HEADLINE
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে সজিনা গাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে একজনের মৃত্যু কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় পলাতক আসামি যশোরে গ্রেপ্তার দেবহাটায় নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে শিশুর ম’র্মা’ন্তিক মৃ’ত্যু সাতক্ষীরায় দু’বস্তা ফেনসিডিল’সহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

আমাদের চীনে আসার গল্প

অজয় কান্তি মন্ডল / ৪৭১
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

ভোরের আলো ফুটতেই বাড়িতে অনেক মানুষের আনাগোনা। সকালেই আমরা বাড়ি থেকে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা দেব এমনটায় সবার জানা সেজন্য সবাই বিদায় জনিত দেখা করতে এসেছে। মাসতুতো ভাই গোপাল এসে প্রাইভেট কারের (ভাড়াকৃত) চালককে কল করতেই গাড়ি চলে আসল। গাড়ি দেখেই মায়ের উচ্চস্বরে কান্না। মায়ের কান্না সেই শুরু হয়েছেলি বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। কিন্তু ওই দিনের সকাল থেকে লাগাতার ভাবে মা কান্না করেই চলছিল। একটু বকাবকি করেই মায়ের কান্না থামালাম। তড়িঘড়ি করে সকালে নাস্তা সেরে তৈরি হলাম। বুঝলাম যত দেরি করব এই কান্নার পাল্লা ততই ভারী থেকে ভারীতর হবে। তাই হীরাকে (আমার স্ত্রী) দ্রুত রেডি করে দাদাবাবু দের লাগেজগুলো নিয়ে গাড়িতে উঠাতে বললাম। চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় ছিলাম তাতেই মা-বাবার পরাণ ছিড়ে যেত আর আজ বউ বাচ্চা নিয়ে রওনা দিচ্ছি সুদূর প্রবাসে। কান্না কাটি বেশি হবে সেটায় স্বাভাবিক।

আমাদের বিদায় উপলক্ষে পাড়ার দাদা-বৌদি, কাকিমা-জ্যাঠিমা, কাকা-জেঠা, পিচ্চি-বয়স্ক সবাই এসেছে। অন্য সময়ও তারা আমাদের বাড়ি আসে কিন্তু সেদিনের আসাটা একটু অন্যরকম ছিল। সবাই মনমরা, সবার মুখে প্রশ্ন আর কতদিন পরে দেশে আসব? চীনে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে? কখন প্লেনে উঠব আর কখন পৌঁছাব? নিজেরও অনেক খারাপ লাগছিল। শুধুই মনের ভিতর বারবার উঁকি দিচ্ছিল নানান প্রশ্ন। জানিনা আবার কবে গ্রামের এসব সহজ সরল মানুষ গুলোর সাথে দেখা হবে! কবে আবার গ্রামে এসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারব! মায়ের হাতে রান্না খেতে পারব! পারবতো এই দুর্গম পথ সফলতার সাথে পাড়ি দিয়ে আবার সবার কাছে ফিরে আসতে? এসব নানান প্রশ্নের বাণে বেশ কয়েকদিন ধরেই নিজের বিবেককে নিজের কাছেই জর্জরিত হতে হচ্ছিল।

আসার আগে সবাইকে বলে এসেছিলাম আমার মা-বাবা কে দেখে রেখ। সুবিধা-অসুবিধায় তোমরা তাদের খোঁজ নিও। কেননা প্রতিবেশী ছাড়া বাড়িতে তাদের দুজনকে দেখার যে আর কেউ নেই। এসব বলে সবার থেকে একে একে বিদায় নিলাম। এরপর ঠাম্মা, মা-বাবা, দিদি-দাদাবাবু সহ অন্য সবার থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। সেমুহূর্তে আর নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারলাম না। কেন জানিনা বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব চিৎকার করে কেঁদে দিলাম। দিদি, বোন, হীরা সবাই খুব কেঁদেছিল। বিগত দিনগুলোতে বাড়ি থেকে ঢাকা রওনা হলেও কান্নাকাটি হত কিন্তু সেদিনের যাত্রা ছিল একটু অন্যরকম। কেননা ওই যাত্রাটা দুই বা তিন মাসের জন্য নয়। বছরের পর বছরের উদ্দেশ্যে আমাদের দেশ ছেড়ে আসা। তাই শত চেষ্টায়ও নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারা বেশ কষ্টকর ছিল। আমরা রাস্তায় বের হয়ে দেখলাম রাস্তা ভরা মানুষ। পাড়ার সবাই মোটামুটি এসেছে আমাদের বিদায় দিতে। গাড়িতে ওঠার আগে খেয়াল করলাম আমাদের বিদায় দিতে মা রাস্তায় আসেনি। পিছন ফিরে মাকে দেখার চেষ্টা করলাম, দেখলাম বাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে দেখছে আর চোখের জল মুছছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে মাকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠলাম।

আমাদের গাড়ি খুলনার উদ্দেশ্যে ছাড়ল এবং যাত্রাটা শুরু হল একেবারে চিঠিতে ঠিকানা লেখার মত করে। রওনা হলাম গ্রাম থেকে পোস্ট, পোস্ট থেকে থানা, থানা থেকে জেলা, জেলা থেকে বিভাগ, বিভাগ থেকে রাজধানী, সবশেষে রাজধানী থেকে দেশের বাইরে। সারাটা পথ যাচ্ছি আর মন ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে। মনে পড়ছিল শৈশবের সেইসব দুরন্তপনার কথা। বাড়ী থেকে অল্প দূরে রাস্তার পাশের পুরাতন কালভার্টটা দেখে মনে উঠল স্কুল এবং কলেজ জীবনের অনেক স্মৃতি। সুব্রত, শেখর মামা, বিল্পব মামা, পুস্পেন দাদু সহ সমবয়সী আরও অনেকের বিকালের আড্ডার জায়গা ছিল ওই কালভার্ট। সবাই বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে ওই কালভার্টের উপরে জমা হতাম। সেদিনও কালভার্টটা সেরকমই ছিল কিন্তু আমরা সবাই ছিলাম ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। সবাই সবার কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত। কেউ ব্যস্ত নিজের পরিবার নিয়ে আবার কেউ ব্যস্ত নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে। সেবার একমাসের ও বেশি সময় গ্রামে ছিলাম। বলতে গেলে গেল আট দশ বছরের ভিতর ওটায় দীর্ঘ সময় গ্রামে থাকা। তার পরেও কিভাবে জানিনা খুবই দ্রুত সময় চলে গেল। গ্রামে থাকার দিনগুলো প্রায় প্রতিদিন বিকেলে আমি, তপন মামা, সুব্রত, বিপ্লব মামা একসাথে  দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছি। বাড়ি থেকে রওনা দিয়েই মনে পড়ছিল সেসব স্মৃতি। আগেরদিন ও সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই পুরানো কালভার্টটার উপরে বসে বাল্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে বিদায় নিয়েছিলাম। যখন গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম তখন খুব করে মনে পড়ছিল সেসব কথাগুলো।

গ্রামের বাজারের ভিতর দিয়ে যখন গাড়ি যাচ্ছিল তখন নজরে পড়ল সুধীর বাবুর মিষ্টির দোকান। যেখানে সবাই আড্ডা শেষে ঢুকতাম জলযোগের জন্য। রকমারি সেইসব মিষ্টির প্লেটে তখনো প্রায় একইরকম ভাবে মিষ্টি গুলো সাজানো ছিল। ছিলনা শুধু আমাদের সেই আগের মত দলবেঁধে উপস্থিতি। এসব হাজারো স্মৃতি মনের মনিকোঠায় নাড়া দিচ্ছিল। কেন জানিনা গ্রামের সেই সহজ সরল মানুষের মত তাদের সাথে মিশে আরও বেশিদিন গ্রামে থাকতে অনেক ইচ্ছা হচ্ছিল। সেজন্য নিজের আবেগকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে আমরা থানার রাস্তা পাড়ি দিয়ে জেলার দিকে এগুতে লাগলাম।

এরপর আমাদের গাড়ি তালার (সাতক্ষীরার একটি থানা) ভিতর দিয়ে একবারে ছোট বোনের বাড়ির গা ঘেঁষে খুলনার দিকে যেতে লাগল। খলিশ খালি হয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন খুব করে বোনের বাড়ির কথা মনে হচ্ছিল। কিছুদিন আগে আমরা ওখানে প্রায় এক সপ্তাহ থেকে গেছি। গাড়িতে বসে মনে পড়ছিল বোনের বাড়ি এসে আমরা সবাই একসাথে ওই একই রাস্তা দিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন ছিল প্রাপ্তির আনন্দ আর ওইদিন ছিল বিচ্ছেদের বিরহ।

এসব ভাবতে ভাবতে খুব অল্প সময়ের ভিতর আমরা খুলনা পৌঁছেই বাড়ি কল দিলাম জানানোর জন্য। কিন্তু বাড়িতে তখন ও কান্নার রেশ থামেনি। অনেক বুঝিয়ে ফোন রাখলাম। এদিকে খুলনায় হীরার মা-বাবা, ঠাম্মা আসছে আমাদের বিদায় উপলক্ষে। খুলনায় দুইদিন থাকার পরে ঢাকায় রওনা দিই। যেদিন খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হই তখন ও অনেক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। শ্বশুর কাঁদছে সাথে শাশুড়ি এবং ঠাকুরমা। অন্তুকে (আমার মেয়ের নাম) ওর দাদার কোলে দিয়ে ঠাম্মাকে পাশে বসিয়ে শাশুড়ি কয়েকটা ছবি তুলল। আমরা তিন বছর পরেই ফিরব সেরকম পরিকল্পনা নিয়ে চীনে পাড়ি দিচ্ছি। তাই শাশুড়ির ধারণা হয়ত এই তিন বছরে আমরা অনেক কাউকেই হারাতে পারি। তাই উনি শ্বশুর, ঠাম্মা সহ অন্তু এবং আমাদের সবার একসাথে ছবি তুলে রাখার জন্য বলছিল। যাত্রাপথে বের হওয়ার মুহূর্তে এমন আজগুবি কথা শুনে আমি শাশুড়ি কে একটু বকা দিলাম। কয়েকটা ছবি তুললাম সবাই একসাথে।

একটু পরেই হীরার কাকার ছেলে ‘ভবেন্দু’ আমাদের বাস স্ট্যন্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিল। আমরা বাসে উঠে আবার সবার সাথে ফোনে জানিয়ে দিলাম যে আমরা রওনা হয়েছি। মাওয়া লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে তিনটা বড় লাগেজ সাথে তিনটা ব্যাকপ্যাক সহ খুব কষ্টে পার হয়ে অন্য পারের বাসে উঠলাম। পূর্বে পরিবার নিয়ে ঢাকা আসার সময় ভাবতাম গুলিস্তান আসা মানেই বাসায় পৌঁছে যাওয়া। বাসা ছিল চাঙ্খারপুল, যেটা গুলিস্তান থেকে রিক্সা নিলেই অল্প সময়ে পৌঁছে যাওয়া যেত। কিন্তু সেবাবের গন্তব্য বেশ দূর। সেই সাইন্স ল্যাব, বাটা সিগনাল। আমার কর্মস্থল ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ’ বা ‘সাইন্স ল্যাব’ এর গেস্ট হাউজে আমরা থাকব। ট্রাফিক জ্যামের কারনে রিক্সা ওয়ালারা তেমন রাজি হতে চাইল না। অনেক সময়ের চেষ্টার পরে বহু কষ্টে দুটো রিক্সা নিয়ে অফিসের গেস্ট হাউজ পৌছালাম। উজ্জ্বল দাদার (হীরার দাদা) তখন ঢাকায় ট্রেনিং চলছিল। দাদা সন্ধ্যায় আমাদের ওখানে আসল। আমরা বাইরে থেকে রাতের ডিনার সেরে গেস্ট হাউজে ফিরলাম। পরের দিন ফ্লাইট সেই টেনশন এবং বাড়ির সবার চিন্তায়  রাতে ভালো ঘুম হলনা। পর দিন সকালে অফিসে গিয়ে কিছু দরকারি কাজ সেরে সহকর্মীদের থেকে বিদায় নিলাম।

সকালে উজ্জ্বল দাদা অফিসের ট্রেনিং এ মতিঝিল চলে গেছে। দুপুরের লাঞ্চ সেরে সামান্য একটু বিশ্রাম নিতেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। রাতেই (১২:৫০ এ) ফ্লাইট। একটু আগে ভাগেই রওনা দিতে হবে। ঢাকার রাস্তায় তখনো মেট্রোরেলের কাজ চলছিল। মাঝেমধ্যে প্রচুর জ্যাম থাকে। সাথে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশানেও বেশ সময় লাগে। উজ্জ্বল দাদা আমাদের সাথে বিমান বন্দরে যাবে। তাই দাদাকে বললাম ‘আগে থেকেই বের হয়েন যাতে আমরা একসাথেই গেস্ট হাউজ থেকে রওনা দিতে পারি’। আমি আর অন্তু রাতের জন্য হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। হীরা কিছু খেতে চাইল না। আমি অনেক অনুরোধ করেছিলাম ওকে খেতে কেননা আর কখন খেতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারন আমি এটাও নিশ্চিত ছিলাম বিমানের দেওয়া খাবার ওরা খেতে পারবেনা। চাইনিজ এয়ার লাইনের খাবার প্রথম খেতে গেলে খাবারে একটু গন্ধ লাগে। তাই কিছু শুকনো খাবারও নিলাম সাথের ব্যাগে করে। এর মধ্যে উজ্জ্বল দাদা ট্রেনিং থেকে ফিরে আসল। রাত আট টায় আমরা উবারের একটা এক্স এল সাইজের গাড়িতে বিমানবন্দর রওনা হলাম এবং দেড় ঘন্টার ভিতর পৌছে গেলাম। উবারের ভাড়াকৃত গাড়িটা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল-২ তে এসে থামার সাথে সাথেই সেখানকার কর্তব্যরত গার্ড এসে আমাদের বলল ‘এখানে ভিড় করা যাবেনা এখুনি ভিতরে ঢুকতে হবে’। আমি গাড়ি থেকে লাগেজ এবং ব্যাগপত্র নামাতে নামাতে বললাম ‘ভাইরে আগেতো নামি, গাড়ি ওয়ালার ভাড়া মিটায় তার পরে না ভিতরে ঢুকব’। ওনারা এসব কথা শুনতে নারাজ। খুব তাড়াহুড়ো করে ভাড়া মিটিয়ে উজ্জ্বল দাদার থেকে বিদায় নিয়ে বিমানবন্দরের প্রবেশ গেটে রাখা স্ক্যানারে সব লাগেজ পত্র দিয়ে পাসপোর্ট চেক করে নিজেদের তল্লাশি শেষ করার সাপেক্ষে ভিতরে ঢুকলাম। হীরা রাতের জন্য কিছু খায়নি সেজন্য দিবাকর দাদা (উজ্জ্বল দাদার বন্ধু) আগে থেকে কিছু খাবার নিয়ে উনি আমাদের জন্য বিমানবন্দরের গেটে অপেক্ষা করছিলেন। গার্ডরা তাকেও সেখানে দাঁড়াতে দেইনি তাই বাধ্য হয়ে দাদা অন্যখানে গিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা দিবাকর দাদার সাথে দেখা না করেই গার্ডদের তাড়াহুড়োর ঠ্যালায় ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

দিবাকর দাদা, উজ্জ্বল দাদা আমারা সবাই সমবয়সী এবং একে অপরের ব্যাচমেট। উজ্জ্বল দাদা ব্যাংকে এবং দিবাকর দাদা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছে। দিবাকর দাদার সাথে আগে থেকেই আমাদের খুব ভালো চেনাজানা। দাদা আমাদের ঢাকার বাসায় গিয়েছিল। তাছাড়া যেবার চীন থেকে দেশে গিয়েছিলাম সেবার হীরা এবং অন্তু গ্রাম থেকে আমাকে রিসিভ করতে ঢাকা এসেছিল। দিবাকর দাদা নিজে দায়িত্বে গিয়ে ওদের আমার অফিসের গেস্ট হাউজে পৌঁছে রাতের খাবার সহ অন্তুর জন্য খেলনা কিনে দিয়ে এসেছিল। অন্তুও সেজন্য দিবাকর মামাবাবুকে খুব ভালো করে জানে। কেননা দিবাকর দাদাও আমাদের কাছে উজ্জ্বল দাদার থেকে কোন অংশে কম নয়। আমাদেরকে নিজে বোন-বোনজামাইয়ের মতই দেখভাল করে। সেজন্য যাওয়ার মুহূর্তে দাদার সাথে দেখা না হওয়ায় আমাদের সবারই একটু মন খারাপ লাগছিল। অন্তুও বারবার দিবাকর মামাবাবুর সাথে দেখা করতে চাচ্ছিল। মনে মনে অনেক রাগ হচ্ছিল বিমান বন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে। বিদেশ যাওয়ার আগে সবারই তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করবে, কুশল বিনিময় করবে সেটায় স্বাভাবিক। তার জন্য দেশের রাজধানীতে অবস্থিত সর্বাপেক্ষা বড় বিমান বন্দরে তেমন সুবিধা থাকাটা বাঞ্ছনীয় বলে আমার মনে হয়। আমি অনেক বিমান বন্দরে দেখেছি বোর্ডিং পাশ নিয়ে শুধুমাত্র ইমিগ্রেশানে ঢোকার আগ মুহূর্তে প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে হয়। বাকী সবখানে প্রিয়জনদের সাথে যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলা বা সাক্ষাত করার সুযোগ থাকে। আবার দেখলাম অনেকেই গার্ডদের মাথাপিছু বেশ কিছু টাকা দিয়ে ব্যবস্থা করে পুরো দলবল সহ ঢুকে পড়ছে ভিতরে। এসব দেখে একটু খারাপই লাগছিল। মনে মনে ভাবতে থাকলাম হয়ত সবই আমাদের দুর্ভাগ্য। আমাদের এই পরিস্থিতির জন্য আমরা জনগনই হয়ত দায়ী। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত কোনদিন আমরা এক জায়গায় দুই নিয়ম থেকে শুধরাবো। (চলবে)

লেখকঃ অজয় কান্তি মন্ডল,

গবেষক,

ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি,

ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ