মোমিনুর রহমান সবুজঃ সাত মাস ধরে সড়কে বালু আর পাথর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। যানবাহনের চাকায় ও বাতাসে রাস্তার বালু উড়ে সাদাটে ধুলার আস্তরণ পড়েছে পাশের গাছপালা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির দেয়ালে। সবুজ পাতায় এখন সাদাটে ধুলার আস্তরণ।
এমন চিত্র সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক এলাকা যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ঝাউডাঙ্গা বাজারগামী সড়কে। এই সড়কের দুই পাশে আছে বসতবাড়ি, দোকানপাট ও মসজিদ। পাথর বালুর ধুলায় দুর্ভোগের যেন শেষ নেই পথচারী ও স্থানীয় মানুষের। বৃষ্টি নামলে কাঁদা, আর রৌদ্র উঠলে ধুলায় সাদা কুয়াসার মত হয় এই সড়কটি। এতে করে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও রাস্তাটিতে পিচ ঢালাই না হওয়ায় জনগন ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারের প্রধান সড়কের দেড় কিলোমিটার ও কলারোয়া উপজেলার ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন প্রধান সড়কে প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১০ কোটিরও অধিক টাকার চুক্তিমূল্যে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে তৃপ্তি বিল্ডাস্ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে রাস্তার কাজে নিয়োজিত থাকা সকল শ্রমিকদের টাকা বকেয়া রেখে ও রাস্তার কাজ সম্পন্ন না করেই উক্ত ঠিকাদার পুরো টাকা তুলে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় শ্রমিক। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন অসহায় শ্রমিকসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু করে। চলতি বছরের উদুল আজহার আগেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি ৫ মাস যাবত শুধু স্কেবিউটার দিয়ে হাচড়া হাচড়ি আর সিডিউল অনুযায়ী রাস্তায় পানি দেয়ার কথা থাকলেও তেমনটা করা হচ্ছেনা।অন্যদিকে খবর ও নজর নেই সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোনো কর্মকর্তার। এদিকে বেশি বিপাকে পড়েছে সড়কের পাশের ব্যবসায়ী গুলো। যানবাহনে চাকায় পিষ্ট হয়ে পাথর গুলো উঠে যাওয়ায় চলাচলকারী গাড়ীর টায়ারের নিচে স্লিপ করে ছোট বড় পাথর মানুষের শরীরে ও দু’পাশের ব্যবসায়ীদের দোকান ঘরে ঢুকছে।
এ বিষয়ে ঝাউডাঙ্গা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রাজু ঘোষ ও ঔষধ দোকানদার শফিউল’সহ বাজারের অনেক ব্যবসায়ীরা বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতির কারণে আমাদের নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করতে প্রায় বছর হতে যাচ্ছে। এ সড়কে এখন বৃষ্টি হলে প্রচন্ড কাদা হয় আর রৌদ্র হলে প্রচুর ধুলা হয়। যার কারণে রাস্তার পাশে দোকানদারি করা আমাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এমন যদি চলতে থাকে তাহলে তারা রাস্তায় মানববন্ধন করবেন বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।’
মোটরসাইকেলে এই সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন দুই যুবক জাহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম। তাদের পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি। ধুলা লেগে তা সাদা হয়ে গেছে। পথে থেমে পোশাক থেকে ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে সাইদুল ইসলাম বলছিলেন, ‘কাপড়চোপড় সব শেষ হয়ে গেছে। এত ধুলায় মানুষ চলে কেমন করে?’
এই সড়ক থেকে ফিরে এসে কথা হয় ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ তপন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ধুলায় ফুসফুস, কিডনির ক্ষতি করে। ধুলার সিলিকন শিশুদের ফুসফুস শক্ত করে দেয়। ব্লাড ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করে। এ ছাড়া অ্যালার্জিজনিত ঠান্ডা, কাশি, চোখের সমস্যাও হতে পারে।
সড়কের বর্তমান চিত্র নিয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ সুদেষ্ণা মল্লিক বলেন, ‘১০ কোটি টাকার চুক্তিতে দুই কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের কাজ পেয়েছিলাম। তবে বর্ষাকাল বলে আপাতত কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ আছে। আশা কারা যায় সেপ্টেম্বর মাসেই আমরা কাজটি শেষ করতে পারবো। আর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না আমরা কাজ শেষ না করে উধাও হয়ে যায়নি। শুধুমাত্র এখন বর্ষাকালের জন্য বন্ধ রেখেছি। তবে রাস্তায় নিয়মিত পানি দেওয়ার বিষয়টি জরুরি ভাবে দেখবেন বলে জানান।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ধুলার কারণে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি তিনি জানেন। ধুলা থেকে রক্ষায় ঠিকাদারের লোকজনকে নিয়মিত পানি দিতে বলা হয়েছে। এখানে তারা কোনো ফাঁকি দিচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবেন। তবে বর্ষাকাল বলে কার্পেটিং কাজ বন্ধ আছে’। দ্রুত সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ করে চলাচলের উপযুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।