HEADLINE
আসুন সবাই মিলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা দূর করি সাতক্ষীরায় ১৫টি যানবাহন ও ৬টি মুদি দোকানে জরিমানা সরসকাটি দাখিল মাদ্রাসায় পাতানো নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন দক্ষিণ ফিংড়িতে “শিশু যৌন নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তারুণ্য” শীর্ষক পথনাটক সরসকাটি দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্থিতিশীলতার দিকে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ যুবলীগের অঙ্গীকার আসাদুজ্জামান বাবু এমপি হলে সকল মানুষ পাবে উপকার সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ভারতীয় নাগরিক নিহত, আহত ১ সাতক্ষীরায় গলায় ফাঁ’স দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহ’ত্যা কলারোয়ায় শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে ইট ভাঙা গাড়ি উল্টে চালকের মৃ’ত্যু
শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন

জগা বাবুর পাঠশালা থেকে আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শ্যামল শীল / ৩৬১
প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

জগা বাবুর পাঠশালা থেকে আজকের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠা গল্পের সাক্ষী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম স্কুলের পরিবর্তিত রূপই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৭২ সালে বালিয়াটি জমিদার কিশোরী লাল রায় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজ এবং ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত হয়।জবির গল্পটা যেন অনেক টানাপোড়েনের গল্পের মতোই। তারপরও নানা প্রতিবন্ধকতার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য বিশ্ববিদ্যালয়কে রোল মডেলে পরিণত করেছে বর্তমান সময়ে।ক্ষুদ্র পাঠশালা থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কলেজ ও কলেজ থেকে আবারও স্কুলে অবনমন, এরপর আবারও কলেজ এবং তা থেকে বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়া ইতিহাসে বিরল। মাত্র সাড়ে ৭ একরের ছোট্ট একটি ক্যাম্পাসে ২০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ক্যাম্পাসে রূপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সমসাময়িক অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই এত তাড়াতাড়ি সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ আসনে বসতে পারেনি। একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঞ্চিত গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ঝুড়ি সমৃদ্ধ শতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারী অধ্যাপকের পদভারে মুখরিত এই বিদ্যাপীঠ।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের পছন্দের তালিকায় নাম লিখিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তাই প্রতিবছরই বাড়ছে ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রতিযোগিতার শতকরা হারে গত কয়েক বছর ধরে যা হার মানাচ্ছে দেশের অন্যসব নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে।বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সময়টা অল্প হলেও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বয়স দেড়শ বছরেরও অধিক। মানিকগঞ্জের বালিয়াটির জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরী ১৮৫৮ সালে পুরান ঢাকায় কলেজিয়েট স্কুল ও পোগোজ স্কুলের পাশেই স্বল্প পরিসরে শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘জগন্নাথ পাঠশালা’ সেই থেকেই পথচলা শুরু।তবে পাঠশালা থেকে দুই বছরের মাথায় ‘জগন্নাথ স্কুল’ শুরু হয়। মাঝে কিছুদিনের জন্য রাখা হয়েছিল ব্রাহ্ম স্কুল। পুনরায় ১৮৭৮ সালে জগন্নাথ স্কুল, ১৮৮৪ সালে জগন্নাথ কলেজ, ১৯২১ সালে জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, ১৯৬৮ সালে সরকারি জগন্নাথ কলেজ এবং  সর্বশেষ ২০০৫ সালে নতুন নাম হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা  হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই-পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সাজাতে জগন্নাথ কলেজ গ্রন্থাগারের ৫০ ভাগ বই দান করা হয়।শুধু বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েই নয় সর্বিক বিবেচনায় জবিকে জ্ঞানের সূর্য বলা যায়। গত ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে এই বিদ্যাপীঠ । তবে জবিকে এখনো অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লজ্জা বহন করতে হয়।তার অন্যতম কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হল দখল করে রেখেছে স্থানীয় দখলদাররা। অবকাঠামোগত সমস্যা ও বাজেট বৈষম্যের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ও ক্যান্টিন সুবিধা। সব মিলিয়ে এক সময় বাংলার আলীগড় খ্যাত বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনেকটা হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করছে। তবে মেয়েদের জন্য একটি আবাসিক হল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামান্য আশা পূরণে সামর্থ হয়েছে জবি প্রশাসন।বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন এবং সংগ্রামের বিজয়ে শামিল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬২-তে সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ৬৬-এর ছয়দফা দাবি, ৬৮-এর এগারো দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। মোটকথা নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।ভাষা আন্দোলনে জবির ভূমিকা অনস্বীকার্য।  ভাষা আন্দোলনের সর্বপ্রথম শহীদ হন জগন্নাথের ছাত্র রফিক উদ্দিন আহমদ। তখন তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ১৯৫২ সালে জগন্নাথ ছাত্র সংসদের (জকসু) তৎকালীন জিএস শফিউদ্দিন আহমদকে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করায় তাকে কারাবরণ করতে হয়। ভাষাসৈনিক অজিত কুমার গুহ’কে কারয়াবরণ করতে হয়। জাতীয় অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দীন আহমেদসহ অন্যান্য শিক্ষকরা এখান থেকেই ছাত্রদের ভাষা আন্দোলনে উৎসাহিত করতেন। ইতিহাসের পাতায় তারা উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে থাকবে।১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফায় প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-শিক্ষকরা নানা ভূমিকা পালন করে।মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথ কলেজের অনেক ছাত্র – শিক্ষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, গনসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম) ও গণিত বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ। বিজয় লাভের পূর্বমুহূর্তে আবুল কালাম আজাদকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অংশীদার হিসেবে আজীবন রয়ে যাবে জবি।শুধু আন্দোলন আর সংগ্রামেই থেমে নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সংকটময় এই পথচলায় জবি দেখিয়ে যাচ্ছে তার সামর্থ্য। এছাড়া অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারেও ঈর্ষনীয় ফলাফল করছেন জবির শিক্ষার্থীরা। ফলস্বরূপ ইউজিসির প্রতিবেদনে এ-গ্রেড ভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।ভর্তি পরীক্ষায় গোপন বার-কোড পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে জালিয়াতি রোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকেও নতুন রাস্তা দেখিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরিক্ষায় যুক্ত হয়েছে যা শিক্ষার্থীবান্ধব।বাংলাদেশের ইতিহাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে  জড়িত যা বাংলাদেশ তথা ইতিহাসে রয়ে যাবে। এগিয়ে যাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ সাথে দেশের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, তবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সার্থক হবে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। 


এই শ্রেণীর আরো সংবাদ