HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

বর্তমান বিশ্বে মানবধিকার বিপর্যয়ের মুখে

জহিরুল ইসলাম শাহীন / ৩৭৩
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩

জহিরুল ইসলাম শাহীন: নূন্যতম মৌলিক অধিকারগুলোর সমন্বয়ে সুন্দর সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার যে অধিকার সংক্ষেপে মানবধিকার বলতে আমরা এটাই বুঝি, কিন্তু এই মানব অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা যারা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, গনচিন, ভারত ইত্যাদি, তারাই আজকের মানবধিকার ভূলুন্ঠিত করেছে। আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে-বøাক পিপল অর্থাৎ কৃষ্ণ বর্ণের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হয় না। যেখানে সেখানে এখনও গুলি করে মেরে ফেলে। অথচ আব্রাহাম লিংকন, কেনেডি-এফ, মার্টিন গুনিয়র লুথার কিংস, জিমি কার্টার ইত্যাদি সাবেক নেতারা যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর মডেল হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন কিছুটা সফল ও হয়েছিলেন। কাধে কাধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে, কে কালো, কে সাদা, কে গরীব, কে ধনী, কে শিক্ষিত, কে অশিক্ষিত কারোর ভেতরে কোন ভেদাভেদ থাকবে না, যুক্তরাষ্ট্রকে গড়তে হবে। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান সময়ে আবার মানবধিকার একেবারে ভূলুন্ঠিত হয়েছে এবং শুরু করেছিল ডোনাল্ডট্রাম প্রশাসন। সেখান থেকে এখনো কেটে উঠতে পারছে না, গন চীনে সংখ্যা লঘু যারা তাদেরকে নানা ভাবে হত্যা-নির্যাতন করা হচ্ছে এবং ভয়ও দেখানো হচ্ছে যাতে তারা দেশ ছেড়ে অনত্র কোথাও চলে যায়। তাদের যথাযথ ভাবে খাবার পর্যন্তও পৌছে দেওয়া হচ্ছে না। মিয়ানমারেও একই ঘটনা। সেখানে সামরিক জান্তা সরকার নির্বিচারে সাধারন জনগনের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। বিশেষ করে আরাকান এবং রাখাইন রাজ্যে মুসলমান ও হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে সেটা নজির বিহীন। ভারতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিজেপি ক্ষমতা গ্রহন করার পর থেকে আর, এস কর্তৃক যে নীপিড়ন নির্যাতন সংখ্যা লঘুদের ওপর চালিয়েছে এমনকি আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববতী ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিম বঙ্গ, বিহার এবং মেঘালয়তেও বিজেপি সংখ্যা লঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু মানবতার জননী এবং জনগনের সেবক পশ্চিম বঙ্গের সরকার প্রধানের নেতৃত্বে কিছুটা ইতিবাচক পরিবেশ ফিরে এসেছে। রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের উপর দীর্ঘ একবছর ধরে প্রতিদিন সাধারন জনগনের ওপর যে হামলা চালাচ্ছে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। ইউক্রেনের জনগন সব সময় একটা ভয় ও উৎকষ্ঠার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। প্রতিনিয়ত সংবাদ পত্র পড়লে এবং টিভির পর্দায় সংবাদ দেখলে বোঝা যায় ইসরাইল কতৃপক্ষ ফিলিস্তানিদের এবং সিরীয়াদের ওপর কিভাবে গোলা বর্ষন করছে সুতরাং মুখে মানবতার কথা বলবো, সাধারন জনগনের অধিকারের কথা ভাববো, তাদের সুন্দর ভাবে বেচে থাকার কথা বলবো, জীবনের নিশ্চয়তার কথা বলবো, এ গুলো বলে বা করে কোন লাভ নেই। মানবতার সংগা আমার দৃষ্টিতে এখন “জোর যার মুল্লক তার” অন্যদিকে আমাদের দেশের মত ঘন বসতির জনসংখ্যা, দরিদ্র জনগনের বসবাস সেখানে মানবতার কথা ভাবা যায় না তবুও কিছুটা তো মানবতা আছে, কিছু বিচার তো হয়। ছোট ছোট ঘন জনবসতি দেশে মানবতা রক্ষা করা অনেক টা কঠিন হয়ে পড়ে যেখানে বিশে^র অনেক শান্তিপ্রিয় দেশ ও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। তুলনা মূলক ভাবে আমরা ভালো আছি আমরা এখনও সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করতে পারছি। মানুষ সাধানরত স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে সাবলীল ভাবে নিজ জীবন কে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে পারে এটাই স্বাভাবিক এটাই তার অধিকার। কিন্তু এক কথায় বলা যায় যে আমাদের এ জগতে দেশে দেশে ও সময়ের বিবর্তনে মানুষের যে মৌলিক ও সর্বজনীন অধিকার স্বীকৃতি পেয়ে আসছে তাই মানবধিকার। বিশেষ করে একটি দেশে বিভিন্ন শ্রেনীর, বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন স্বভাবের, বিভিন্ন প্রকৃতির, বিভিন্ন চরিত্রের বিভিন্ন ধর্মের বা গোত্রের লোক বসবাস করতে পারে বা থাকে উচুনিচু ছোট বড় যাই হোক না কেন, যে গোষ্ঠীর যে সম্প্রদায়ের যে জাতের হোক না কেন সব মানুষের দেশের প্রতি একটা অধিকার থাকে, কারন, সে ঐ দেশের নাগরিক। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে মানুষের মধ্যে হানা হানি মারা মারি হয়ে আসছে। এমন কি হয়রত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমাদের শেষ নবী সর্বশ্রেষ্ঠ মহা-মানব হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত। জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, ধনীতে ধনীতে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে আধিপত্য বিস্তারের জন্য পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত দাঙ্গা, ফ্যাসাদ সংঘাত একে বারে কম হয় নাই। ফল শ্রæতিতে বিশে^ এ পর্যন্ত দুই টি বিশ^ যুদ্ধ, ¯œায়ু যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক দ্বন্দে অনেক লোক অকাতরে প্রান বিসর্জন দিয়েছে। মানুষ যখন বুঝতে পারছে তখন অধিকার লংঘনের হাত থেকে পৃথিবীকে সুন্দর করার লক্ষ্যে মানুষ মানুষে শান্তি মৈত্রী ও ¯েœহভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে হবে এবং সর্বোপরি সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আমরা কি দেখতে পাই, সময়ের ¯্রােতের সংঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ এক দুর্বিসহ যন্ত্রনার দিকে ছুটছে। সময়ের চাকার তালে তালে মানুষ আজ সভ্য, বিজ্ঞান ও দর্শনের যুগে বাস করছে। বর্তমান যুগে মানুষ তার সঠিক যথার্থ অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং বুঝতে পারে। মানবধিকার এমন কোন গুপ্ত ধন সম্পদ নয় বা ঘটনা নয় যে সব দেশেরই সাংবিধানিক দিক থেকে মানবধিকার আইনের আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় দুই হাজার বছর আগে ব্যবিলনের রাজা হাম্মুরবির নিয়মা বলিতে প্রথম মানবধিকার সংক্রান্ত ধারনার পরিচয় পাওয়া যায়। খ্রিষ্ট্রীয় ৭ম শতকে ও মদিনায় হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) কর্তৃক প্রনীত মদিনা সনদে মদিনায় বসবাসকারী সব ধর্ম ভিত্তিক লোকদের সমান অধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ১২১৫ সালের ইংল্যান্ডে প্রনী জ্যাগনাকার্টাকে মানবধিকারের প্রথম চার্টার বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে যদিও পরবর্তীতে ১৭৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের মানবধিকার সনদ এবং ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের বানি আজও পৃথিবীর মাঝে মানবধিকার আন্দোলনের মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমরা যদি বিবেচনা করে দেখি, দেখবো, সেই প্রচীন মানবের সূচনা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে মানবিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে আসছে। এসব বিপর্যায়ের কথা আমরা কলি, মার্কস জনলক, রুশো প্রমুখ মনীষীদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। মানবধিকার শুধু আমেরিকার জন্য নয়, রাশিয়ার জন্য নয়, চীনের জন্য নয়, মদিনার জন্য নয়, ইংল্যান্ডের জন্য নয়, ফ্রার্ন্সের জন্য নয়, ব্যবিলনের জন্য নয় সমগ্র বিশে^র সকল শ্রেনীর জনগনের জন্য। কিন্তু কিছু স্বার্থন্বেষী কুচক্রী লোক তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী জার্মানী ও ইতালি জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সমাজে এক অস্থিরতা সৃষ্টি করে এই দুই দেশের নৃশংসতা ও বর্বরতার বন্দী শিবিরে লাখ লাখ ইহুুদী হত্যা করে , ফলে সারা বিশে^ মানবধিকার ব্যাপকহারে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এ নৃশংস ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে বিশে^র বিবেকবান ব্যক্তিরা মানবধিকার রক্ষার্থে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের মত বিপর্যয় এড়াতে সান ফ্রানসিসকোতে (যুক্তরাষ্ট্রে) জাতি সংঘ সৃষ্টি হয়। এবং এ জন্য তারা একটি সনদ প্রকাশ করে এবং এ সনদই হলো সর্বপ্রথম আন্তজার্তিক ভাবে স্বীকৃত ও গৃহীত বিশেষ দলিল বা সনদ। যে দলিলের মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীতে মানুষ আগে, মানবতা আগে, রক্ষা করতে হবে মানুষকে, তার পর রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে এমন ভাবে যেন কোন দেশ কোন জাতি কোন গোত্র কোন শ্রেনী কোন ধর্ম কোন সংস্কৃতি এবং মানবতা ধংস না হয়, ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মানুষের অধিকার আদায় ও অধিকার বিপর্যয়ের হাত থেকে তাদের কে মুক্ত করতে হবে। তাদের দিতে হবে সাম্য, সমান অধিকার এবং স্বাধীনতা। তবে ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিস শহরে জাতি সংঘের সর্বোজনীন মানবধিকারের ঘোষনা গৃহীত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানিক দিক দিয়ে মর্যাদা লাভ করে। মানবধিকারের ৩০ টি ধারা সম্বলিত স্বীকৃতি পত্রে ১৯ টি ধারা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে এবং ছয়টি ধারা মানুষের সামাজিক আর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে সুতরাং বিশে^র কোন শ্রেনীর মানুষ ঘৃনিত হবে না, অবহেলিত হবে না, উপেক্ষিত হবে না, প্রত্যেকের তার নায্য দাবি পূরন করতে দিতে হবে। এখনও যে রুশ প্রশাসন শুরুতেই মানবধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সোচ্চার হয়েছিলেন, সেই যুক্তরাষ্ট্রে রুশ প্রশাসন আশির দশকে ইরাক, কুয়েত সংঘর্ষ মানবধিকার লংঘন করেছে এবং তার ধারাবাহিকতা সমগ্র পৃথিবীতে এখনও রাজনৈতিক ভাবে, শ্রেনী ভেদে, ধর্ম ভেদে এবং দেশে দেশে লক্ষ্যনীয়। তাই আবার সময় এসেছে মানবতা, মানবধিকার নিশ্চয়নের জন্য এবং বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর “অন্যের ধর্ম অন্যের থাক, অন্যের সংস্কৃতি অন্যের থাক, অন্যের অধিকার অন্যের থাক, আমর অধিকার আমার থাক, আমার অধিকার আমি” এ মুলমন্ত্রে সবাইকে এগিয়ে চললে বিশ^ জগতে শান্তির চেতন পৎ পৎ করে উড়তে থাকবে নিশ্চিন্তে বলা যায়। দেশে দেশে কত যুদ্ধ, কত সংঘাত, কত প্রতিহিংসা, এ তো মানবধিকার লংঘনের এক জঘন্যতম অপরাধ। দুুর হোক, নিপাত যাক, নিশ্চিহ্ন হোক মানবধিকার লংঘন।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহীন
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ