HEADLINE
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে সজিনা গাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে একজনের মৃত্যু কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় পলাতক আসামি যশোরে গ্রেপ্তার দেবহাটায় নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে শিশুর ম’র্মা’ন্তিক মৃ’ত্যু সাতক্ষীরায় দু’বস্তা ফেনসিডিল’সহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৯ অপরাহ্ন

মানব উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ৭২৬
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১

শিক্ষার চেতনা-চেতনায় বিপ্লব, বিপ্লবে মুক্তি এবং রক্তে আনোলাল এবং রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিড়ে আনো ফুটন্ত সকাল- এই দুই টি বিখ্যাত প্রবাদ মানব কে সম্পদে পরিনত করা শিক্ষিত করা এবং উন্নয়নের ধারা বৃদ্ধি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় শিক্ষা ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নহে। শিক্ষার মূল কাজ মন থেকে জড়তার আবরন ঘুচে দেওয়া মন থেকে অন্ধকার দুর করে দেওয়া। একমাত্র শিক্ষাই আমাদের চোখ মেলে দেখার উপায়টা তৈরি করে দেয়। শিক্ষার মাধ্যমেই জানা যায় কোনটি ঠিক কোনটি বেঠিক, কোনটি সুন্দর কোনটি অসুন্দর, কোনটি সাদা কোনটি কালো। সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশেষ্ঠ মহামানব মহানবী হযরত মুহাঃ (সঃ) ও শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে গেছেন। নর ও নারী তাদের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য একজন শিক্ষিত ব্যক্তির সংগে দশ জন অশিক্ষিত ব্যক্তির তুলনা করেছেন। সুতরাং মানব সম্পদ গঠনের জন্য শিক্ষার বিকল্প আর কিছ্ইু নাই। একজন ব্যক্তির মান উন্নয়নের জন্য, পরিবারের সভ্যতা সৃষ্টির জন্য দেশ ও দশের উন্নতির জন্য আসলে শিক্ষার বিকল্প কিছুই নাই। কিন্তু শিক্ষাটা হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ মান সম্মত যথার্থ দর্শন ভিত্তিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং ধর্ম নিরপেক্ষ যাহা জাতি গঠনে এবং পরিবেশের, সমাজের শৃংখলা রক্ষার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের দেশের সমগ্র জন সমাজের একটি বিরাট অংশ অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে আছে। আনেকেই আবার শিক্ষিত হয়েও অন্ধকার জীবনে নিমজ্জিত, তাদের ভিতরে কোন জাগ্রতবোধ এখনও পর্যন্ত সৃষ্টি হয় নাই। এরূপ শিক্ষিত ব্যক্তিদের সংগে অশিক্ষিত ব্যক্তিদের তুলনা করা চলে। এ জাতীয় শিক্ষিত ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা স্বরূপ। তারা শিক্ষিত ব্যক্তি হয়েও সমাজের কাছ থেকে কোন সম্মান বা শ্রদ্ধা পায় না। সুতরাং আমাদের দেশে এমন শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে যার মাধ্যমে মানব যাহাতে সম্পদে পরিনত হতে পারে এবং পরবর্তী জেনারেশন যেন সহজেই শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। আমাদের মনে রাখা উচিত মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কেহই পৃথিবীতে আসে না। শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য কিছু কাজ অর্জন করতে হয়। আর তার জন্যই দরাকর মূলত সঠিক শিক্ষা। বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানের, তথ্য প্রযুক্তির এবং দর্শনের তাই বিশ্বে এই মানুষকে মনে করা হয় সম্পদ হিসাবে। সেই জন্য শিক্ষাকে মনে করা হয় মানব উন্নয়নের আসল মাধ্যম। প্রকৃত শিক্ষার মধ্য দিয়েই মানুষ সম্পদে পরিনত হয়। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে আমরা বসবাস করছি এবং জাতিতে আমরা বাঙালী। সুতরাং বাঙালী জাতির উন্নয়নের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে শিক্ষা। তাই জাতীয় জীবনে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারন ঘটাতে না পারলে অর্থনীতি বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব নহে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই যদি শিক্ষার উপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া যেত তাহলে মনে হয় বাঙালী হিসাবে এবং বাংলাদেশকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ন উন্নত জাতি হিসাবে গড়তে কোন রকম বেগ পেহে হতো না। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন আমাদের দেশের শিক্ষার হার কম ছিল এবং অনুন্নত ও ছিল। সেক্ষেত্রে আমরা কোরিয়ার কথা উল্লেখ করতে পারি এবং সেই সমস্ত দেশ গুলি এখন উন্নত দেশে পরিনত হয়েছে। শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে শিক্ষার কারনে। সুতরাং ব্যক্তি জীবনে বা পারিবারিক জীবনে উন্নত না হওয়া অর্থই হচ্ছে ব্যক্তি জীবনের বা পারিবারিক জীবনের দূর্ভোগ আর এই দূর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে দরকার শিক্ষার এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা দরকার। যে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে সুনির্দিষ্ঠ পরিকল্পনা মানুষের উপযোগী একটি সুপারিশ এবং গনমুখী যার মাধ্যমে সকল শ্রেনীর মানুষ তাদের সন্তানদেরকে শ্রেনী বৈষম্যহীন শিক্ষা দিতে পারে। শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভিতরে বাঙালী জাতীয়বাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র , ধর্মনিরপেক্ষতা, সংস্কৃতি ইত্যাদি সমানভাবে জাগ্রত করতে হবে। তখনই তারা সুনাগরিক, দেশপ্রেমিক এবং দেশের জন্য ত্যাগী হিসাবে গড়ে উঠতে পারবে। দেশ প্রেমিক এবং সুনাগরিক হিসাবে শিক্ষার্থীদেরকে গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারের। এখনও পর্যন্ত আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চাতে পড়ে আছি। সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনার অভাবে যেখানে বিশ্ব মুহুর্তের জন্য ও থেমে নেই। এর প্রধান কারন শিক্ষানীতি বিষয়ক যে সমস্ত কমিটি গঠন করা হয় তাদের বেশীর ভাগ আমলা এবং তাদের সন্তানেরা বিদেশে বা দেশের বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষালয়ে লেখাপড়া করে। গরীব বা মধ্যবৃত্ত ঘরের মেধাবী সন্তানদের কথা তারা ভাবে না। সুতরাং গ্রামের দরিদ্র পিতা মাতারা ঠিকমত অর্থব্যয় করতে না পারার কারনে তাদের মেধাবী সন্তানেরা হাইস্কুলের বা কলেজের গন্ডী পার না হতেই তাদেরকে ঝরে পড়তে হয়। মানব সম্পদ উন্নয়নে এ কারনে দেশকে অনেকটা পিছিয়ে পড়তে হয়। তাই এমন শিক্ষা কমিটি আমাদের মত দরিদ্র দেশে প্রয়োজন যারা শিক্ষার সাথে জড়িত এবং গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের মেধাবী সন্তানদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়ার কয়েকটি দেশ ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছিল। জাপান, কোরিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। তাদেরকে মৃত্যুর সংগে লড়াই করে বাঁচতে হয়েছে। আজকের জাপান, কোরিয়া কোথায় যেয়ে দাড়িয়েছে শিল্প কল কারখানায় তারা বেশ উন্নত। সমস্ত পৃথিবীর মানুষের মধ্যে তাদের শিল্পের অনেক চাহিদা রয়েছে। তারা কেন আজকের উন্নতির শীর্ষে পৌছে গেছে? শুধুমাত্র পরিকল্পিত শিক্ষা নীতির কারনে। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা বরং আমাদের চাইতে অনেক পিছিয়ে ছিল বিশেষ করে শিক্ষার দিক দিয়ে। এছাড়া আমাদের এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ দ্রæত এগিয়ে গেছে উন্নয়নের দিক থেকে। তাদের মধ্যে মালয়েশিয়া, চীন উল্লেখ করার মত। উন্নতির প্রধান বাহন হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বৃত্তিমূলক শিক্ষা। যে শিক্ষায় গড়ে উঠেছে তাদের মানব সম্পদ। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ ধন্যবাদ তিনি অনেক পরে হলেও বুঝতে পেরেছেন দেশের উন্নতি করতে হলে মানবকে সম্পদে পরিনত করতে হবে এবং এ জন্য যে শিক্ষাগুলি এ মুহুর্তে খুবই প্রয়োজন সেই শিক্ষাগুলির উপর তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন বৃত্তিমূলক শিক্ষা, কারিগরী শিক্ষা, টেকনিক্যাল শিক্ষা, এই শিক্ষাগুলি বাস্তবায়িত হলে দেশের যুবক শ্রেনীকে বিভিন্ন কাজে লাগানো যেতে পারে এবং বেকার সমস্যা অনেক ঘুচে যাবে। তারা নিজেদেরকে স্বনির্ভক করে গড়ে তুলতে পারবে। প্রধান মন্ত্রীর যুগোপযোগী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা টেকনিক্যাল শিক্ষা বা এ সম্পর্কে প্রশিক্ষন দিতে পারলে স্কুল কলেজে লোখা পড়া করতে এসে শিক্ষার শেষ ধাপ পর্যন্ত পৌছাতে পারেনি বা যাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নাই বা অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে তারাই আবার নতুন করে আতœকর্ম সংস্থানের পথ খুজে বের করার সুযোগ পাবে। সুতরাং আমরা একথা স্পষ্ট বুঝতে পরি যে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ছাড়া জনগনকে মানব সম্পদে পরিনত করা একেবারে অসম্ভব। দেড়শত কোটি জনসংখ্যার দেশ চীন, এছাড়া তাইওয়ান, ইটালী, জার্মানী, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, জাপান এবং ইউরোপের অনেক দেশ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বিশাল জনগোষ্ঠীকে আজকের তারা সম্পদে পরিনত করেছে এবং আমেরিকার দেশ গুলির কথা নাই-ই বললাম। তারাতো শুরুতেই শিল্পে উন্নত দেশ। সুতরাং আমাদেরকে ও উন্নত দেশ গুলি থেকে কিছুটা সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার কার্যক্রম চালাতে পারলে হয়তবা একদিন দেশের ষোল কোটি জন সংখ্যাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ