HEADLINE
সাতক্ষীরার পর এবার মাগুরার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ! কলারোয়ায় এক কৃষকের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধা’র কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষা’ঙ্গ কে’টে দ্বিতীয় স্ত্রী’র আ’ত্ম’হ’ত্যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ৫ দিন পর ভোমরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু দেবহাটায় পাল্টাপাল্টি মারপিটে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত ৫ সাতক্ষীরা সীমান্তে নয়টি স্বর্ণের বার’সহ চোরাকারবারি আটক সাতক্ষীরায় চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট আশাশুনির কোপাত বাহিনীর প্রধান কারাগারে
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৯ অপরাহ্ন

ঘুষ ছাড়া নড়েন না ভূমি কর্মকর্তা আনিছুর: জিম্মি তালা সদরের জনগণ

স্টাফ রিপোর্টার / ৪৭০
প্রকাশের সময় : রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২২


সাতক্ষীরার তালা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্ণীতি ও অনিয়মের আখড়াখানায় পরিনত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে ভূমি কর্মকর্তা আনিছুরের কাছে। জমির কাগজপত্রের প্রয়োজনে মানুষের যাতায়াত এখানে। সেখানে গেলেই শুরু হয় হয়রানি আর ভোগান্তি তবে টাকা দিলেই মেলে প্রশান্তি আর  সাথে সাথে হয়ে যায় সমাধান। জমির নামজারির সরকারি ফি ১১৫০ টাকা হলেও দালাল মারফতে এই ভূমি কর্মকর্তা নিচ্ছেন ছয় হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যান্ত । জমির খাজনা রশিদে ৪৬ টাকা লিখে বাস্তবে নিচ্ছেন সাত থেকে দশ হাজার টাকা। এমন শত শত অনিয়মের অভিযোগ এই ভূমি কর্মকর্তা আনিছুরের বিরুদ্ধে।

এদিকে, ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা শেখ আনিছুর রহমানের ঘুষ গ্রহণ একেবারেই ব্যতিক্রম পন্থা অবলম্বন করে। নিজ হাতে ঘুষের টাকা নেন না, কিংবা রাখেন না কোন প্রমাণ। ঘুষ উত্তোলনে অফিসে রেখেছেন নিজের শ্যালকসহ চার দালাল। সরকারি ছুটির দিনে নিজের শ্যালককে সাজান ভূমি কর্মকর্তা।  টাকা নিয়ে জমির কাগজপত্রে জাল জালিয়াতি ঘটনায় এলাকায় ঘটছে কয়েকবার পারিবারিক সংঘর্ষ।

অন্যদিকে, ভূমি রেজিষ্ট্রী অফিসে ধরাও পড়ছে জালিয়াতির করা ভূয়া নামজারি ও খাজনা দাখিলা। ভূয়া কাগজে জমি রেজিষ্ট্রীর চেষ্টার অভিযোগে দলিল লেখক কামরুজ্জামানকে বরখাস্তও করেছেন সাব রেজিষ্ট্রার। এ ঘটনায় সাব রেজিষ্ট্রার সঠিক তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলেছে তালা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রুহুল কুদ্দুসকে। জানা যায়, মঞ্জুয়ারা বেগম নামে এক ব্যক্তির সরকারি খাতায় জমি আছে ১.৩৫ একর। এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে নায়েব আনিছুর মঞ্জুয়ারা বেগমকে ১৩.৫০ একর জমির নামজারি ও খাজনা দাখিলা দিয়েছে। এই দাখিলা ও নামপত্তন নিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করতে গেলে জমির কাগজপত্র আটকে দেয় সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ মইনুল হক। 

অপরদিকে, টাকা বিনিময়ে সরকারি ডিসিআর নেওয়া জমি থেকে ৪ জনের নাম বাদ দিয়ে একনামে কাগজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূমি সহকারি আনিছুরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পারিবারিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন উভয়পক্ষ। আহত হয়ে ঠিকানা হয়ে তালা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে উভয় পক্ষ। তাছাড়া উভয়পক্ষ অভিযোগ দিয়েছে তালা থানাতে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান।

ভুক্তভোগী তালা সদরের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত বছরে জমির খাজনা দিতে গেলে জমির নানাবিধ জটিলতা উল্লেখ্য করে অফিসের পিছন ডেকে নিয়ে নায়েব আনিচ বলেন টাকা দিতে হবে নয় হাজার তাহলে কাজ হবে। পরবর্তীতে অপরকতা প্রকাশ করলে ৭৩০০ টাকা ঘুষ নিয়ে ১৬৮১ টাকার জমির খাজনা দাখিলা কেটে দেয় নায়েব। চলতি বছর অন্য জমি খাজনা দিতে গেলে ঘটে একই ঘটনা ৫৫০০ টাকা ঘুষ নিয়ে দাখিলা দিয়েছে মাত্র ৪৬ টাকার।

ভুক্তভোগী সালমা বেগম জানান, তারা ৫ শরিক মিলে ৯ শতক জায়গা সরকার থেকে ডিসিআর নিয়ে দীর্ঘ ৪২ বছর সেখানে বসবাস করছে। এদিকে, তাদের শরিকের অপর ব্যক্তি সিরাজ হোসেন নায়েব আনিচকে ঘুষ দিয়ে ডিসিআর থেকে চারজনের নাম বাদ দিয়ে একা নামে করে নিয়েছে। এ ঘটনায় সিরিজ তাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে তাড়িয়ে দেওয়ার উপক্রম করছে। তাছাড়া এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষ্যের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে তালা থানাতে অভিযোগ দিয়েছি।

অপর ভুক্তভোগী নাছিমা বেগম জানান, তার জমি নিয়ে নানাবিধ জটিলতা দেখিয়ে সমাধান করার কথা বলে টাকা নেয় আনিছুর। তবে তার কাজ করে দেয়না এমনকি টাকা ফেরত দেয়নি। এই বিষয়টি তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকটে অভিযোগ দিলেও কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি। 

এদিকে, গনমাধ্যম কর্মীরা তালা সদর ভূমি অফিসে গেলে কোন প্রকার বক্তব্য দিতে নারাজ আনিছুর রহমান। আনিছুরের অনিয়ম দুর্ণীতির বিষয়ে বক্তব্য নিতে চাইলে একটি পর্যায়ে অফিস থেকে পালিয়ে চলে যায় তিনি।

তালা ইসলামকাটি সাব রেজিষ্ট্রার মো.মইনুল হক জানান, জালিয়াতি সন্দেহ হওয়ায় জমির কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসিল্যাণ্ডের নিকট তঞ্চকতার বিষয়টি নিশ্চিত হতে লিখিতভাবে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান , নায়েব আনিছুর রহমান ভূমি করের টাকা বেশি দাবি করায় এক মহিলা আমার কাছে এসে অভিযোগ জানায়।

ছুটির দিনে অফিসে দালালের উপস্থিতির বিষয়ে ইউএনও বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস। এর বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া অফিসে কেউ থাকার কথা নয়। দালাল অফিসের কাজ করছে এটা জেনেছি। এটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির   জানান, ভূমি সহকারি আনিচের দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে সরকারি ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ