা এই অতিরিক্ত পানি ছোট ছোট নদীপথগুলো দিয়ে নিষ্কাশিত হত। বর্তমানে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাগরের নিন্মচাপ সৃষ্টি হলে, অতিবৃষ্টির ফলে পানি জমলে বা বড় বড় খরস্রোত নদীর বাঁধ ভেঙে ভেঙে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হলে সেই পানি দীর্ঘদিনে নিষ্কাশিত হয়না। যেগুলো উক্ত অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। একদিকে সারাবছর ধরে চিংড়ী ঘেরে পানির অভাবে মাছ চাষ দুরহ, অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে এরকম দেউলিয়া হয়ে যায় এসব অঞ্চলের মানুষেরা। কিন্তু নদীগুলোর সংস্কার হলে উভয়ই মৌসুমের ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা অনেকাংশে কমে আসত বলে বিশেজ্ঞদের ধারণা। 

জীবনধারণের প্রায় সকল প্রকার উপকরণ কিনেই সংসার চালনা করতে হয় এ এলাকার মানুষদের। মাটিতে লবনাক্ততার তীব্রতা এত বেশি যে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতেও ছুটতে হয় বহু দূর দূরান্তে। অত্যাধিক মাত্রার আয়রন, আর্সেনিকের সাথে অন্যান্য ক্ষতিকর ধাতুর মিশ্রনও লক্ষণীয় এ এলাকার নলকুপগুলোতে। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে পানীয় জল কিনে খাওয়াটা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। সু-গভীর নলকূপের পানিও মানুষের পানের জন্য অতটা উপযোগী না। বছরের অন্যান্য সময় মানিয়ে নিয়ে চললেও, বিশেষ করে শুকনা মৌসুমে পানির স্তর মাত্রারিক্ত নীচে নেমে যায় এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুপেয় পানির অভাব আরও তীব্র আকার ধারণ করে।

প্রতি বছরই প্রলয়ঙ্করী কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলীয় জনগণের ভোগান্তি বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া সিডর, আইলা, নার্গিস, আম্ফান, ইয়াস এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এসব দুর্যোগের কারণে বারবার উপকূলের সুপেয় পানির উৎসগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে জীবন ধারনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলো পুরোপুরিভাবে লোপ পেতে বসে। এর মধ্যে সুপেয় পানির বিষয়টি মহাসংকটে রূপ নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বর্তমানে উপকূলীয় নদ-নদীতে লবনাক্ততার পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে উপকূলের জীবন-জীবিকা চরম সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অতিরিক্ত লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এক কলস সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটতে হয় বাসিন্দাদের। গৃহস্থালির অন্যান্য কাজের সাথে সুপেয় পানি সংগ্রহের কাজটি মানুষের প্রধান দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে মূলত নারীরাই পানি সংগ্রহ করে। এতে শারীরিক ও মানসিক কষ্টের পাশাপাশি প্রতিদিন ব্যয় করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেকক্ষেত্রে সুপেয় পানির অভাবে বাধ্য হয়ে তাদের লবণাক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সকলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বিশুদ্ধ পানির অভাবের কারনে গর্ভাবস্থায় মায়েরা লবণাক্ত পানি পান করছে, যা শিশুস্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। লবনাক্ততায় আক্রান্ত এলাকায় সন্তানসম্ভবা মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রি-একলেম্পশিয়া রোগ দেখা দেয়ায় মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হারও বাড়ছে। শিশুদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে পেটের পীড়া ও নানা ধরনের রোগ। এছাড়া মিঠা পানির তীব্র অভাব থাকায় এ অঞ্চলের সকলকে বাধ্য হয়ে গোসল সহ গৃহস্থলির সকল কাজ তীব্র লোনা পানিতে সারতে হচ্ছে। এর ফলে মানুষের নানা রকমের চর্মরোগ সহ অনেক প্রকার জটিল রোগের আধিক্য দেখা দিচ্ছে।

খুলনাসহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংগে লড়াই নিরন্তর। সিডর, আইলার মতো প্রলয়ঙ্করী ঘুর্নিঝড়, জ্বলোচ্ছাস এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। নানা সংকটের মধ্য সুপেয় পানির অভাবই প্রধান। বঙ্গোপসাগর থেকে সুন্দরবনে ঢোকা লোনা পানির প্রভাব কাটানোর জন্য নদ-নদীতে যে পরিমাণ মিঠা পানির প্রভাব থাকা দরকার, তা বছরের মে থেকে নভেম্বর পযর্ন্ত না থাকায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় লবণাক্ততা বাড়ছেই। নদীগুলো খরস্রোতা না হওয়ায় কমে গেছে মিঠা পানির প্রবাহ। যার কু-প্রভাব পড়ছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে।

যদিও উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির অভাব দীর্ঘকালের। এই বাস্তবতায় বৃষ্টির পানি ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। বৃষ্টির পানির সুবিধা হচ্ছে, এর মান ভালো ও হাতের নাগালে পাওয়া যায়। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পরে সেটা সারাবছর পানের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিও অনেকের বাড়ীতে পানি সংরক্ষণের ট্যাঙ্কি সরবরাহ করেছে। যেটা সত্যিই প্রশংসানীয়। কিন্তু সেই বরাদ্দও পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও এগুলোর বণ্টনও সুষ্ঠুভাবে না হওয়ায় অনেক প্রভাবশালী অর্থাৎ আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারে থাকলেও গরীব পরিবারের কেউ পাইনি। যেটা গরীব দুঃখী মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পানিকে মৌলিক অধিকার এবং জনগুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত করে এ খাতে প্রয়োজনীয় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে নদী ভাঙন এলাকা, লবণাক্ত প্রবণ এবং ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণে ব্যাপক কর্মসূচি ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করতে হবে। উপকূলীয় এলাকার জমিতে লবণাক্ততা ঢোকা বন্ধে সমাধান বের করতে হবে। এ উদ্দেশ্য সাধনে গবেষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া জলবায়ু সহিষ্ণু প্রযুক্তির প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা করার পাশাপাশি এ খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।

সরকারী পর্যায়ে বড় রকমের প্রকল্প হাতে নিয়ে এসব এলাকার মানুষের সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। গভীর পুকুর খনন করে এবং সেগুলোর চারপাশে যথাযথ উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে লবনাক্ত পানি প্রবেশে বাঁধা দিয়েও মিষ্টি পানি নিশ্চয়তা করা যায়। যেখানে শুধুমাত্র বর্ষার পানি জমা হবে। এছাড়া সরকারের গৃহীত নানান পদক্ষেপ, যেমনঃ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য বড় বড় রিজার্ভার সরবরাহ করা যেতে পারে। ব্যক্তি পর্যায়ের পাশাপাশি পাড়া ও গ্রাম ভিত্তিক এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া যেতে পারে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুষ্ঠু বণ্টনসহ  প্রকৃত ভুক্তভোগীরা যাহাতে উপকৃত হয় সে বিষয়ে নজরদারি করতে হবে।

বর্তমানে চিংড়ীর চাষাবাদ এতটা অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেটা স্বচক্ষে অবলোকন ব্যতীত অনুধাবন অসম্ভব। লাগাতার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় অনেক ঘের মালিক বর্তমানে পূর্বের ধান চাষ বা অন্যান্য ফসল ফলানোর পেশায় ফিরতে চায়। কিন্তু মাত্রারিক্ত লবনাতক্তার জন্য সেটিও সম্ভব নয়। তাই বেশ নিরুপায় হয়ে মানুষ এখনো পর্যন্ত এই পেশায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈদেশিক মুদ্রার একটা সিংহ ভাগ আসে বাইরের দেশগুলোতে ‘হোয়াইট গোল্ড’ খ্যাত এই চিংড়ী রপ্তানি করে। এছাড়াও সম্প্রতি দেশের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া বিদেশীদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যেগুলো অদূর ভবিষ্যেৎ দেশের রপ্তানি বাণিজ্য খাতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। দেশের বাজারে মৎস্য চাহিদা মিটিয়ে সরকারী কোষাগারে বৈদেশিক অর্থ যোগানে অপরিসীম অবদান রাখা স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক ব্যবসা চিংড়ী চাষ। কিন্তু সঠিক ও সুদীর্ঘ পরিকল্পনার অভাবে এই লাভজনক ব্যবসা অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেটাতে আবারো প্রাণবন্ত করতে সরকারী হস্তক্ষেপ একান্ত কাম্য।

নিরাপদ খাওয়ার পানির অভাব  শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক বাংলাদেশের অবস্থান আমাদের কাছে অনেক সময় অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের দুর্বিষহ জীবনযাত্রার মান এখানে সুস্পষ্ট উদাহরণ বয়ে বেড়ায়। একদিকে শুকনা মৌসুমে তীব্র পানি সংকটে চারিদিকে হাহাকার, পক্ষান্তরে বর্ষা মৌসুমে পানিতে হাবুডুবু। এই বিপরীত ধরনের বাস্তবতা মেনে নিতে হয় শুধুমাত্র সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। যদি খরস্রোতা নদীগুলোর বাঁধ মজবুত করে বন্ধ হয়ে যাওয়া নদীপথগুলো সংস্কার করা হয় তাহলে অচিরেই এই এলাকার মানুষের চরম এসব দুর্দশা থেকে মুক্তি মেলা সম্ভব।

পাশেই বঙ্গোপসাগর, তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সাথে নিয়েই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলতে হবে। লবনাক্ততা নিরসনে টেঁকসই বেড়িবাঁধের কোন বিকল্প নেই। সুপেয় পানীয় জলের অভাব পূরণেও খরস্রোত নদীগুলোর দুইপাশে টেঁকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ অতীব জরুরী। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি কমাতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের এসকল বিষয়গুলো অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সেইসাথে সকল নদী দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করে বিলীন হয়ে যাওয়া নদীপথগুলোকে আবারো প্রশস্ত করার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের অর্থনীতিতে সাফল্য বয়ে আনবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা।

লেখকঃ অজয় কান্তি মন্ডল,

গবেষক,

ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি,

ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ