HEADLINE
কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে সজিনা গাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে একজনের মৃত্যু কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় পলাতক আসামি যশোরে গ্রেপ্তার
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪১ অপরাহ্ন

সমাজতন্ত্রের প্রাসঙ্গিকতা

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ৯৬৩
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২২

সমাজবাদ হচ্ছে এমন একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরনের সামাজিক মালিকানার এবং অর্থনীতির একটি সমবায় ভিত্তিক ব্যবস্থা তৈরি করা। আমরা আবার সমাজবাদ বা মতবাদ বা সমাজতন্ত্র এবং আন্দোলন হিসাবে বিবেচনা করতে পারি যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সমাজতন্ত্র এমন একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ ও অর্থের মালিকানা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনে থাকে অর্থাৎ সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি মালিকানা থাকে না। সমাজতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থাপনা বা প্রক্রিয়া যেখানে জন সাধারণের প্রয়োজন অনুসারে পন্য উৎপদান করা হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে একটি দেশের কলকারখানা, খনি, জমি ইত্যাদি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসাবে পরিগণিত হয়। উৎপাদনের উপায়ে সমাজতান্ত্রিক মালিকানা হলো এর অর্থনৈতিক ভিত্তি। সমাজ তন্ত্রে ব্যক্তিগত মালিকানার কোন পথ থাকে না। সুতরাং সমাজতন্ত্র কায়েম করতে পারলে মানুষে মানুষের মধ্যে কোন দ্বেষ, বিদ্বেষ, হিংসা, শোষন, নিপীড়ন কোন অর্থনৈতিক সংকট এবং বেকারত্বের চিহ্ন থাকেনা। এগুলো উন্মুক্ত করে উৎপাদনী শক্তির পরিকল্পিত বিকাশ ও উৎপাদন সম্পর্কের পূর্ণতর রূপদানের প্রান্তর। সমাজতন্ত্রের আমলে সামাজিক উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল জনগনের স্বচ্ছলতা ফিরে আনা এবং বৃদ্ধি করা এবং সমাজের প্রতিটি লোকের বিকাশ সাধন করা এবং সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। সমাজ তন্ত্র হচ্ছে এমন একটি দর্শন বা মতবাদ যার মাধ্যমে জনগন সমান ভাবে কাজ করবে তার সাধ্য অনুযায়ী। আমরা এক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম সমাজতান্ত্রিক দেশ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা তুলে ধরতে পারি। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজ তান্ত্রিক রাষ্ট্র্র কায়েম করা হয়েছিল ১৯১৭ সালে। সমাজতন্ত্রের রাজনীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন শ্রেণিগত পার্থক্য নেই। কেননা কলকারখানা ভুমি, উৎপাদন, সম্পদ জানমাল সবই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সম্পত্তি। সামজ তান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজ তান্ত্রিক অর্থনীতি আর বিলুপ্ত হয় শ্রেণী বৈষম্য ও শোষন। সমাজতন্ত্রের ইতিহাসের উৎপত্তি ১৭৮৯ সনের ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে। এবং তার থেকে উদ্ভুত পরিবর্তনের ভিতরে নিহিত, যদিও এটি পূর্বের বিভিন্ন আন্দোলন এবং ধারনা থেকে ও বিভিন্ন ধারনা গ্রহন করা হয়। ফরাসী বিপ্লবের মূল লক্ষ্য সমাজ তন্ত্র ছিল না যদিও সাম্য বাদ ও সমাজতন্ত্রের জন্মগার ছিল সেটাই। প্রাচীন কাল থেকেই সমাজ তান্ত্রিক ধারনায় সাধারণ বা জনমালিকানা সমর্থন করা ছিল বা বিদ্যমান ছিল। কার্লমার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের লেখা কমিউনিস্ট ইস্তেহার বইটিতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কথাটি ব্যবহার করা হয়। বইটি উনবিংশ সালের মধ্য দশকের দিকে লেখা হয় এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ও মতবাদের ভিত্তি তদানীন্তন সময়ে সমস্ত ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে মার্কস বাদের মতবাদ বা আদর্শ গ্রহন করে ইউরোপের সমাজ গণতান্ত্রিক দলগুলো উঠে আসতে শুরু করে। সর্ব প্রথম অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টি বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক পার্টি যখন পার্টি ১৮৯৯ সালে কুইন্সল্যান্ড রাজ্য নির্বাচনে জয়ী হয়। এ ছাড়া উনিশ শতকের প্রথম দিকে কল্প লৌকিক সমাজতান্ত্রিকদের দ্বারা কল্পিত নানা ব্যবস্থাগুলো পরবর্তী কালে পরিণত হয়েছিল বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদের নাম তাত্তি¡ক উৎসে। সোসালিজম বা সমাজতন্ত্র শব্দটি ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে রবার্ট ওয়েন কো অপারেটিভ ম্যাগাজিনে প্রথম ব্যবহার করেন। আধুনিক কালে শব্দটির ব্যবহার ও সংগা পাকাপোক্ত ১৬৮০র বছর গুলোতে। সেই সময়ের আগে ব্যবহৃত সমবায়ী, পারস্পরিক পন্থী এবং সংঘপন্থি শব্দ গুলোর পরিবর্তে সমাজতন্ত্র শব্দটি নানা লেখক ব্যবহার করা শুরু করেন। সমাজতন্ত্র রাষ্ট্র কায়েমের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হলো কল কারখানা, জমি সম্পদ এবং উৎপাদনের উপকরনের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বাীকৃত থাকবে। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পদ ও মুনাফা অর্জন নিষিদ্ধ। সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরনের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হবে। ফলে সমাজ ব্যবস্থায় কোন শ্রেনী বৈষম্য বা বিভেদ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন শ্রেণী শোষন থাকবে না। এই অর্থ ব্যবস্থায় জাতীয় আয় বন্টনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। এভাবে আয় ও সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিতের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ ও সমাজের কল্যানের দিকে লক্ষ্য রেখে উৎপদন ও বন্টন ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ জনগনের কল্যান সাধনই এই অর্থ ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। সমাজ তান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন, বন্টন, বিনিয়োগ ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষক, মেহনতী জনতা ও শ্রমিকদের শোষনের কোন পথ খোলা থাকে না। এবং প্রত্যেকেই সমান সমান সুবিধা ভোগ করে। শ্রমিকদের স্বার্থ সমাজ তান্ত্রিক ব্যবস্থায় রক্ষিত হয়। মানুষের সকল মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করা হয় মূলত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মাধ্যমে। সমাজ তান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগ গুরুত্বের সাথে উন্নয়ন করা হয়। এই অর্থ ব্যবস্থায় বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা থাকে না। কারন পরিকল্পনা মাফিক সকল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গুলি বাস্তবায়িত হয়। এই অর্থনৈীতক ব্যবস্থার আর ও একটি লক্ষণ এর মাধ্যমে পরিকল্পিত উপায়ে উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। বিধায় অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদন বর্ণিত সঙ্কট দেখা দেয় না। এই ব্যবস্থাপনায় দ্রব্যের মূল্য পুজিবাদের ন্যায় চাহিদা ও যোগানের ঘাত প্রতিঘাত অনুযায়ী আপনা আপনি নির্ধারিত হয় না। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকৃত পক্ষই দ্রব্য সামগ্রীর দাম নির্ধারন করে থাকে। সমাজবাদী সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ঠ্যগুলি হলো রাষ্ট্র সমাজের নেতৃজনিত ও চালিকা শক্তি মার্কসবাদী লেনিনবাদী দল নানা সামাজিক সংগঠন ও মেহনতী কর্মীদল। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রায় কাছাকাছি উভয়ের লক্ষ বা উদ্দেশ্য এবং মূলনীতি অনেকটা এক। অর্থাৎ শ্রেনীহীন, শোষনহীন, ব্যক্তি মালিকানাহীন এমন একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবাদর্শ বা ধর্ম যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার স্থলে উৎপাদনের সকল মাধ্যম এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রনাধীন থাকে। সাম্যবাদ হচ্ছে সমাজতন্ত্রের একটি উন্নত এবং অগ্রসর রূপ যাহা সমাজের বা রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মূখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য ও মতভেদ রয়েছে বহুকাল ধরে এবং ধারাবাহিক ভাবে অেেনক বিতর্ক ও চলে আসছে। কিন্তু উভয়ের মূল লক্ষ অনেকটাই এক। ব্যক্তি মালিকানা এবং শ্রমিক শ্রেণীর উপর শোষনের হাতিয়ার পুজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার অবস্থান ঘটানো। কার্লমার্কস যে মতবাদ উপস্থাপন করেছিলেন সেই মতে সাম্যবাদ হলো সমাজের এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের চুড়ান্ত শিখর। সেখানে পৌছাতে হলে বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য স্থাপন করতে হবে এবং সেই ক্রান্তিকালে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে সমাজে সামগ্রী ও সেবার অতিপ্রাচুর্য সৃষ্টি হবে। কোন দেশে সাম্যবাদ থাকলে সেখানে ধনী গরীবের ব্যবধান থাকবে না। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার নেবে। সাম্যবাদ হলো স্বাধীন সামাজিক ভাবে সচেতন শ্রম জীবি মানুষের উচু মাত্রায় সুসংগঠিত সমাজ তাতে কায়েম হবে সকলের সুশাসন। সেই সমাজে, সমাজের কল্যানের জন্য শ্রম হয়ে উঠবে প্রত্যেকের মুখ্য অপরিহার্য প্রয়োজন এবং এই প্রয়োজন উপলব্ধি করবে প্রত্যেক জনগন। সাম্যবাদ ব্যক্তিকে বেচে থাকার জন্য। সাম্যবাদ ব্যক্তিকে সাংস্কৃতিক সকল ফল ভোগের সুযোগ সহ বিজ্ঞান ও শিল্পকলায় সক্রিয় অবদান যোগানে সাহায্য করে। সাম্যবাদ হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর একটা পূর্ণঙ্গ মতাদর্শের ব্যবস্থা এবং একই সময়ে একটা নতুন সমাজ ব্যবস্থাও। সুতরাং নির্দিধায় বলা যায় সাম্যবাদ সমাজতন্ত্রকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং সকল জনগনের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য নির্বিঘেœ কাজ করা এবং মানব ইতিহাসে এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশী সম্পূর্ণ, প্রগতিশীল, বিপ্লবী ও যুক্তিসংগত। সুতরাং সারা পৃথিবীতে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হলে নিঃস্বার্থ ভাবে সমাজতন্ত্র মনা কর্মীদের নিয়ে এক যোগে কাজ করে মেহনতী জনতার নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ