HEADLINE
সাতক্ষীরায় অভিনব কায়দায় মাদক পাচার, আটক ২ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দাতা চাঁদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আদালতে মামলা ঝাউডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ৪ তলা ভবন উদ্বোধন বর্তমান বিশ্বে মানবধিকার বিপর্যয়ের মুখে প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি-অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্তaবিভাগীয় কমিশনার খুলনা সাতক্ষীরায় ১১টি ভারতীয় ইয়ারগানসহ ১ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে শিক্ষক আটক চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য এখন সাতক্ষীরা সীমান্তের রেউই এলাকা! ভূমি সেবা সপ্তাহে দু’দিনেই নিষ্পত্তি হবে ই-নামজারি কেস সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরিক্ষার্থী দুই বন্ধুর মৃ*ত্যু
রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৭:০২ অপরাহ্ন

শিশুদের প্রতি অমানবিক না হয়ে আমরা যত্নবান হই

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ৯৭৮
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১

আজকের শিশুরা আগামী দিনের সম্পদ। শিশুরাই আগামী দিনে পরিবারের অভিভাবক ও কর্তা। কিন্তু জীবনের শুরুতেই যদি তাদের উপর অযাচিত কষ্ট, শ্রম বা নির্যাতন নেমে আসে তাহলে অদুর ভবিষ্যতে তারা আর অগ্রসর হতে পারবে না। একশ্রেনীর ধনীক স্বার্থপর মানুষ তাদের উপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের ইচ্ছা শক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শ্রম বৃত্তিতে নিয়োগ করে জীবনের শুরুতেই তাদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। তাই ব্যাথাতুর হৃদয়ে সুকান্তকে বলতে হয়েছিল-‘সবচেয়ে খেতে ভাল মানুষের রক্ত’ আজকের এই মানুষ লোভী পশুদের মতোই শিশুদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সমাজের আলোর পরিবর্তে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং অর্থ লালসার রাজ্যে মানুসের হাত থেকে শিশুদের ও নিস্তার নেই। শিশুদের বিভিন্ন দোকান পাটে, শিল্প কল কারখানায় এমনকি গৃহস্থলীর বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ করে এক শ্রেনীর স্বার্থান্ধ মানুষ যথেষ্ঠ মুনাফা অর্জন করে চলেছে। তাই ক্রিশ্চিনা রসেটি শিশুদের দুঃখ এবং কষ্টের করুন কাহিনী এবং আর্তি ব্যবÍ করেছেন তার লেখা শিশুদের নিয়ে একটি গল্পে-‘ক্রাই অফ দ্যা চিলড্রেন।’ অতি প্রাচীন কাল থেকেই শিশুদের শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ চলছে। তখনকার মানুষ ছির বর্বর, বেশী লেখা পড়া জানতো না। অত্যাধুনিক জগত ছিলনা। পৃথিবীটা তখন সত্যতার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। সংস্কৃতি বলতে এক প্রকার কিছুই ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে তো সারা পৃথিবী সভ্যতার আলোকে আলোকিত। যেখানে বিবেক শক্তি ও স্বাধীনতা বোধের বড়াই করে মানুষ সেখানে ও কেন থাকবে মানবাত্মার অপমান ও নির্লজ্জতার এই উদাহরণ। সারাদিন পরিশ্রম করে ঐ শিশুটি যা আয় করে তাতে তার নিজের আহারের ও সংস্থান হয় না। শিশু শ্রমিক বলে তাদের দেওয়া হয় না নির্দিষ্ট মজুরী অথচ তাদের উপর চলে নির্মম, নিষ্ঠুর দয়া মায়াহীন অকত্য নিপীড়ন ও নির্যাতন। সামান্যতম কাজে দেরী হলে বা অনিয়ম হলে তাদেরকে লাথি ও লাঠির আঘাত সহ্য করতে হয়। শিশু শ্রমিকদের চোখের জলের হিসাব হয়তো পৃথিবীর সভ্য সমাজে রাখার সময় নেই। এ হাজার হাজার শিশুর কান্না ও তাদের লবনাক্ত অশ্রæ আজকের পৃথিবীকে যে ভাবিয়ে তুলেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে ও অসংখ্য দশ বছরের নীচে বাচ্চাদের (নারী ও পুরুষ উভয় শিশু) কেও বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ করা হয়। বিশেষ করে বড় বড় শহর গুলোতে, গৃহস্থলীর কর্মকান্ডে শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক চাপে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে বেশ সংখ্যক শিশু শ্রমিককে হোটেল রেস্তোরার বয় হিসাবে কাজ করতে হয়। কৃষি জমিতে কাজ ছাড়াও এদের দিয়ে আতশ বাজী, দিয়াশলাই কারখানা কিংবা কাঁচ ও পুঁতির কারখানায় কাজ করানো হয়। এমনকি সমুদ্র বন্দর গুলোতে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে অনেকটা জোর করে মাফিয়া চক্রে লিপ্ত করানো হয়। এছাড়াও এদের চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং ভিক্ষাবৃত্তি প্রভৃতি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর স্বার্থন্বেষী মহল যারা সমাজ বিরোধী বিভিন্ন কর্মে কান্ডে লিপ্ত তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। তাদের স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য প্রচুর সংখ্যক শিশু অপহরণ করে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। আমাদের দেশে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা এখনও প্রায় অর্ধেক। ক্ষুধা বা দারিদ্রতার যন্ত্রনায় তাদের নিজেদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চাদের শ্রমিকের বৃত্তি নিতে বাধ্য করে। এ ছাড়া জন সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সম আর্থিক বন্টনের প্রতিক্রিয়ার ফলে শিশু শ্রমিকের সমস্যা জটিল আকার ধারন করেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, উদ্বাস্তু জীবনের ছিন্নমুলতা, উচ্ছৃংখল পিতা মাতার নৃশংস আচরন প্রভৃতি ও এ সমস্যার জন্য অনেক অংশে দায়ী। পরিবারের আয়তন ও অনেকটা দায়ী এ সমস্যার জন্য। এক একটি পরিবারে যেখানে অনেকগুলি সন্তান সেখানে পরিবারের ভরন পোষনের জন্য শিশুদের রোজগারে যুক্ত না হলে চলেনা। ফলে সমস্যা ক্রমাগত বেড়েই যায় একথা ঠিক। বাংলাদেশে নারী নির্যাতন আইন যেমন বলবৎ তেমনি শিশু নির্যাতন আইন ১৯৯৫ ও তেমনি বলবৎ। কিন্তু কোন নির্যাতনের সঠিক বিচার আজ পর্যন্ত নির্যাতিত পরিবার পায়নি বা এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। আজকে আমরা যাই বলি না কেন, আইন দিয়ে সব সমস্যার বাস্তব সমাধান সম্ভব হয় না। এজন্য প্রয়োজন প্রত্যেকটা শিশু ও নারীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের বাধ্যতামূলক যেমন প্রাথমিক শিক্ষা ঠিক তেমনি যদি নারীদের উপর ও শিক্ষা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা যেত হয়তবা সমাধানের অনেক পথ পাওয়া যেত। এজন্য উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং দারিদ্য বিমোচন ছাড়া সমস্যার সমাধান একেবারে অসম্ভব। শিশু শ্রমিকের শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান এর ব্যবস্থা যেমন সরকারকে নিতে হবে ঠিক তেমনি এ ব্যাপারে সমাজ কল্যান মূলক সংস্থাসমূহকে অগ্রনী ভূমিকা পারন করতেহবে। তখনই শিশুদরে উপর থেকে নিপীড়ন নির্যাতন অনেকটা হ্রাস পাবে এবং শিশুরা কিছুটা শিক্ষার আলোই আলোকিত হতে পারবে এবং অদুর ভবিষ্যতে তারা তাদের নিজেদেরকে গড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে। অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন শিশু শ্রমিক প্রধানত আমাদের জাতির জন্য একটি অভিশাপ। শিশু শ্রমের মূল কারন দারিদ্র্য। দেশের একাংশের অপরিসীম দারিদ্র্যই এ সমস্যার জন্য দায়ী। শিশু শ্রমিক প্রথা রোধ করার জন্য আরও নতুন নতুন আইন প্রনয়নের কথা সরকারকে ভাবা উচিত। এমন আইন প্রনয়ন করা উচিত যে, আইনের কারনে আর কখনও সমাজ বিরোধী মানুষ গুলি শিশুদেরকে নির্যাতন করতে সাহস পাবে না। নারীদের এবং শিশুদের অধিকারের প্রতি আর কেহ কোন বাধা প্রদান করতে সাহস পাবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের চাইতে শহরগুলোতে বিত্তবানদের দাপট সব সময় বেশী এবং তাদের গৃহেই শিশু নির্যাতিত হচ্ছে বেশী। এ সকল পরিবারের বা গৃহে কাজের মেয়ে হিসাবে কাজ করে যারা তাদের সামান্য অপরাধের জন্য পশু আত্মা গৃহিনী বা গৃহস্বামী অমানবিক শাস্তি দিয়ে থাকে, এটা অত্যন্ত করুন আর্তনাদ যেটা সমাজের কেহ মেনে নিতে পারেনা কারন কারোর না কারোর সন্তান তারা কোন ভাবেই এ নির্মম নির্যাতন মেনে নেওয়া সম্ভব হয় না। প্রায়ই প্রতিদিন এ ধরনের নৃশংস ঘটনা আমরা টেলিভিশনের পর্দায় বা বিভিন্ন খবরের কাগজে পড়ে থাকি বা দেখি। শিশু শ্রমিকদের প্রতি বিত্তশালী গৃহিনীদের অমানবিক ব্যবহারের কাহিনী পড়ে দেহ ও মন শিহরিত ও প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এরা সহায় সম্বলহীন কাজের ছেলে মেয়েদের মানুষের সন্তান বলে মনে করে না। এ সমস্ত অসভ্য জ্ঞান পাপী নিষ্ঠুর গৃহিনীর হাত থেকে সহায়হীন শিশু শ্রমিকদের রক্ষা করা এ মুহুর্তে সকলের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিল্প, কল কারখানায় ও গার্মেন্টস এ যে সমস্ত শিশুরা আছে এ মুহুর্তে তাদেরকে ও রক্ষা করা উচিত। নাহলে একদিন বিশ্ব মানবতা ভূলন্ঠিত হয়ে পড়বে। ১৯৮৯ সালের আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষের প্রতিশ্রুতি স্বত্বেও শিশুশ্রম সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। মানবতার নিদারুন সংকটের দিন ঘনিয়ে আসবে সেদিন যেদিন পৃথিবীর আলোয় শিশু মনের ও স্থান হবে না। পৃথিবীকে বধ্যভূমিতে পরিনত করার এ মনোভাবকে পরিবর্তিত করতেই হবে যে কোন মূল্যের বিনিময়ে। তবে আশার কথা, বানীর কথা, সরকারের ঘোষনা, “শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য” কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যেই অনেক হত দরিদ্র্য পিতা মাতা তাদের সন্তানদের শিশুকর্মস্থলের পরিবর্তে বিদ্যালয়ে পাঠাতে শুরু করেছেন। আসুন, আজ আমরা সবাই মিলে আমাদের শিশুদের যারা ভবিষ্যতের কর্ণধার, একদিন যারা দেশ গড়বে, দেশের নেতৃত্ব দিবে, তাদের প্রতি অমানবিক না হয়ে যত্নবান হই। দেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে কোন সন্দেহ নেই তাতে।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ