HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন

বর্তমানে শিক্ষা বা শিক্ষিত সমাজ যাচ্ছে কোথায়?

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ৫৩৭
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

শিক্ষা প্রক্রিয়াতে কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুনাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল এবং একজন গ্রহনযোগ্য সদস্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যে সকল সক্ষমতা, দক্ষতা বা যোগ্যতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যপক অর্থে পদ্ধতিগত ভাবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে। তবে অন্য ভাবে বলতে গেলে শিক্ষা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যহত অনুশীলন। বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে ‘শাস’ ধাতু থেকে যার অর্থ উপদেশ দেওয়া, জ্ঞান দেওয়া, সাহায্য বা সহযোগিতা করা এবং সততার সাথে, আদর্শের সাথে, স্বার্থহীন ভাবে শাসন করা। অন্য দিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে ল্যটিন শব্দ ‘এডুকেয়ার’ বা ‘এডুকাতুম’ থেকে। যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভিতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। মহান দার্শনিক শিক্ষা গুরু সক্রেটিসের ভাষায় শিক্ষা মানেই সত্যের বিকাশ, প্রকৃত সত্য কে বের করে আনা এবং মিথ্যাকে মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করা বা মিথ্যার অপনোদন। অপর দিকে আরেক মহান দার্শনিক এরিস্টটল বলেন ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন’ তৈরী করাই হল শিক্ষা। বিশ্বকবি রবীন্দনাথ ঠাকুর বলেছেন, “শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশই করে না- বিশ্ব সত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।” সুতরাং সব মনিষীগণের কথায়, সাহিত্যিকদের কথায়, গুনী ব্যক্তিদের কথায়, পন্ডিত ব্যক্তিদের ভাষায়, কবিদের ভাষায়, ‘শিক্ষা একটি জীবন ব্যাপী প্রক্রিয়া’ যার মাধ্যমে মানুষ সততা বা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে শেখে, সমাজ থেকে বিশৃংখলা দুর করতে শেখে, সঠিক পথ খুজে বের করার উপায় খুজে পায়। কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ, কিভাবে ব্যয় করতে হবে, কিভাবে অর্জন করতে হবে, কিভাবে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে এটাই শিক্ষার কাজ। মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগে মুহুর্ত পর্যন্ত শেখে। তাই শিক্ষা লাভ করা ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব হয় না। আমরা বড়দের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষকদের কাজ থেকে, সভ্য সমাজ থেকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা লাভ করি এবং সেই মোতাবেক জীবন যাত্রা চালিয়ে আসছি। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা বা শিক্ষিত সমাজ যাচ্ছে কোথায়, হচ্ছেটা বা কি? শিক্ষার সংগা ও হয়ত বা এক ধরনের জ্ঞান মূর্খ পন্ডিতেরা বা শিক্ষকরা নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পরিবর্তন করে ফেলেছে। সততার পরিবর্তে অসততা, নিয়মের পরিবর্তে অনিয়ম, সত্যের পরিবর্তে মিথ্যা এবং আইনের পরিবর্তে বেআইনী কাজ করতে হবে। এমন শিক্ষাই হয়ত বা আমরা এখন লাভ করতে যাচ্ছি। “সকালে উঠে আমি মনে মনে বলি, আমি যেন সারাদিন ভাল হয়ে চলতে পারি।” আবার এমনও হতে পারে সকালে উঠে মনে মনে বলি আমি যেন সারাদিন দূর্নীতি বা ঘুষ খেতে পারি, টাকার পাহাড় অর্জন করতে পরি। প্রকৃত শিক্ষা এখন আর নেই। প্রতিটি বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে আমরা এমন চিত্রটাই দেখতে পাই। গ্রামে, গঞ্জে, ময়দানে এমনকি অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ও আছে এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রী কলেজ, যেখানে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে এমনকি দুই একটা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স ডিগ্রীর মতো কোর্স ও চালু করা হয়েছে। একটু ভেবে দেখেন তো আমরা কোথায় যাচ্ছি। বেসরকারি স্কুল কলেজের নিবন্ধনের পূর্বের নিয়োগের কথা যদি আমরা চিন্তা করি দেখা যায়, বি.এ. পাস, বি.কম. পাস, সাধারণ ডিগ্রাী পাস শিক্ষা জীবনে কিছুটা ব্রেক দিয়ে হয়ত বা অনিয়মিত ভাবে পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রী অর্জন এবং পরবর্তীতে এম.এ বা এম.কম ডিগ্রী লাভ করছে তারা কি আসলে সম্মান শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর যোগ্য বা একটি বিভাগে প্রধান হয়ে অনার্স কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব? দেখা গেছে মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে গভর্ণিং বডি বা ব্যবস্থাপনা পর্ষদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগে যোগ সাজশে এহেন দূর্নিতির মাধ্যমে অযোগ্য অদক্ষ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে সম্মান শ্রেণীর বা অনার্স যেটাই বলি না কেন তার গুরুত্ব বা মর্যাদা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। মর্যাদা বলতে আর কিছুই নেই। বেসরকারী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্সে পড়–য়া অনেক শিক্ষার্থী আজ অনার্স, ডিগ্রী, প্রিন্সিপাল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি বানান ইংরেজীতে লিখতে পারেনা বা বানান করতে পারে না এমনটি মনে হয়েছে। যখন আমরা অনার্স কোর্সের (নন মেজর) ইংরেজি খাতা পরীক্ষণ বা নিরীক্ষণ যাই করি যাই করি বানান ভূলের চিত্রটাই পাই। এটাতে কি হয়, সম্মান শ্রেণির সম্মান বা মর্যাদা আসলে হ্রাস পায়। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায় যে সে গ্রেড ৩ পেয়েছে অর্থাৎ প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের কাছে অনার্স কোর্সের কোন মূল বই নেই। আছে বড় বড় গাইড। কিছু কিছু গাইড শিক্ষকরা কিনতে বাধ্য করেন। সবাই ভাবুন তো এটাকে কি অনার্স বা সম্মান শ্রেণীর লেখাপড়া বোঝায়? আবার মোটা অংকের বেতন, পরীক্ষার ফি বা ফর্ম পূরন বাবদ অনেক টাকা উপার্জনের ইঙ্গিত এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়। আর ও একটি বিষয় লক্ষণীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ সাজশে কিছু কিছু শিক্ষক আছেন প্রত্যেক বর্ষের খাতা এবং কোন না কোন শিক্ষা বর্ষে প্রতি বছর প্রধান পরীক্ষক ও হয়ে থাকেন। অনেক শিক্ষক অনার্স কোর্ষে আছেন তারা খাতা দেখার সুযোগ ও পান না। তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সম্মান শ্রেণীর ক্লাস গুলো বেশি বেশি পরিমাণ করানো হয়। কিন্তু বিনিময়ে সামান্য পারিশ্রমিক তাদের দেওয় হয় না। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হতে কোন রকম সমস্যা হয় না। বাড়ী যেয়ে যেয়ে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে তাদের কাছ থকে বা অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় প্রবেশ পত্র, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড বা মার্কশীট নিযে ভর্তি দেখানো হয়। আজকে আমি এভাবে লিখছি কেন? লেখার কারন ও বা কি? আমি আমার এই লেখাটা প্রকাশের পর অনেক শিক্ষক আমাকে নিয়ে সমালোচনা করবে বা করতে পারে তাতে কিছু এসে যায় না। প্রকৃত কথা গুলো বা সত্যটা প্রকাশ তো করতে হবে। জনগনকে বা শিক্ষার্থীদের কে সজাগ করতে হবে। আসা যাক বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ের কথা নিয়ে। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর আসন সংখ্যা অনেকটা সীমিত। প্রতিদ্বন্দীপূর্ণ পরীক্ষায় সুযোগ পাওয়া অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্ররা যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তির পর বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে গ্রেড পয়েন্ট তিন পাচ্ছে না কিন্তু তারা তো মেধাবী এবং খাতা মূল্যায়ন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাহলে বেসরকারী কলেজ প্রথম শ্রেণীতে বা গ্রেড পয়েন্ট তিন নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ পাচ্ছেন সেখানে বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চাকরীর ক্ষেত্রে মেধাবীরা অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছে। ঘুষ বা দূর্ণীতির কারনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমমানের সনদ হওয়ার কারনে মেধাহীন বা যোগ্যহীন প্রার্থীরা এগিয়ে থাকছে। সুতরাং এই বৈষম্য দূর হওয়া উচিত। আমার দৃষ্টিতে বেসরকারী কলেজ থেকে অনার্স কোর্স একেবারে উঠিয়ে দেওয়া উচত। সরকারী কলেজ গুলোতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের অধীনে অনার্স কোর্স বা মাষ্টার্স কোর্স চালু রাখা উচিত। একবারে সম্মান শ্রেনী পাস করা অনেকটাই বেমানান বলে আমার কাছে মনে হয়। আমাদের দেশে শিক্ষার হার অনেক বেশী যে কোন কারনেই ইচ্ছার বাইরে অনেক সময় পাস করিয়ে দিতে হয়। ফলে মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এবং বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম থাকা ও আসন সংখ্যা অনেক নগন্য থাকার কারনে গ্রাম, গঞ্জের অনেক মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে পড়াশুনার তেমন সুযোগ পাচ্ছে না। তাই অন্তত সরকারী কলেজ গুলোতে অনার্স কোর্সে আসন সংখ্যা একটু বাড়ালে ভাল হয়। কিছুটা পড়া শুনার মান ফিরে আসতে পারে। সরকার কে এ ব্যাপারে সুনজর দেওয়ার জন্য জোর অনুরোধ করবো। আসুন আমরা সবাই মিলে আবার একসংগে কাজ করি। শিক্ষার প্রকৃত মান, মর্যাদা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুষ, দুর্ণীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। ঘুষ খোর, দুর্ণীতিবাজ, প্রশাসক বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরও একবার প্রতিবাদ জানাই। কলেজ ক্যাম্পাসের সঠিক পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে এসে আমরা শিক্ষার্থীদের সঠিক ভাবে পাঠ দান করানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। মাননীয় শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে বা শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে এবং সর্বপরি প্রধান মন্ত্রীর কাছে একটাই দাবী সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্বের ন্যায় আবারো সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির ব্যবস্থা করার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারি অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ