HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন

মাটি এবং মাতৃভাষাকে ভালবাসো মায়ের মত

জহিরুল ইসলাম শাহিন / ৭২৪
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মা মাটি মানুষ এবং আমাদের ভাষা একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে সম্পর্কযুক্ত। একটা কে বাদ দিলে আরেকটি একেবারে অসম্ভব। একজন শিশু মায়ের কোলেই এবং মায়ের কারনেই সুশীতল পৃথিবীর সুন্দর মুখখানি দেখতে পায়। শিশু জন্ম গ্রহনের পর বিশাল পৃথিবীর বিস্তৃত সুন্দর নীল আকাশের নীচে দূর্বল ও অসহায়ত্ব বোধ করে। তাই মায়ের আদর, যত্ন ও ভালোবাসার উপর ভর করে। শিশুর ক্ষুধা নিবারন করার জন্য ও শান্ত থাকার জন্য, একজন মা-ই গরম কাপড় জড়িয়ে রাখেন যখন তার শিশু সন্তানটি পৌষ ও মাঘ মাসের কনকনে শীতে কাপতে থাকে। শিশু সব সময় মায়ের কোলে জড়িয়ে থাকতে চায়। এইভাবে একজন অবুঝ শিশু জীবনে প্রথমে মাকে চিনতে শেখে। এক সময়ে শিশু ‘মা’ উচ্চারন করে। এইভাবে শিশু সর্ব প্রথমে যে ভাষা টি শেখে সেটাই ‘মা’ এবং এই টাই তার মাতৃভাষা বা সর্ব প্রথম ভাষা আয়ত্ত করে। ধীরে ধীরে ধরনীর আলো বাতাস তাপ গ্রহন করে একজন শিশু বড় হতে থাকে। চার দিকের নীল আকাশ, শস্য, শ্যামল, শ্যামলিমা, বন, বনানী, সবুজ মাঠ, সবুজের সমারোহ, ফসলের মাঠ এবং সামগ্রিক সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করে। তখন শিশু তার চার পাশের প্রকৃতিকে মায়ের মত ভাল বাসতে শুরু করে। যেহেতু জন্মের পরপরই সে এই মাটিকেই সর্ব প্রথম চিনতে পারে বা এই মাটিতেই লালিত পালিত হতে থাকে তাই এই মাটি ঐ শিশুটার কাছে মায়ের মত প্রিয় এবং মায়ের মতই সে মাটিকে ভালবাসে। একজন মা সন্তানের কাছে বিপদের বন্ধু, দু:খের আশ্রয়স্থল, অত্যন্ত ভালবাসার শ্রদ্ধার পাত্র, এক কথায় পুজনীয়। তাই মা ও মাতৃভাষার সাথে নাড়ির টান ও গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হবার পর থেকেই মানুষ মায়ের কাছেই মাতৃভাষা শেখা শুরু করে। জন্ম থেকে যে ভাষা উচ্চারন করে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করে তাই মাতৃভাষা। মনের ভাব সাধারনত মনের অজান্তে অবচেতন মনে স্বাভাবিক ভাবেই মাতৃ ভাষার বা প্রাকৃতিক ভাষার মাধ্যমে যেমন সাচ্ছন্দে, অবলীলায় বা স্বত:স্ফুর্তভাবে প্রকাশ করা সম্ভব, অন্য ভাষার মাধ্যমে তেমন সম্ভব হয়ে উঠে না। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের কাছে তার নিজস্ব ভাষা অত্যন্ত গৌরবের, শ্রদ্ধার এবং সম্মানের বস্তু। ভাষা যতই আঞ্চলিক বা গ্রামিন হোক না কেন তা তার নিজের কাছে অহংকার। সুতরাং মায়ের কাছে শেখা ভাষা সকল দিক দিয়েই অন্যন্য ভাষা অপেক্ষা সুন্দরতর ও মধূরতর। অতি শিশু কাল থেকেই মাতৃক্রোড়ে যে ভাষায় সর্বপ্রথম একটা শিশু কথা বলে সে ভাষার সাথে মায়ের মতোই আত্মার সর্বপ্রথম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাতৃভাষা মাতৃস্তনের ন্যায় কথাটি আমাদের নয়, কথাটি ভাষাবিদ, ভাষার পন্ডিত ডা: মুহম্মদ শহীদুল্লাহর, জননীর বা মায়ের স্তন্য দুগ্ধের মাতৃভাষার ভাব দোহন করে মানুষ মানষিক পুষ্ঠি লাভ করে। আজীবন যে ভাষার মধ্য দিয়ে শিশু পিতা মাতার সাথে এবং আত্মীয় স্বজন ও পরিবার বর্গের হৃদয় বৃত্তির সান্নিধ্য ও অভিব্যাক্তি উপলব্ধি করে, সেই ভাষা তার অস্থিমজ্জার সাথে মিশে থাকে। মাতৃভাষার মাধ্যমেই আমাদের কৃষ্টিকে, সমাজকে, আমাদের সংস্কৃতিকে, আমাদের পরিবেশকে, আমাদের নিজেদের জীবনকে এবং নিজস্ব সত্ত¡া ও চিন্তা ধারা ও ভাবনাকে সম্প্রসারিত করতে পারি। হৃদয়ের সবচেয়ে গভীরতম জায়গায় শতমুখি ভাবধারাকে আমরা সুন্দর করতে পারি। প্রস্ফুটিত করতে পারি একমাত্র আমাদের মাতৃভাষার প্রয়োগ ও ব্যবহারের মাধ্যমেই বা সহযোগিতায়। মা কে আমরা যে ভাবে ভালবাসি, মাতৃভূমি কে ও আমরা সেইভাবেই ভাল বাসী। বিশিষ্ট কবিরা, সাহিত্যিকরা তাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বার্গের সাথে তুলনা করেছেন, তুলনা করাও স্বাভাবিক- কারন জন্মইতো এই প্রিয় পবিত্র মাতৃভূমির উপর, তাই স্বর্ণের চেয়েও খাটি, খাটি ও পবিত্র বিশুদ্ধ রক্ত দিয়ে তৈরী প্রিয় মাতৃভূমি। তাই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মাতৃভূমিকেই স্বর্গের মাহিমায় দিগান্বিত করে নিজেরা মহিমান্বিত হয়েছেন। মাতৃভূমিকে করেছেন সম্মানিত, পৃথিবীর মানচিত্রে নিজেদের মাতৃভূমিকে করেছেন গৌরবান্বিত। কবিরা, সাহিত্যিকরা এবং বিশিষ্টজনেরা তাদের মাতৃভূমির ভাবনা তাদের কথায়, তাদের ভাষায়, তাদের উচ্চারনে, তাদের লেখায়, তাদের ব্যবহারে বাঙময় করেছেন। কখন ও কখন ও তাদের কাছে মাতৃভূমিই তাদের কাছে প্রেরনার উৎস বা প্রেরনা হিসাবে কাজ করেছে। কবির ভাষায় জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপী গরিয়মী। মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর মাতৃদুগ্ধ পান করে যেমন দিনে দিনে বেড়ে ওঠে তেমনি পৃথিবীর আলো বাতাস, শীত তাপের সংস্পর্শে লালিত হয়। তাইতো এই পবিত্র মাতৃভূমিকে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে মায়ের মতোই ভক্তি,শ্রদ্ধা পূজনীয় করি। আমাদের অন্তরের অস্ত:স্থালে আশ্রয় দেই। মাতৃভাষার প্রতি হৃদয়ের গভীরটান থেকে মাতৃভূমির প্রতি মমত্ববোধ জেগে ওঠে। তাই ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে রক্তে ¯œাত ঢাকা শহরের রাজ পথ রঞ্জিত করে সাহসী বীরেরা কায়েদা আযম মোহাম্মদ জিন্নাহর স্বপ্ত ভঙ্গ করে পাকিস্তানী জাতীয় ভাষা উর্দুকে পদদলিত করে মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এর প্রমান ঘটিয়েছে। ভাষার প্রতি গভীর ভালবাসার কারনেই সেদিন বাঙ্গালী জাতি পাকিস্তানি হায়নাদের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে বুকের তাজা পবিত্র রক্ত ঢেলে দিয়ে ছিল। সেই দিন পূর্ব বাংলার দু:সাহসিক অগ্রযাত্রার সামিল দামাল ছেলেরা ইস্পাত কঠিন দৃঢ় প্রত্যায় নিয়ে বাংলার উদ্ধাত উচ্চারন, সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিক এর এবং আরও অসংখ্যা ছাত্র নেতাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙ্গালি জাতির বাংলা জাতীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল, গড়ে ওঠে ভাষা ভিত্তিক বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ। এ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেয়। সাহসী বাঙ্গালির যোদ্ধারা যারা আজ অমর, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, শম্য শামলা সুন্দর বন বনানী থাকবে, সুন্দর নীল আকাশ থাকবে, পশ্চিমা আকাশে সূর্য ডুবতে থাকবে, পূর্ব আকশে সুন্দর সকালে সূর্য উকি দিয়ে বাংলাদেশ কে ঝলমল করবে, যতদিন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা থাকবে, ততদিন আমাদের স্মৃতিতে অ¤øান থাকবে তারা। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তি পায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এভাবে মাতৃ ভাষাকে গভীরভাবে ভালবাসার ফলে মাতৃভূমির প্রতি মমত্ববোধ জেগে ওঠে। মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই ভাষার উপর যাতে বিদেশী ভাষা ভর করতে না পারে, কোন রকম প্রভাব বিস্তার না করতে পারে তার জন্য অফিস, আদালতে, প্রশাসনে, বেসরকারী দেশী-বিদেশী সংস্থায় মাতৃভাষার ব্যবহার ও প্রয়োগ বাধ্যতা মূলক করা দরকার। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হলে তা সহজেই মানুষের হৃদয় জুড়ে থাকতে পারে। সকল শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা ও তাদের শিক্ষনীয় বিষয়ের আনন্দ খুজে পাইতে পারে। মাতৃভাষার মাধ্যমে গাঁথুনিই খুব মজবুত করে দিতে পারলে যে কোন ভাষার শিক্ষার্থীরা অতি অনুশীলন বা সাধনা করেও যে ক্ষেত্রে ভাষার পুরোপুরি জ্ঞান লাভ করা যায় না, সে ক্ষেত্রে মাতৃভাষার প্রতি সামান্য আকর্ষন বা স্পৃহা থাকলে সেটা সহজেই হৃদয়ঙ্গম করা যায়। দেশ জোড়া শিক্ষাহীন তার গাঢ় অন্ধকার বিদুরিত করার একমাত্র উপায় শিক্ষাকে সহজ লভ্য করা এবং সহজ সরল এক পদ্ধতির ভিতরে প্রয়োগ করা, সাধারন জনগনের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হলে শিক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের পবিত্র ভাষা, প্রাকৃতিক ভাষা, জাতীয় ভাষা, মায়ের ভাষা হতে হবে। মাতৃভাষার ভিতর দিয়ে শিক্ষা লাভ, জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান বাসনা, ও চিন্তার আদর্শ আদান প্রদানের কতকগুলো সাধারন সুবিধা ব্যতীত একটি কথা বিবেচনা করা প্রায়োজন প্রত্যেক দেশে সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি বিশেষ রুপ, দেশের গুনিজ্ঞানী ব্যক্তি বর্গের ও মনীষীদের চিন্তা ধারার বিশেষ প্রকাশ মাতৃভাষার ভেতর দিয়েই সর্বোৎকৃষ্ট ভাবে হতে পারে। সেজন্য মাতৃভাষার ভিতর দিয়ে যদি দেশের মহাজ্ঞানীরা তাদের চিন্তার ফসল গ্রন্থাগারে সঞ্চয় করেন, তবে তা সহজে ও স্বাভাবিক ভাবে দেশের বিদ্যার্থীদের বা শিক্ষার্থীদের অন্তর স্পর্শ করতে পারে। জন্মদাত্রী জননী আমাদের কাছে যত প্রিয়, ভালবাসার, যত আপন, জননীকে আমরা যত ভালবাসি, যেভাবে ভালবাসি, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা ও আমাদের কাছে ততটা ভালবাসার দাবী রাখে। মাতৃভাষার মাধ্যমে বা মাতৃভাষাকে আশ্রয় করেই একটা জাতি লালিত পালিত হয় এবং বিকশিত হয়। আর এর অনুপ্রেরনা যোগায় তার মাতৃভূমি। সুতরাং আমাদের উচিত মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষাকে মায়ের মতোই ভালবাসা।

লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ