মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন

খাদ্য গুদাম সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি কলারোয়ার প্রান্তিক কৃষকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৪১৭
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

খাদ্য গুদামের বিভিন্ন শর্ত জটিলতা ও হয়রানির অভিযোগে কলারোয়ায় সরকারের অভ্যন্তরীণ বোরো ধান বিক্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। সরকারি দামে ধান বিক্রয়ের আগ্রহ থাকলেও খাদ্যগুদাম সিন্ডিকেটের দাপট ও ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তার নিরবতায় কৃষকেরা বাধ্য হয়ে ফাড়িয়াদের নিকট ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষোদ উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা।

তাদের দাবি, কষ্টের ফসল ধান রোদ-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারলেও পরাজিত হতে হচ্ছে চিহ্নিত খাদ্য গুদাম সিন্ডিকেটের কাছে। যার কারনে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হয়রানি এড়াতে উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার অনেক কৃষক জানেন না সরকারের ধান ক্রয়ের বিষয়টি। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন চিহ্নিত প্রভাবশালী গুদাম সিন্ডিকেটের নিকট থেকে এক প্রকার টন প্রতি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা নিয়ে অবৈধভাবে নিন্ম মানের ধান ক্রয় করছেন। যদিও কৃষকদের এমন অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করেছেন কলারোয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন। তিনি বলেন, কৃষকদের তালিকা দেখে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। কলারোয়া উপজেলা খাদ্য অফিস সুত্রে জানাগেছে, চলতি বছর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে ২৭ টাকা কেজি প্রতি ১৬২৬ মেট্রিক টন বোরো ধান ও ৪০ টাকা দরে ১২৫৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। যা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। উপজেলার হেলাতলা, লাঙ্গলঝাড়া, জালালাবাদ, দেয়াড়া কেরালকাতা ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কলারোয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম মমতাজ পারভীনকে ম্যানেজ করে চিহ্নিত গুদাম সিন্ডিকেটের সদস্যরা অন্য উপজেলা থেকে নিন্ম মানের ধান ক্রয় করে কলারোয়া খাদ্যগুদামে বিক্রি করছে। তারা বলেন, ভোর রাতে ট্রলি যোগে ধান এনে গুদামের সংরক্ষিত প্রাচীরের মধ্যে রাখা হচ্ছে। পরে শ্রমিকরা এসে মেইন গেট বন্ধ করে দিনভর উক্ত নিন্ম মানের ধান গুদামের নিজস্ব বস্তায় ভরে ভিতরে সংরক্ষন করছেন। এরফলে সরকার যেমন লোকসান হচ্ছে ঠিক একইভাবে স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকেরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে। তারা আরও বলেন, কলারোয়া উপজেলা খাদ্য বিভাগের অনিয়মের কারনে প্রতি বছরই সরকারিমূল্যে ধান বিক্রি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক ও বর্গা চাষীরা। কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি অফিস প্রান্তিক কৃষকদের সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করতে ব্যাপক উৎসাহ দেয়ার পরও খাদ্য গুদামে দুর্নীতির কারনে প্রকৃত কৃষকরা সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব প্রান্তিক কৃষকরা অবিলম্বে দুর্নীতি বন্ধে ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের উর্দতন কর্তপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


খাদ্যগুদাম সংলগ্ন এক দোকানী জানান, প্রতিদিন ভোররাতে ট্রলিযোগে ভিতরে ধান প্রবেশ করানো হয়। পরে মুল ফটক বন্ধ করে দিনভর এসব ধান খাদ্যগুদামের বস্তায় ভরে গুদাম ভর্তি করা হচ্ছে। মুল ফটক বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ কিছুই বুঝতে বা দেখতে পারছেনা। অপরদিকে একাধিক মিলারদের অভিযোগ গুদামে ধান সংগ্রহের সময় সরকারের কোন নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। গুদামে ধান ক্রয়ে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বলা হলেও ধান সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এটা করা হচ্ছে না। যার কারনে চাল তৈরির সময় মিলাররা পড়ছে চরম বিপাকে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনকে অবহিত করা হলেও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি ধান না দেখেই গুদামে ঢোকানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মিলাদের সমস্যার বিষয়গুলি আমরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করবো। এছাড়া সিন্ডিকেটের দৌরাত্বের বিষয়টি তিনিও স্বীকার করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকেরা। এবিষয়ে জানতে চাইলে কলারোয়া উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মমতাজ পারভীন সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ধান ক্রয়ে কোন প্রকার অনিয়ম হচ্ছে না। কৃষি অফিসের দেয়া তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) পর্যন্ত কত মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বলতে পারবো না। আপনারা জেলা খাদ্য অফিসে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন। এছাড়া ধানের ময়েশ্চারাইজার দেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। এ বিষয়ে জানতে কলারোয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো: জাহিদুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ব্যবহুত মোবাইল বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ