বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন

রক্তদানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ৪০তম রক্তদাতা আব্দুল হামিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩১০
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩

“রক্ত দিলে হয়না ক্ষতি, জাগ্রত হয় মানবিক অনুভূতি” এই প্রতিপাদ্যকে মনে ধারণ করে ৩০ বছর বয়সী আব্দুল হামিদ শেখ নামের এক তরুণ বৃহস্পতিবার মুমূর্ষু এক রোগীকে রক্ত দেওয়ার মধ্যদিয়ে ৪০তম রক্তদানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আব্দুল হামিদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ঝাউডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সালাম এর ছেলে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ রোগীদের রক্ত দিয়ে সহযোগীতা করে চলেছেন আব্দুল হামিদ। পাশাপাশি তার একার পক্ষে রক্তদানে সম্ভব না হওয়ায় তিনি কয়েকজন তরুনকে নিয়ে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামের সেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রথমে তারা অবকাঠামো তৈরী করণের লক্ষ্যে একদল উজ্জীবিত তরুণদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে রক্তদানের আগ্রহ সৃষ্টি করতে থাকে সংগঠনটি। অনেকে প্রথম অবস্থায় রক্ত দিতে ভয় পেতেন। কিন্তু রক্তদাতা সংগঠণের অনুপ্রেরণায় এখন অনেকেই স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসছেন। এমনকি অনেক মহিলারাও স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে এই পর্যন্ত স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। সংগঠনের মোট রক্তদাতা তিনশত জন। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হলো রক্তশুণ্যতা সহ বিভিন্ন অপারশনে রক্তক্ষরণ হবার পরে যদি কোন রোগীর রক্ত লাগে তা ব্যবস্থা করে দেওয়া। কোন রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলেই নিজ উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়েন সংগঠনের সদস্যগণ।পাশাপাশি অসহায় মানুষদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বৃক্ষ বিতরণ সহ নানান সামাজিক কাজের মধ্যেদিয়ে আলোচনায় রয়েছে আব্দুল হামিদ শেখের হাতে গড়া এ সংগঠনটি। বর্তমানে এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সেচ্ছাসেবক হিসাবে বিশেষ অবদান রাখায় একাধিক প্রতিষ্ঠান সহ সর্বশেষ ২০২২সালে ঢাকাস্থ ‘ম্যান ফর ম্যান ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক পুরষ্কার প্রাপ্ত হয়েছেন আব্দুল হামিদ শেখ।

ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের ইতি খাতুন(১৩) নামে এক থ্যালাসেমিয়া রোগীর মা বলেন, আমার বাচ্চাকে প্রায় প্রতি মাসে রক্ত দিতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় আত্মীয় স্বজনরা রক্ত দিতেন। পরে যখন রক্ত সংকটে ভুগতাম তখন জেলা শহর হতে রক্ত কিনতে হত। আমরা গরীব মানুষ। এত টাকা দিয়ে রক্ত কেনা সম্ভব ছিলোনা। পরে ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের রক্তদাতা সংগঠনের সন্ধান পাই। এখনো পর্যন্ত তারা আমাকে বিনা পয়সায় ১৭ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এছাড়াও কাঁদোস্বরে রক্তদাতা সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল হামিদ শেখ বলেন, আমরা এই ছোট্ট অঞ্চলে মানবতার সেবায় কাজ করার উদ্যোগ নেই। এই অঞ্চলের অনেক রোগীদের রক্তের প্রয়োজন হলে নানা রকম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হতো। যাতে করে রোগীদের রক্ত ব্যবস্থা করা যায় এজন্য আমরা বিনামূল্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান করার লক্ষ্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করি। আমরা নিজেরাও রক্ত দান করি এবং অন্যান্যের রক্ত দান করতে উদ্বুদ্ধ করি। যার ফলে এই এলাকায় বর্তমানে অনেক রক্তদাতাগন নির্ভয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেন। ইতিমধ্যে আমি নিজে ৪০ ব্যাগ রক্তদান করেছি। এসবের মধ্যদিয়ে আমি অনেক আনন্দিত।

সংগঠনের নিয়মিত রক্তদাতা ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন জানান, আমি রক্তদাতা সংগঠনের নিয়মিত রক্তদাতা। আমি এই পর্যন্ত ২২ ব্যাগের উপর রক্ত স্বেচ্ছায় দান করেছি। রক্ত দিলে যেমন নিজের শরীর হাল্কা হয় অপরদিকে একজন মানুষও বেঁচে যেতে পারে। ঢাকাস্থ সাতক্ষীরা জেলা সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন জানান, দীর্ঘ আট বছর ধরে নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন। কিছু উদ্যোমী তরুণদের হাত ধরে শুভ সূচনা হয় এ সংগঠনের। বর্তমানে আমাদের এ সংগঠনের মাধ্যমে অনেক মানুষ রক্ত পেয়ে থাকে। রক্তদানের পাশাপাশি নানা ধরণের সামাজিক কর্মকাণ্ড করে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম রক্তদান, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ও বৃক্ষ বিতরণ ইত্যাদি। এসবের মূলে আব্দুল হামিদ শেখের অবদান, অক্লান্ত পরিশ্রম, দিকনির্দেশনা, অনুপ্রেরণা এবং সকলের সহযোগিতায় ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন আজ সামনে পথ চলার সাহস পেয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ